২৮ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৫৩:০৫ পূর্বাহ্ন


আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সেমিনারে বক্তারা
পকেট টিভি অনলাইন ফেসবুক জুড়ে দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা দেখছি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২৫
পকেট টিভি অনলাইন ফেসবুক জুড়ে দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা দেখছি প্রেস ক্লাব সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা


‘যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি : গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছিল আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসে একটি রেস্টুরেন্টে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি শওকত ওসমান রচি এবং সভা পরিচালনা করেন সাংবাদিক ও লেখক দর্পণ কবীর। কী নোট স্পিকার হিসেবে প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন টিবিএন ২৪ টেলিভিশনের পরিচালক ও টকশো উপস্থাপক হাবিব রহমান। আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোচনা করেন প্রবীণ সাংবাদিক মনজুর আহমদ, সাংবাদিক ও নাট্যকার সাঈদ তারেক, লেখক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, সাপ্তাহিক প্রবাস এর সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, প্রবাস নিউজ-এর সম্পাদক শামীম আহমেদ, সাউথ এশিয়ান টাইমস-এর সম্পাদক দীপক আচার্য, প্রথম আলোর নিউইয়র্ক প্রতিনিধি তোফাজ্জল লিটন, সাংবাদিক মাহামুদুল হাসান পাহলবী ও অ্যাকটিভিস্ট মিজানুর রহমান।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী সমাজ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এখন গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসরুদ্ধ সময়ে অভিবাসীরা চাপা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। গণমাধ্যমের কাজ হচ্ছে সঠিক তথ্য দ্রুত প্রকাশ করা। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা দেখতে চায় অভিবাসীরা। বক্তারা আরো বলেন, ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, ভারসাম্য সমাজ গঠনে গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে গণমাধ্যম। অস্থির ও উদ্বিগ্ন এই সময়কালে মিডিয়া কর্মীদের সংবাদ প্রকাশে সতর্ক ও সচেতন থাকা জরুরি। তারা আরো বলেন, বাংলা ভাষার প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সংকটে আবর্তিত। এ সংকটকাল মোকাবিলা করতে সাংবাদিক এবং মিডিয়া মালিকদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা খুব জরুরি বলে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন। তারা বলেন, অতীতে দেখা গিয়েছে, গণমাধ্যম এই যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন আন্দোলন সফল করতে ভূমিকা রেখেছে। বক্তারা মিডিয়া সঠিক তথ্য দ্রুত প্রকাশ করার আহবান জানান এবং ভুল তথ্য বা চটকদার সংবাদ পরিবেশন করে প্যানিক সৃষ্টি না করার আহ্বানও জানান। 

সেমিনারে প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক মনজুর আহমদ বলেন, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো সংকটে পড়েছে। এখানে কী পেশাদার সাংবাদিকরা কাজ করছেন? এর ওপর রয়েছে লিখিয়ে সাংবাদিক আর অলিখিয়ে সাংবাদিক। লিখতে পারেন না, এমন সাংবাদিকরা মুখ চালিয়ে সাংবাদিকতা করছে। তিনি বলেন, আগে পত্রিকাগুলোতে ইতিবাচক সাংবাদিকতা ছিল, এখন তা নেই। আগে সাংবাদিকরা পত্রিকা বের করতো, এখন ব্যবসায়ীরা পত্রিকা বের করেন বা কিনে নেন। তাদের ছবি ছাপা হয় বেশি। সাংবাদিকতা কোথায়? তিনি আরো বলেন, টিভি চ্যানেল মানুষের পকেটে ঢুকে গেছে। পকেট টিভি, অনলাইন, ফেসবুক জুড়ে দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা দেখছি। আমি বলবো, খোদ সংবাদ মাধ্যমই এখন সংকটে!

প্রবীণ সাংবাদিক সাঈদ তারেক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে এবং এখনো করছে। অভিবাসীদের তথ্য দিয়ে, সতর্কতামূলক সংবাদ প্রকাশ করে বা টিভিতে টকশো আলোচনার মাধ্যমে মিডিয়া তো ভালো ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের কাছে জনপ্রিয় হলেও এটি এখনো গণমাধ্যম হয়নি। তথ্য প্রকাশে দায়বদ্ধতা তৈরি হলে এটি একটা সময় গণমাধ্যমে পরিণত হতে পারে।

কলামিস্ট ও লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, মানুষের হাতের মুঠোয় এখন খবর। সোশ্যাল মিডিয়া সংবাদ পাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন। খবর মানুষের কাছে পৌঁছানোই বড় কথা। সংবাদ পরিবেশন করাটাই সাংবাদিকতা। তিনি বলেন, এখন যে বৈরী সময় দেখছি, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যে কোনো ভুল সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে হবে। তথ্যের অপব্যবহার সে অনেক আগ থেকেই দেখে আসছি আমরা। আমাদের যে কোনো বিকৃত সংবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তাহলে অভিবাসীরা মিডিয়ার প্রতি আস্থা হারাবে না। 

সিনিয়র সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটিতে দু’ধরনের সাংবাদিক দেখি। পেশাদার ও অপেশাদার। এই কমিউনিটিতে ফুলটাইম কাজ করার সুযোগ নেই। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশ করতে দু-তিনদিন কাজ করলেই হয়। এখানে আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে সাংবাদিকতার কাজ করতে হয়। আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত, একে-অন্যের প্রতি যেন শ্রদ্ধাবোধ ধরে রাখতে পারি। তিনি বলেন, ফেসবুকে কিছু মানুষে খোঁচাখুঁচি করে সাংবাদিকতার ক্ষতি করছে। 

টিবিএন ২৪ টিভির পরিচালক হাবিব রহমান বলেন, আমরা যেন চটকদার সংবাদ প্রকাশ করা থেকে মিডিয়াগুলোকে সংযত থাকতে হবে। ভীতি তৈরি করা সংবাদ মানুষের মনে আস্থাহীনতা সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সময়ে বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ প্রকাশ বড্ড জরুরি। তিনি বলেন, এ দেশের ইমিগ্রেশন কালচার ভয়ংকর। তাই অভিবাসীদের সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সমাজ সংস্করণে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

শেয়ার করুন