৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:০৭:১৫ পূর্বাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্রে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ১০০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছয় শতাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। এই বাতিলকৃত ভিসাগুলোর কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী জানতে পারেন, তাদের ভিসা বাতিল হওয়ার খবর এক অপ্রত্যাশিত টেক্সট মেসেজ বা ই-মেইলের মাধ্যমে, যেটি ছিল সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পূর্বানুমতি বা ব্যাখ্যা ছাড়াই পাঠানো। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হঠাৎ করে জানতেন না, কেন তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনও অস্পষ্ট ছিল, কারণ তারা কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পায়নি। আইনজীবীরা জানান, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগও তাদের দেওয়া হয়নি। মার্কিন সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একরকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। 

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফিসের দরজায় প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে প্রতিবাদ জানায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি রাখে যেন প্রতিষ্ঠানটি একটি ‘সাংকচুয়ারি ক্যাম্পাস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা তাদের অভিবাসন স্থিতি নির্বিশেষে ফেডারেল সরকারের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা প্রদান করবে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কোনো প্রেসিডেন্টকে এমন এক আদর্শিক পরীক্ষা নির্ধারণের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়, যার মাধ্যমে তিনি মতপার্থক্যের কারণে মানুষকে দেশ থেকে বের করে দেবেন। তারা আরো জানায়, এটি শুধু রাজনৈতিক মতবাদের কারণে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার একটি কৌশল হতে পারে, যা মার্কিন সরকারের আদর্শিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের প্রতি আক্রমণ।

ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে, এসব ভিসা বাতিল করা হয়েছে, এমন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যারা এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যা ‘জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে’ ছিল। বিশেষত, প্যালেস্টাইনের সমর্থনে সংগঠিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কারণে ভিসা বাতিল করা হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মার্কো রুবিও গত মাসে বলেছিলেন, তিন শতাধিক ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং এসব শিক্ষার্থীর কর্মকাণ্ড জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়াও ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ঘোষণা দিয়েছে, যেসব অভিবাসী নিজে দেশ থেকে বের হতে চাইবে না, তাদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হবে এবং তাদের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না। এই ধরনের শাস্তির কারণে অনেক শিক্ষার্থী শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এবং অনেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং তাদের বক্তব্যে বলা হয়েছে, সরকারের এ পরিকল্পনা শুধু অভিবাসীদের বিরুদ্ধে শত্রুতা সৃষ্টি করবে না, বরং দেশের অভ্যন্তরে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। কেয়ার জানিয়েছে, এ পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের অধিকার ও তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, এ ধরনের অস্থিরতা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে এবং এটি একেবারে সরকারি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের একটি পন্থা হতে পারে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ এবং ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা অভিবাসীদের সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্ট মনিটর করতে শুরু করেছে। তারা দাবি করছে, যারা ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ কার্যকলাপে জড়িত, তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে না।

এই বিতর্কিত পদক্ষেপগুলো দেশব্যাপী ও আন্তর্জাতিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একযোগে দাবি করছে, এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক স্বাধীনতার প্রতি গুরুতর হুমকি। নির্দিষ্ট কিছু মানবাধিকার সংগঠন এবং আইনবিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, এই নীতি এমন ভাষণ ও মতামতকে শাস্তি দিচ্ছে, যা সরকারের পক্ষ থেকে সমালোচিত হচ্ছে, বিশেষত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈধ সমালোচনার ক্ষেত্রে।

শেয়ার করুন