প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি। বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে প্রবাসের আদর্শ সংগঠন হিসাবে পরিচিত বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির আওয়তাধীন বাংলাদেশ সেমিট্রি থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের কবর ক্রয় করেছিল। যদিও আব্দুর রব মিয়া এবং রুহুল আমিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা বাংলাদেশ সেমিট্রি থেকে এক হাজার কবর ক্রয় করবেন। এ নিয়ে তৎকালীন কার্যকরি কমিটির সভায় রেজ্যুলেশনও পাস করিয়েছিলেন। সবার সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশ সেমিট্রি থেকে ১ হাজার কবর ক্রয় করা হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে রুহুল- জাহিদ পরিষদ পরাজিত হয় এবং সেলিম-আলী পরিষদ জয়লাভ করে।
সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বাধীন কমিটিস জয়লাভ করে। তাদের অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর। আব্দুর রব মিয়া এবং রুহুল আমির সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী কবর ক্রয় বাবদ বাংলাদেশ সেমিট্রির নামে ২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের চেক দেয়। যদিও এই চেকের আগেই বাংলাদেশ সেমিট্রির জমি ক্রয় করা হয়। সেই সংক্রান্ত কাগজও বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আতোয়ারুল আলমকে দেওয়া হয়। অভিষেক অনুষ্ঠানের ঠিক আগে কেন কবর ক্রয়ের চেক দেওয়া হলো তা নিয়ে সেলিম-আলীর নেতৃত্বাধীন কমিটির মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা যায়। এ নিয়ে টানা কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গঠন করা হয় কমিটি। বাজারে বলে বেড়ানো হয়, অ্যাকাউন্ট শূন্য করে কবর ক্রয় করা হয়। যদিও এই তথ্যটি সত্য নয়। কবরের অর্থ দেওয়ার পরও প্রায় ১ লাখ ডলারের মতো অর্থ সোসাইটির অ্যাকাউন্টে ছিল।
গঠিত কমিটির পক্ষ থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। প্রথম বৈঠকের পর জানানো হয়, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কার্যকরি কমিটির সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত নোয়াখালী সোসাইটির কার্যকরি কমিটি, ট্রাস্টি বোর্ড এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অর্থ ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কী প্রক্রিয়ায় অর্থ দেওয়া হবে তা-ও জানানো হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আতোয়ারুল আলম ব্রুকলিনস্থ নোয়াখালী সোসাইটির কার্যালয়ে যান। সেখানেই বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম এবং ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য আতোয়ারুল আলমের হাতে ২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের চেক তুলে দেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন পিন্টু, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খোকন মোশাররফ, সহ-সভাপতি তাজু মিয়াসহ অন্য কর্মকর্তারা।
বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তাদের কাছে থেকে আতাউর রহমান সেলিম মোট ১৮টি চেক আনেন। যার মধ্যে প্রথম চেক ৫০ হাজার ডলারের, যা জমা দেবেন অক্টোবর মাসে। এরপর আগামী জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার ডলারের চেক জমা দেবেন। যদিও ২০২৭ সালের দুটো চেক ২০ হাজার ডলার করে জমা দেবেন।
এ প্রথমবারের মতো বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তারা মানবিক বিবেচনায় এ অর্থ ফেরত দিয়েছেন। অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, এ কবরগুলো যদি বিদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হতো, তাহলে কী এ ফেরত আনা যেত? এমন কোনো ইতিহাস অতীতে দেখা যায়নি। অনেকেই বলেছেন, করবো তো আগামীতে লাগবেই, তাহলে কী কারণে এই অর্থ ফেরত আনা হলো? এ কবরগুলো তো এই দামে আর পাওয়া যাবে না আর এই অর্থ দিয়েই বা কী হবে? এখানে কার স্বার্থরক্ষা করা হলো? আর কার স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া হলো? এটাই কী বর্তমান কমিটির জনকল্যাণের নমুনা! নাকি জিদ। রব-রুহুল কমিটি কোনো ভালো কাজের চিহ্নি রাখা হবে না। জিদের ভালো... খাওয়াবো।
অতীতে বহু দেখা গেছে, গত কমিটি ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ভালো কিছু করার চেষ্টা করে। সাবেক সভাপতি এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ লংআইল্যান্ডে কবর ক্রয় করেছিলেন, মরহুম কামাল আহমেদ নিউজার্সিতে কবর ক্রয় করেছিলেন। তা নিয়ে অনেকেই মাঠ গরম করেছেন, সমালোচনা করেছেন, কিন্তু মহামারি করোনার সময় দেখা গেল সে কবরগুলোই ভরসা আর বর্তমানে দামও বেড়েছে অনেক বেশি। এখন অনেকেরই সাধ্য নেই লংআইল্যান্ডে কবর ক্রয় করার। যে কারণে কেউ কেউ বলেছেন, এম আজিজ, মরহুম কামাল আহমেদ ভালো কাজই করেছেন। রব-রুহুলও ভালো কাজ করেছিলেন, কিন্তু সেটা বর্তমান কমিটির চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে। যে কারণে অর্থ উদ্ধারে ছিল অবিরাম আন্দোলন- সংগ্রাম। অনেকেই অভিযোগের সুরে বলেছেন, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ সোসাইটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সড কমছে। কারণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। আয় এক অর্থে নেই বললেই চলে। এ কারণেই লড়াই করে, অন্যের বদনাম রটিয়ে অর্থ ফেরত আনা হলো? ভাগ্য ভালো যে বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ বর্তমান কমিটির প্রতি সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, আশীর্বাদের হাত মাথায় রাখেন। তা না হলে এ কমিটির কী অবস্থা হতো? সেটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।