০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১১:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়সহ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের ১২ দফা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়সহ যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের ১২ দফা প্রেসিডেন্ট ইলেকট মো. সাহাবুদ্দিন


নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ রুমাস কিচেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সদস্য, কার্যকরি কমিটি ও পরিচালনা পরিষদের এক যৌথসভার পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইলেকট মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করা হয় এবং যুগপৎ, তার কাছে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যাশার কথা বলা হয়।

সংগঠনের অন্যতম সভাপতি ডা. টমাস দুলু রায়ের সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য ও যুগ্ম-সম্পাদক বিষ্ণুগোপের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রগতিশীল রাজনীতিতে হাতেখড়িপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিচারপতিকে বিজ্ঞ সংসদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করায় আনন্দ ও স্বস্তি প্রকাশ করা হয়। বক্তাদের সবাই দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেন যে, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক চেতনা, অর্থাৎ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ-গণতন্ত্র এবং শোষণ ও বৈষম্যহীন দেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সদা সচেষ্ট থাকবেন। সভার পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইলেকট সাহাবুদ্দিনকে সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, তিনি ২০০১ সালের নির্বাচন এবং তৎপরবর্তী সময়ে যেসব বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সারা দেশের প্রগতিশীল মানুষকে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তদের, খুন যখম ধর্ষণ করে, তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল তাদের ২৬ হাজারেরও বেশি অপরাধী বলে শনাক্ত করে বিচার করার সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ২০১১ সালে ১ হাজার ১০০ পাতার যে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন সেটি এখনো হিমাগারে রয়েছে। বিচারের কাজ আজও শুরু করা হয়নি। একের পর এক বক্তা গভীর দুঃখের সঙ্গে বলেন যে, বাংলাদেশে সব অপরাধেরই বিচার হয়, শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কখনো বিচার হয় না; আর সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপরাধকে বিচার ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করে না বলেই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী, মৌলবাদী, চরমপন্থী শক্তি যৌথভাবে সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানও আদিবাসীশূন্য করে অফগানিস্তান/পাকিস্তানের মতো একটি জঙ্গি ধর্মীয় একনায়কতন্ত্রে রূপান্তরিত করার ঘোষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারছে। বক্তারা আরো বলেন যে, সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার না করার মানে হচ্ছে তাদের পরোক্ষভাবে বলে দেওয়া যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা, খুন, ধর্ষণ করে দেশত্যাগে বাধ্য করা। সভায় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনকে এই মর্মে সবিনয় অনুরোধ জানায় যে, তিনি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার প্রদত্ত রিপোর্টে চিহ্নিত সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়াটা অবিলম্বে শুরু করার জন্য তাগিদ দেন।

গত কয়েক দশক ধরে অব্যাহত সন্ত্রাসী প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু বিতাড়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ৪ফেব্রয়ারি ২০২৩ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের একযোগে কয়েকটি গ্রামে সুপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালিয়ে ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের অমানবিক ঘটনার প্রতি প্রধানমন্ত্রী এবং তার কোয়ালিশন সরকারের সব অংশীদার দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তারা বলেন যে, অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে সংখ্যলঘু নির্যাতন বন্ধ না করলে রামু, নাসির নগর, সাঁথিয়া, নন্দীরহাট, শাল্লা, নানুয়ার দিঘীর পাড়, কিংবা ঠাকুরগাঁওয়ের মতো বর্বরতা চলতেই থাকবে, যা কোনোভাবেই অসাম্প্রদায়িক মানুষের কাছে কাম্য হতে পারে না। তারা বলেন, সরকার চাইলেই যে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা যায় সেটার প্রমাণ ১৯১৮ সালের নির্বাচনের সময় যেমন দেখা গেছে তেমনি দেখা গেছে গত শারদোৎসবের সময়; আর এর মানে হচ্ছে সদিচ্ছা থাকলে সংখ্যালঘু নির্যাতন চিরতরে বন্ধ করাও সরকারের পক্ষে সম্ভব।

বক্তারা দুঃখের সঙ্গে বলেন যে, হেফাজতিরা চাওয়া মাত্র তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয় এবং সেটা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে বিসর্জন দিয়েও করা হয়; কিন্তু সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বত্ত রক্ষার্থে অত্যন্ত জরুরি ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে অওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি আজ পাঁচ বছর পরও পূরণ করা হয়নি। ঐ সব প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে দেশে কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদকে ধর্মঘট, লংমার্চ ও মশাল মিছিল করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের ন্যায্য আন্দেলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপনপূর্বক যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ সমস্যার একটি চিরস্থায়ী, টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনের আগে একটি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাস করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দারি জানায়, যে আইনের অধীনে থাকবে- (১) হেইট ও স্পিচ্ ক্রাইম আইন; (২) প্রতিটি জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার/শাস্তি প্রদানের জন্য দ্রুতবিচারের ক্ষমতাসম্পন্ন আদালত স্থাপন, যেসব আদালতে জজ সাহাবুদ্দিন (নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি) কমিশন কর্তৃক ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে প্রদত্ত রিপোর্টে যে ২৬ হাজারের বেশি অপরাধী চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাদের উল্লিখিত হেইট ক্রাইম ও স্পিচ্ আইনের আওতায় বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করা; (৩) একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে ১৯৭২ সাল থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ে সংঘটিত সব সংখ্যালঘু নির্যাতকদের শনাক্ত করে অপরাধীদের তালিকা বিচারের জন্য উক্ত আদালতসমূহের হাতে তুলে দেওয়া; (৪) একটি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা; (৫)একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা; (৬) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আদলে আলাদা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ফাউন্ডেশন গঠন করা; (৭) অত্যাচারিত হয়ে বা অত্যাচারের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া যেসব সংখ্যালঘু মানুষকে ‘শত্রু’ আখ্যায়িত করে পাকিস্তান/বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার তাদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে নিয়েছিল তা তাদের উত্তরাধিকারীদের কাছে বর্তমান নাগরিকত্ব বা অবস্থান নির্বিশেষে প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া শুরু করা; (৮) পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা; (৯) সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা; (১০) দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা; (১১) বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা এবং (১২) ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল করে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের সমঅধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সংগঠনে নবঅন্তর্ভুক্তদের সভায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ড. নিরঞ্জন রায় ও প্রাণেশ হালদার এবং সশরীরে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব সাধারণ সদস্য, ডিরেক্টর ও উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে যারা বক্তব্য পেশ করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অবিনাশ আচার্য্য, ডা. টমাস দুলু রায়, রনবীর বড়ুয়া, চন্দন সেনগুপ্ত, সুশীল সাহা, রূপকুমার ভৌমিক, ভজন সরকার, প্রদীপ মালাকার, দিলীপ নাথ, শুভ রায়, সুশীল সিনহা, ভবতোষ মিত্র, রণজিৎ ভাদুড়ী, নিতাই নাথ, মনোজ সরকার, দিলীপ চক্রবর্তী, শিবু পোদ্দার, সঞ্জিৎ ঘোষ, প্রদীপ সূত্রধর, প্রদীপ কুন্ডু, পিটার মোল্লা, বর্ণা সরকার, এডওয়ার্ড যোসেফ হলসানা, বামেশ রায়, হরিগোপাল বর্মণ, তপন দেবনাথ, সুমন মিত্র, প্রণব রায় রনো, অসীম দে, পরেশ ধর, মৃন্ময় ব্যানার্জি, রুমা সরকার, বিষ্ণু গোপ, ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।  

শেয়ার করুন