১১ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ত্রোয়েদশ জাতীয় নির্বাচন ও গনভোট ফ্যাক্টচেকিং ও কনটেন্ট মডারেশন কর্মীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ৮ ডিসেম্বর থেকে এফ ও এম সাবওয়ে লাইন সপ্তাহের দিনে রুট পরিবর্তন উইন রোজারিওর খুনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে লেটিকেয়ার অস্বীকৃতিতে জাপানের প্রথম রাজধানী নারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পদত্যাগ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট নিষিদ্ধ করে অ্যাডামসের বিতর্কিত আদেশ হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারির ভাতিজার মাকে মুক্তির নির্দেশ বিশ্বকাপ ফাইনালে টিকেটের দাম ৬ হাজার ডলার


জ্বালানি সেক্টরে সম্ভাবনার অপমৃত্যু
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২৫
জ্বালানি সেক্টরে সম্ভাবনার অপমৃত্যু বিদ্যুৎলাইন


বাংলাদেশের জ্বালানি সেক্টরে তিন দশকের সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং দীর্ঘসময়ের বিশ্লেষণের অভিজ্ঞতা থেকে আশঙ্কা করছি সব সরকারের অদূরদর্শিতা, ভ্রান্ত পরিকল্পনা এবং আমলানির্ভর দুর্নীতিপরায়ণ বাস্তবায়ন কৌশলের বলি হয়ে মাটির নিচের উন্নতমানের কয়লা সম্পদ উন্নয়ন সম্ভাবনার অপমৃত্যু হতে চলেছে। 

দেশে এখন চলেছে জ্বালানি দুর্ভিক্ষ। নিঃশেষ হতে চলেছে প্রমাডুত গ্যাসসম্পদ। বিশ্বের বৃহত্তম নদীমাটির বদ্বীপ বাংলাদেশের স্থলে এবং সাগর তলদেশে বিপুল পরিমাণ অনাবিষ্কৃত গ্যাস থাকার সম্ভাবনা থাকলেও সেই ক্ষেত্রেও কার্যক্রম হতাশাজনকভাবেই সীমিত। জানি কয়লা উত্তোলন এবং ব্যবহারে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। দুনিয়ার বহু দেশ কিন্তু একই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কয়লা উত্তোলন এবং ব্যবহার করে জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে পাঁচটি আবিষ্কৃত কয়লা ক্ষেত্রের চারটিতেই উন্নয়ন হয়নি। একটিমাত্র কূপ দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় আন্ডারগ্রাউন্ড পদ্ধতিতে সীমিত আকারে কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। অপর ক্ষেত্র ফুলবাড়ীতে একটি বিদেশি কোম্পানি ব্যাপক অনুসন্ধানের পর ২০০৫ সালে খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা জমা দিলেও বিএনপি, আওয়ামী লীগ, অনবর্তী সরকার ২০ বছরেও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিশ্ব যখন ফসিল ফুয়েল উন্নয়ন এবং ব্যবহার থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসছে তখন বাংলাদেশ আদৌ কয়লাসম্পদ উত্তোলন করতে পারবে বলে সন্দেহ আছে, আর এখন কয়লাসম্পদ আহরণ এবং উন্নয়নে বিদেশি ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা সীমিত। কয়লা ক্ষেত্র উন্নয়ন বায় প্রতিদিন বাড়ছে। ২০০৬-২০০৭ থেকে এই ব্যয়সংগত কারণে দ্বিগুণ, তিনগুণ হয়ে গেছে। অনেক আশা ছিল বর্তমান নির্দলীয় সরকার নিজেদের কয়লাসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সরকারের আয়ু আছে বড়জোর দুই মাস। ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে ১৬ মাস কাটিয়ে দিলো। নিজেদের জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ আর ব্যবস্থাপনা রীতিমতো হতাশাজনক।

