পোর্টল্যান্ডে ইমিগ্রেশনবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট পোর্টল্যান্ডে আইস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট অফিসের বাইরে চলমান বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশের ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত ৭ নভেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক কারিন জে. ইমারগাট, যিনি স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত ফেডারেল বিচারক। বিচারক ইমারগাট তার ১০৬ পৃষ্ঠার বিশদ রায়ে জানান, ট্রাম্প প্রশাসন সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের চেষ্টা করেছে এবং এর কোনো বৈধতা নেই। রায়ে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের কার্যক্রমকে বিদ্রোহ বা বিদ্রোহের হুমকি বলে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রশাসনের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না। তিনি উল্লেখ করেন, ওরেগনের গভর্নর এই মোতায়েনের বিরোধিতা করেছিলেন এবং স্থানীয় ফেডারেল কর্মকর্তারাও গার্ড পাঠানোর অনুরোধ জানাননি। ফলে, প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দশম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ওরেগনের গভর্নর এই মোতায়েনের বিরোধিতা করেছিলেন এবং স্থানীয় ফেডারেল কর্মকর্তারাও গার্ড পাঠানোর অনুরোধ করেননি। ফলে, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দশম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে, যা স্টেটগুলোকে ফেডারেল সরকারের বাইরে থাকা ক্ষমতাগুলোর অধিকার দেয়। বিচারক বলেন, প্রমাণগুলো স্পষ্ট করে দেখায় যে এ মোতায়েনগুলো প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। তিনি ট্রাম্পের দাবি যে ‘অ্যান্টিফা’ সংগঠিতভাবে সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, পোর্টল্যান্ডের বিক্ষোভগুলো মূলত শান্তিপূর্ণ ছিল এবং আইস কর্মকর্তাদের কাজকর্মে সামান্য প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করেছিল।
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রশাসন বিচারকের পূর্ববর্তী অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৪ অক্টোবর ওরেগন ন্যাশনাল গার্ডের একটি ছোট দলকে আইস ভবনে মোতায়েন করেছিল। ইমারগাট বলেন, আদালত এখনই অবমাননার অভিযোগ আনছে না, তবে সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করছে। এ মামলাটি ওরেগন ও ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট গভর্নমেন্ট এবং পোর্টল্যান্ড শহর কর্তৃপক্ষের যৌথভাবে দায়ের করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, বিক্ষোভগুলো ফেডারেল অফিসারদের কাজ বিঘ্নিত করছে এবং বিদ্রোহের হুমকি তৈরি করছে। তবে আদালত প্রমাণের অভাবে সেই যুক্তি নাকচ করে দেয়। রায়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কোড অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট কেবল তিনটি পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহার করতে পারেন- বিদেশি আগ্রাসন, বিদ্রোহ বা আইন প্রয়োগে অক্ষমতা। আদালত বলেছে, পোর্টল্যান্ডে এসব শর্তের কোনোটিই পূরণ হয়নি।
ওরেগনের গভর্নর টিনা কোটেক (ডেমোক্র্যাট) রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই রায় মাঠের বাস্তবতা প্রতিফলিত করেছে। ওরেগন কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ চায় না বা প্রয়োজন নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গার্ড ফেডারালাইজ করার প্রচেষ্টা ক্ষমতার অপব্যবহার। অন্যদিকে, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি রায়টির সমালোচনা করে জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট তার সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যেই কাজ করেছেন। বিভাগের সহকারী সচিব ট্রিশা ম্যাকলাফলিন বলেন, মাসের পর মাস সহিংস বামপন্থী বিক্ষোভে আমাদের কর্মকর্তারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ পোর্টল্যান্ডকে নিরাপদ করবে।
বিক্ষোভগুলো শুরু হয়েছিল চলতি বছরের জুনে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসনবিরোধী অভিযান জোরদার করে। প্রতিবাদকারীরা সাধারণত শান্তিপূর্ণ ছিলেন, তবে মাঝে মাঝে আইস ভবনের প্রবেশপথ অবরোধ করেন। কিছু সংঘর্ষে ফেডারেল পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। বিচারকের রায়ের পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা নবম সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। আপিলের প্রস্তুতি চলমান থাকায় বিচারক ইমারগাট তার রায়ের একটি অংশ ১৪ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন, যাতে বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকে। একই ধরনের আরেকটি মামলা বর্তমানে ইলিনয় স্টেটে সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনায় রয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজ্য-নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল গার্ডকে মোতায়েনের প্রচেষ্টা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল।