০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২৩:০০ পূর্বাহ্ন


২৬ ফেডারেল প্লাজায় অভিবাসী আটক কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় ১৫ জন প্রতিনিধি গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২৫
২৬ ফেডারেল প্লাজায় অভিবাসী আটক কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় ১৫ জন প্রতিনিধি গ্রেফতার ২৬ ফেডারেল প্লাজায় প্রতিবাদে নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ও নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামসকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এজেন্টরা গ্রেফতার করেছে


নিউইয়র্ক সিটির ২৬ ফেডারেল প্লাজায় অভিবাসী আটক কেন্দ্রে অ-নথিভুক্ত অভিবাসীদের আটককে ঘিরে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সময় গত ১৮ সেপ্টেম্বর ১১ জন স্টেট আইনপ্রণেতা এবং নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এজেন্টরা গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা অভিবাসী আটক কেন্দ্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে ১০ম তলায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। এ ঘটনায় নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামস, অ্যাসেম্বলি সদস্য ফারাহ সুফরান্ট ফরেস্ট এবং সিটি কাউন্সিল সদস্য স্যান্ডি নার্স ও টিফানি কাবানকেও বাইরে থেকে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সময় নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে হয়। গ্রেফতারকৃত ১১ জন আইনপ্রণেতাকে বিল্ডিংয়ের ৩০ তলায় নিয়ে গিয়ে প্রসেসিং শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৪১ সি-এফ-আর ১০২-৭৪.৩৯০(বি) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা একটি ক্লাস সি মিসডিমিনর বা মামুলি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং এতে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে সাধারণত এমন অপরাধে শুধু জরিমানাই আরোপ করা হয় এবং অনেক সময় মামলাও বাতিল করে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ২৬ ফেডারেল প্লাজায় যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) একটি অস্থায়ী অভিবাসী আটক কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে, এ কেন্দ্রে বন্দিদের জন্য যথাযথ খাবার, স্যানিটারি সামগ্রী, বিছানাপত্র এবং আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ নিশ্চিত করতে বলা হয়। এ নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই আইনপ্রণেতারা বিল্ডিংয়ের ১০ তলায় প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। জজ ফর রেশিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস সংগঠনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিল্ডিংয়ের বাইরের অংশে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা আইস-এর গাড়ি চলাচলের গ্যারেজ শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ করছিলেন। এ কর্মসূচির সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন জিউশ ভয়েস ফর পিস, ডেমোক্রে‍টিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা নিউইয়র্ক সিটি শাখা, সানরাইজ মুভমেন্ট, মেইক দ্য রোড নিউইয়র্ক, ন্যাশনাল ডে লেবারার অর্গানাইজিং নেটওয়ার্ক এবং ইমিগ্র্যান্ট ডিফেন্স প্রজেক্টের নেতৃবৃন্দ।

এ ঘটনার পরপরই ধৃত জনপ্রতিনিধিরা বিল্ডিংয়ের বাইরে একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামস বলেন, আজ আমি নিউইয়র্কবাসীর পক্ষে, আইসের অমানবিক আটক নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ নাগরিক অবাধ্যতা প্রদর্শন করেছি। যাদের জন্য আমরা লড়াই করছি, তারা আমাদের মতো ঘরে ফিরতে পারবে না, কারণ আইস তাদের গোপনে আটক ও নির্বাসন দিচ্ছে। অন্যদিকে, স্টেট সিনেটর গুস্তাভো রিভেরা বলেন, গণতন্ত্রে বাঁচতে হলে আমাদের এজন্য লড়াই করতেই হবে। আজকের ঘটনা প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার এক ধরনের স্বৈরশাসনে পরিণত হয়েছে। তিনি ফেডারেল সরকারকে ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র বলে অভিহিত করেন।

অ্যাসেম্বলি সদস্য জেসিকা গঞ্জালেস-রোজাস বলেন, আজ আমি আমার সহকর্মী, অধিকারকর্মী এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ২৬ ফেডারেল প্লাজার হলঘরে দাঁড়িয়ে থেকেছি। আমরা আমাদের দেহ ব্যবহার করে হাজার হাজার নিউইয়র্কবাসীর স্বাধীনতা এবং জীবনরক্ষার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছি, যাদের আইস অবৈধভাবে অপহরণ ও আটক করে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, অভিবাসীদের জন্য আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে তিনটি আইন পাস করতে হবে- নিউইয়র্ক ফর অল অ্যাক্ট (আইনটি স্থানীয় পুলিশদের আইসের সঙ্গে সহযোগিতা নিষিদ্ধ করবে), অ্যাকসেস টু রিপ্রেজেন্টেশন অ্যাক্ট (আইনটি অভিবাসীদের জন্য বিনামূল্যে আইনজীবী নিশ্চিত করবে) এবং এনওয়াইসি ট্রাস্ট অ্যাক্ট (যা সিটি এজেন্সিগুলোকে আইস-এর সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করা থেকে বিরত রাখবে)।

গভর্নর ক্যাথি হোচুল যদিও এখনো নিউইয়র্ক ফর অল অ্যাক্ট বা অ্যাকসেস টু রিপ্রেজেন্টেশন অ্যাক্টের প্রকাশ্য সমর্থন দেননি, তবে আইনপ্রণেতাদের গ্রেফতারের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। আইনপ্রণেতাদের গ্রেফতার করে মর্যাদার দাবি বন্ধ করা যাবে না। অ্যাসেম্বলি সদস্য ববি ক্যারল গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি চাইলে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে বিল্ডিংয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারেন, কারণ ওই ভবনে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

এ ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে-কতটা মানবিক বা আইনগতভাবে বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে অভিবাসন আটক কেন্দ্রগুলো? এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কতটুকু ক্ষমতা রাখেন ফেডারেল নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে? শেষ পর্যন্ত, ২৬ ফেডারেল প্লাজার এই ঘটনা শুধু একদিনের বিক্ষোভ নয়-এটি অভিবাসন নীতির মানবিক দিক এবং আইনের শাসনের প্রশ্নে একটি বড় ধরনের বার্তা বহন করে।

শেয়ার করুন