বাংলাদেশের আবিষ্কৃত কয়লাসম্পদ উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুর এবং দিনাজপুর জেলায়। কয়লা ক্ষেত্র এলাকার জমি উর্বর। বিশেষ জাতের ধান উৎপাদনের জন্য খ্যাত। মাটির নিচে কয়লা স্তরের উপরে আছে পানির স্তর (একুইফার) কয়লাসম্পদ উন্নয়ন করতে হলে স্বাভাবিক কারণে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নিবিড় পানি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হবে, কয়লা ক্ষেত্র এলাকার জনগণকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে। অন্তত ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমীক্ষা করা আছে, কিন্তু কিছু ব্যক্তি বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে কয়লা ক্ষেত্র উন্নয়ন হলে দক্ষিণ বাংলা মরুভূমি হয়ে যাবে। ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হবে। বেশি দূরে যেতে হবে না। বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ডে একই ধরনের কয়লা খনিতে দীর্ঘদিন কয়লা উত্তোলন করা হলেও কোনো মরুকরণ দেখা যায় নি। অনেক খনি এলাকা পরিকল্পিভাবে সবুজায়ন করা হয়েছে। জার্মানিতে অনেক খনি এলাকা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেখে এসেছেন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকায় মরুকরণ হয়নি, দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে বিএমডি, জিএসবিও পেট্রোবাংলার মতো সংস্থা থাকা সত্ত্বেও এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খনি প্রকৌশল শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও আবিষ্কৃত কয়লাসম্পদ মাটির নিচে পড়ে আছে। অনেক বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণে প্রমাণীত হয়েছে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কয়লা আহরণ কারিগরিভাবে সম্ভব, আর্থিকভাবেও লাভজনক, প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশের কার্বন অ্যামিশন নগণ্য। অ্যামিশন সীমিতকরণের বৈশিক দায়বদ্ধতা নেই। বাংলাদেশ নিজেরাও উপকূল এলাকায় বেশ কয়েকটি আমদানিনির্ভর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানির নানা চ্যালেঞ্জ আছে। আর্থিকভাবেও খুব লাভজনক প্রমাণীত হয়নি। কিন্তু যেটি প্রমাডুত হয়েছে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবেশদূষণ গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে সীমিত রাখা সম্ভব।

শুরুতে বলেছি বাংলাদেশে এখন প্রাথমিক জ্বালানি দুর্ভিক্ষ। প্রমাডুত গ্যাসসম্পদ সীমিত হয়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে। অনেকের মতে, ২০৩০ নাগাদ শেষ হয়ে যেতে পারে। স্থলভাবে বর্তমানে সীমিত অসন্ধান থেকে ঘাটতি মেটানো দুরূহ, সাগরে অনুসন্ধান জোরদার করা হলেও কাজে লাগাতে ১০ বছর লাগবে। অথচ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে অন্তত দুটি কয়লা ক্ষেত্র বড়পুকুরিয়া এবং ফুলবাড়ী উন্নয়ন করা হলে পাঁচ বছরে খনিমুখে ১০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি ব্যবহার করে কয়লা ক্ষেত্র উন্নয়ন করা হলে মরুকরণের কোনো সম্ভাবনা নেই, পরিবেশদূষণ গ্রহণযোগ্য মাত্রায় সীমিত করা যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত জনপদকে অন্যত্র পুনর্বাসিত করা সম্ভব। বাংলাদেশ ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের লালন পালন করছে। সেই দেশ জাতীয় স্বার্থে বড়জোর ১ লাখ জনবসতি পুনর্বাসন করতে কেন পারবে না।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টির জন্য প্রধান কার্যক্রম হিসেবেই নিজস্ব কয়লা উন্নয়ন এবং ব্যবহার প্রাধিকার পাওয়া অত্যাবশ্যক, নতুন সরকারকে অজনপ্রিয় এই সিদ্ধান্ত শুরুতেই নিতে হবে। প্রয়োজন দেশপ্রেমিক, দক্ষ জ্বালানি সেক্টর নেতৃত্ব। আমি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ২০৩০ এবং পরবর্তী সময়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি সম্পূর্ণ আমদানি জ্বালানিনির্ভরতা সামাল দিতে পারবে না। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। বিনিয়োগ শূন্য হয়ে যাবে। শিল্প উৎপাদনে ধস নামবে।

শেয়ার করুন