১৫ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:৪৪:৫৪ পূর্বাহ্ন


জে-১ প্রোগ্রামে কঠোর নিয়ম ও নজরদারি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
জে-১ প্রোগ্রামে কঠোর নিয়ম ও নজরদারি জে-১ প্রোগ্রাম ভিসা


যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ইস্যু এখনো উত্তপ্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অভিবাসী এবং অ-অভিবাসী উভয় ধরনের ভিসা প্রোগ্রাম নিয়ে সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ, এইচ-১বি ভিসার যোগ্যতা মানদণ্ড কঠোর করা এবং নজরদারির কৌশল শক্তিশালী করাসহ প্রশাসন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকার বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে। এসব পরিবর্তনের মূল বার্তা একটাই: কমপ্লায়েন্স, অর্থাৎ নিয়ম মেনে চলা। এ প্রেক্ষাপটে জে-১ এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামও ট্রাম্প প্রশাসনের আওতায় কঠোর তদারকের মুখে পড়েছে। প্রতি বছর ৩ লক্ষাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে। যদিও এটি একটি সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি হিসেবে পরিচিত, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে কঠোর একটি নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স এবং অনুমোদিত স্পনসর সংগঠনগুলো যৌথভাবে এ প্রোগ্রামের তদারকি করে থাকে।

বিশেষ করে ইন্টার্ন, ট্রেইনি, রিসার্চ স্কলার এবং স্পেশালিস্ট ক্যাটাগরির পেশাগত বিনিময় কর্মসূচিগুলোর ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম ও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। প্রতিটি স্পনসর থেকে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদন পেতে হয়, যার জন্য তাদের আর্থিক সামর্থ্য, প্রশাসনিক কাঠামো এবং অভিজ্ঞতা যাচাই করা হয়। এ অনুমোদন প্রক্রিয়া ৬ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে। একজন ভিজিটরের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের আগে থেকেই শুরু হয় কঠোর যাচাই প্রক্রিয়া। এতে অংশগ্রহণকারী, হোস্ট প্রতিষ্ঠান এবং তৃতীয় পক্ষের রিক্রুটারদের আইনি বৈধতা, আর্থিক সক্ষমতা ও প্রোগ্রাম সম্পর্কিত জ্ঞানের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। এছাড়াও প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞান এবং মার্কিন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হয়।

প্রোগ্রাম শুরুর পরও স্পনসরদের দায়িত্ব সীমিত নয়, বরং আরো বেড়ে যায়। অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তাদের ঠিকানা, স্বাস্থ্যবীমা, প্রোগ্রাম কার্যক্রম এবং যে কোনো ধরনের পরিবর্তন স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেমে রিপোর্ট করতে হয় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে। নিয়মিত চেকইন, মধ্যবর্তী ও চূড়ান্ত মূল্যায়ন, এবং জরুরি সেবালাইন সবই এ পর্যায়ে স্পনসরের দায়িত্বের অংশ।

হোস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও কঠোর নজরদারি থাকে। বিশেষত, ইন্টার্নশিপ বা গবেষণা কার্যক্রমকে মূল প্রোগ্রামের বাইরে গিয়ে সস্তা শ্রমে পরিণত করা যাবে না। এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো রকম শ্রম আইনের লঙ্ঘন, কর্মপরিবেশে সমস্যা বা হোস্ট ও অংশগ্রহণকারীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে স্পনসরকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে প্রোগ্রাম সংক্ষিপ্ত বা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করাও বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।

যদি কোনো অংশগ্রহণকারী মার্কিন আইন লঙ্ঘন করেন যেমন: অবৈধভাবে কাজ করা বা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তবে স্পনসর তাকে প্রোগ্রাম থেকে বহিষ্কার করতে পারে এবং সেই ভিজিটরকে সাতদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হয়। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষুণ্ন করতে পারে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিয়মিতভাবে স্পনসরদের উপর পরিদর্শন চালায়, বার্ষিক প্রতিবেদন সংগ্রহ করে এবং নির্ধারিত হোস্ট প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন তদন্ত করে। কিছু ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সিপিএ অডিট বাধ্যতামূলক, যা স্পনসরদের প্রস্তুতি ও রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণের মান যাচাই করে।

সবমিলিয়ে, জে-১ প্রোগ্রামের সাফল্যের পেছনে রয়েছে একটি জটিল কিন্তু প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স কাঠামো, যা স্পনসর, অংশগ্রহণকারী এবং হোস্টদের সম্মিলিত দায়িত্বে পরিচালিত হয়। এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের সুরক্ষা এবং মার্কিন শ্রমবাজারের ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক, পেশাগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো গভীর হয়। এ প্রোগ্রাম যথাযথভাবে পরিচালিত হলে, এটি সারা বিশ্বের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদার করে, ভবিষ্যতের পেশাজীবীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন কঠোর কমপ্লায়েন্স এবং নৈতিক দায়িত্ববোধ।

শেয়ার করুন