০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৯:০৭:১৭ অপরাহ্ন


নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
জুলাই সনদ নিয়ে প্রতারণা মেনে নেওয়া হবে না
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৫
জুলাই সনদ নিয়ে প্রতারণা মেনে নেওয়া হবে না সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন গিয়াস আহমেদ


জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে প্রতারণা চলবে না। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যে সনদে স্বাক্ষর করেছে সেই জাতীয় সনদরই বাস্তবায়ন চাই। আমরা চাপিয়ে দেওয়া কোনো সনদ চাই না। জাতীয় সনদ নিয়ে প্রতারণার কারণে আলী রীয়াজের পদত্যাগ করা উচিত। আমরা তার পদত্যাগ চাই। গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির নেতারা এই দাবি জানান। 

নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সংবাদ সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্যাহ আতিকুর রহমান এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক দলের সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর এম আলম, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিপি জসীম, সিনিয়ার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল হক আজাদ, দেওয়ান কাউছার, শেখ হাসান তারেক, বাদন, জসীম উদ্দিন, মেহরাব রাজা চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধ খন্দকার ফরহাদ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকার সমীপে দাবি জানানো হয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে। শিগগির তারেক রহমান বাংলাদেশে যাবেন বলেও সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়। গিয়াস আরো অভিযোগ করেছেন যে, ‘এই অন্তর্র্বর্তী সরকার তারেক রহমান যাতে দেশে ফিরতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করছে। আপনারা জানেন, অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে হত্যার জন্য একাধিকবার চক্রান্ত করেছে। বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত তার দেশে ফেরার নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা বা নিশ্চয়তা দেয়নি। বরং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারি এজেন্সি তাকে নিরুৎসাহিত করছে।’ লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘১/১১-এর অবৈধ সরকার অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছিল। দুর্নীতির কোন প্রমাণ না পেয়ে জোর করে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং রাজনীতি না করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছিল। বর্তমান আদালত ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে, হাসিনা সরকারের দেওয়া মামলাগুলো মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের বিরাজিত প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার লাগামহীন দুর্নীতির তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, ‘যে লক্ষ্য ও প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, আজ সেই গণতান্ত্রিক স্বপ্নকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য জামায়াতের সহযোগিতায় অন্তর্বর্তী সরকার চক্রান্ত করছে। প্রায় এক বছর আট মাস ধরে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এই সরকার জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এবং বিনা ভোটে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংবিধান পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গণভোটের মাধ্যমে পরিবর্তনের চক্রান্ত করছে, যেখানে বিসমিল্লাহ রাহমানির রহিম বাদ দেয়া হয়েছে।’ গিয়াস আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যেই এই সরকারের দুর্নীতি, তদবির বাণিজ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগের অভাব, গার্মেন্ট শিল্পের সংকট দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের পতিত দোসররা এখনো প্রশাসনে বসে দিল্লির ইশারায় কাজ করছে। সরকারের উপদেষ্টাদের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা আজ দৃশ্যমান বাস্তবতা।’

ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. আলী রীয়াজের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, ‘অতীতে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ সমর্থন করেছেন। তিনি আজ ঐকমত্যের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ঘোলাটে করছেন। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।’

বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নানা কূটকৌশলে জড়িত থাকার অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘ঐকমত্য কমিশন জামায়াতের নির্দেশে সংবিধান পরিবর্তনের তাড়াহুড়ো করছে, যা আসলে নির্বাচনকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র। যা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের শামিল। তারা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চায় না। কারণ জামায়াতের অতীত ইতিহাসই তা প্রমাণ করে। এই জামায়াত বরারবই দেশের জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করেছে-১৯৪৭ সালে মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালিয়েছিল, ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বৈরাচার এরশাদের সংসদে গিয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থে জোটবদল করে জাতিকে বিপথে নিয়েছিল। আজও তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণে সক্রিয় ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।’

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে মাওলানা অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দীর্ঘ আন্দোলনে নিউইয়র্ক, তথা যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা সরব ছিলাম। হোয়াইট হাউস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ক্যাপিটল হিল, জাতিসংঘের সামনে বছরের পর বছর নানা কর্মসূচি পালন করেছি। গত বছরের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরও বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি। তাই আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে তারেক রহমান বীরের বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত। বিএনপির এই নেতা বাংলাদেশে ফিরলেই গণতন্ত্রবিরোধী সব ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটবে এবং বহুল আকাক্সিক্ষত নির্বাচনের পথও সুগম হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে গিয়াস আহমেদ বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অবশ্যই হবে। বিএনপির চাঁদাবাজি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটা বটবাহিনী অপপ্রচার চালাচ্ছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে যাচ্ছেন।

শেয়ার করুন