১৫ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন


হোচুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
নিউইয়র্কে ১১ বিলিয়ন ডলারের হোম কেয়ার চুক্তি নিয়ে কেলেঙ্কারি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
নিউইয়র্কে ১১ বিলিয়ন ডলারের হোম কেয়ার চুক্তি নিয়ে কেলেঙ্কারি বেসরকারি সংস্থা পাবলিক পার্টনারশিপস এলএলসি (পিপিএল)


নিউ ইয়র্ক স্টেটে ১১ বিলিয়ন ডলারের একটি মেডিকেইড হোম কেয়ার প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে স্টেটের অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প কনজিউমার ডাইরেকটেড পারসোনাল অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম (সিডিপ্যাপ)। এই প্রোগ্রামের চুক্তি প্রক্রিয়ায় বিড রিগিং-এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি সংস্থা পাবলিক পার্টনারশিপস এলএলসি (পিপিএল)-কে রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক স্টেটের দুই প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর জিম স্কুফিস (অরেঞ্জ) ও গুস্তাভো রিভেরা (ব্রঙ্কস) গভর্নর ক্যাথি হোচুল-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তাঁরা এই চুক্তির তদন্ত চালিয়ে যাওয়ায় গভর্নর তাঁদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিচ্ছেন। স্কুফিস সরাসরি অভিযোগ করেন, গভর্নর তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখতে চাপ দেন, এবং তিনি তা অস্বীকার করার পরপরই তাঁর বেশ কয়েকটি বিল ভেটো করেন।

বিশেষ করে যে বিলগুলোর মধ্যে একটি ছিল, তা ফার্মেসিগুলোকে গর্ভপাত-সম্পর্কিত ওষুধ ও সেবার জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছিল। এটি ভেটো করার পেছনে গভর্নরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, এই ঘটনা রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গত আগস্টে সিনেটের এক শুনানিতে উঠে আসে, পিপিএল ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ (ডিওএইচ) কর্মকর্তারা চুক্তি প্রক্রিয়ার আগেই একাধিকবার একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। পিপিএল-এর এক কর্মকর্তা শপথভঙ্গ করে মিথ্যা তথ্য দেন, পরে নিজেই স্বীকার করেন যে সরকারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল চুক্তি আহ্বানের আগেই। এই প্রেক্ষাপটে সিনেটর স্কুফিস ও রিভেরা গভর্নরের প্রশাসনের কাছে ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ ও পিপিএল-এর মধ্যকার সব ধরনের চিঠিপত্র, ইমেইল, আর্থিক লেনদেন, এবং কর্মী ও অংশগ্রহণকারীদের তথ্য চেয়ে নথি জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

যদিও গভর্নরের দফতর এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগের উত্তর দেয়নি, হেলথ কমিশনার জেমস ম্যাকডোনাল্ড দাবি করেছেন, সিডিপ্যাপ-এর চুক্তি সম্পূর্ণভাবে আইনি প্রক্রিয়া মেনেই হয়েছে এবং এতে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না। তবে হোচুলের সমালোচকরা বলছেন, গভর্নরের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত-যেমন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিল ভেটো করা এবং তদন্তে অনীহা-প্রমাণ করে যে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।

এই কেলেঙ্কারির জেরে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেই বিভাজন দেখা দিয়েছে। প্রগতিশীল নেতারা হোচুলের ‘করপোরেট-সন্ধানী নীতি’ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলছেন। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা এই ইস্যুকে সামনে রেখে আসন্ন নির্বাচনে এটি বড় রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সিডিপ্যাপ পরিচালনায় পিপিএল-এর ভূমিকা এখন কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কোম্পানির কর্মকর্তাদের বক্তব্যের অসংগততা এবং ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ-এর সঙ্গে অগ্রিম বৈঠকের তথ্য চুক্তি প্রক্রিয়াকে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে সন্দেহ উস্কে দিয়েছে। এ ধরনের প্রমাণ উঠে এলে, এটি স্টেটের চুক্তি-নীতি ও নৈতিকতার বড় ধরনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে এর দায় পড়তে পারে গভর্নরের অফিসের ওপর। তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছায় নথি জমা দেওয়ার অনুরোধ জানালেও, প্রশাসন বা পিপিএল সহযোগিতা না করলে সাবপোয়েনার মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে তথ্য সংগ্রহের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

এদিকে, হোম কেয়ার সেবার ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার নিউ ইয়র্কার এই ঘটনার পর উদ্বেগে পড়েছেন। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, প্রশাসনিক অস্থিরতা ও চুক্তি বাতিলের সম্ভাবনা তাঁদের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। করদাতারাও জানতে চাইছেন, ১১ বিলিয়ন ডলারের এই প্রোগ্রামে তাঁদের অর্থ যদি অনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাহলে তার দায়ভার কে নেবে?

অনেকের মতে, এই ঘটনা গভর্নর হচুলের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। এটি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতার প্রশ্নকে সামনে এনেছে। যদি তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তাহলে এই কেলেঙ্কারি নিউ ইয়র্ক রাজনীতির ইতিহাসে “অ্যালবেনিগেট” নামে এক গভীর কলঙ্ক হয়ে উঠতে পারে।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরে অনেকেই এখন হোচুলের নেতৃত্বের পরিবর্তন চাচ্ছেন। তাঁদের মতে, করপোরেট প্রভাবমুক্ত, জনস্বার্থকেন্দ্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হলে নতুন দিশা প্রয়োজন। ১১ বিলিয়ন ডলারের এই হোম কেয়ার প্রকল্প, যা এতদিন নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্যসেবার একটি মূল স্তম্ভ ছিল, এখন রাজনৈতিক বিতর্ক, প্রশাসনিক প্রশ্নবিদ্ধতা এবং জনআস্থার সংকটে জর্জরিত। গভর্নর হোচুল যদি নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তে সহযোগিতা না করেন, তাহলে এটি কেবল একটি চুক্তি কেলেঙ্কারিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং নিউ ইয়র্ক রাজনীতির এক গভীর নৈতিক সংকটের প্রতীক হয়ে উঠবে।

শেয়ার করুন