১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:৪৩:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ত্রোয়েদশ জাতীয় নির্বাচন ও গনভোট ফ্যাক্টচেকিং ও কনটেন্ট মডারেশন কর্মীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ৮ ডিসেম্বর থেকে এফ ও এম সাবওয়ে লাইন সপ্তাহের দিনে রুট পরিবর্তন উইন রোজারিওর খুনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে লেটিকেয়ার অস্বীকৃতিতে জাপানের প্রথম রাজধানী নারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পদত্যাগ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট নিষিদ্ধ করে অ্যাডামসের বিতর্কিত আদেশ হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারির ভাতিজার মাকে মুক্তির নির্দেশ বিশ্বকাপ ফাইনালে টিকেটের দাম ৬ হাজার ডলার


নিজেদের অহমিকায় কারো কদর পেলো না এনসিপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২৫
নিজেদের অহমিকায় কারো কদর পেলো না এনসিপি এনসিপির লগো


কোনো পক্ষের কাছেই কদর পেলো না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সব পক্ষই বলা যায় নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া দলটিকে এখন দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আবার কারো কারো অভিমত, এনসিপি’র কতিপয় নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত অহমিকাও দায়ী। অন্য পক্ষরা মনে করেন, দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে দুর্নীতির সাগরে গা ভাসিয়ে দেওয়ায়ও এনসিপি দুর্বল হয়ে গেছে বা গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে। এসব তথ্য মিলেছে রাজনৈতিক মাঠ থেকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক করে চলতি বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ছাত্র-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল। দলটির শুরু বা বলা চলে যাত্রা হয় এক বিশাল আশাবাদ নিয়ে। ধরে নেওয়া হয় বা বা গুজব রটে যায় অনেকে বড়ো দল বিশেষ করে বিএনপি থেকেও শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতার যোগদানের গুঞ্জন উঠে। কিন্তু অল্প কয়েকদিন পরেই দেখা গেলো এতে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা অনেকে এনসিপি থেকে প্রকাশ্যেই দল ছাড়ার ঘোষণা দিতে থাকে। তাছাড়া দলটির ভেতরে কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে আসায় আর এর পাশাপাশি এসব কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এসব কারণে দলটির রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সাড়া পড়ছে না। 

এনসিপি’র বড়ো ক্ষতি করেছে জামায়াত

কারো কারো মতে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এই রাজনৈতিক দলটির বর্তমান নেতৃত্বের একটি বিরাট অংশই ছিলো জামায়াতে ইসলামী’র ছাত্র শাখা হিসাবে পরিচিতি ছাত্র শিবিরের কর্মী। কিন্তু এনসিপি গঠনের শুরু থেকেই কমিটিতে ছাত্র-শিবিরের কোনো প্রাধান্যই রাখা হয়নি। কারো কারো মতে, এনসিপি’কে নিজেদের একটি সক্রিয় বি টিম বা আজ্ঞাবহ দল হিসাবে ব্যবহার করে বিএনপি’কে শায়েস্তা করতে তৎপর ছিলো জামায়াত। বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রকাশ্যে চলে আসায় প্রথমে এনসিপি’তে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা অংশ নিয়ে পরে ধীরে ধীরে তারা সরে যায়। তাছাড়া জামায়াতও এনসিপি’কে বাগে আনতে ব্যর্থ হয়ে তাদের প্রতি সব ধরনের আর্থিক ও সাংগঠনিক সহায়তা দেওয়া থেকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। বলা যায় প্রথম ধাক্কায় এনসিপি কার্যত জামায়াতের জনসমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।

দূরে সরিয়ে দেয় বিএনপি

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপি’র হাই কমান্ডের অত্যন্ত স্নেহভাজন হিসেবে পরিচিত ছিল এনসিপি’র বেশ কয়কজন নেতা। ২৪’র জুলাই বিপ্লবের তাদের অসাধারণ অবদানের পাশাপাশি সাহসী ভূমিকার জন্য বিএনপি’র হাই কমান্ড তাদের পাশে রাখতে চেয়েছিল। এমনকি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী করে আসনে তাদের জন্য বিএনপি বেশ কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা নেয়। বিএনপি বেশ কয়েকজন প্রভাবশালি প্রার্থীর আসন বঞ্চিত করে হলেও এনসিপি নেতাদের সেখানে বিজয়ী করে আনতে প্রস্তাব দেওয়া হয় হাই কমান্ডের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের পার্ক লেনের হোটেল ডোরচেস্টারে বৈঠকেও এনসিপি’র নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। এতে এনসিপি’কে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। পাশাপাশি এনসিপিকে ভবিষ্যতে বিএনপি’র প্রতিশ্রুত জাতীয় সরকারেরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু এসব কিছুই এনসিপি একটি অংশের নেতারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। এসময় এনসিপি’র একটি অংশকে জামায়াত আরও বড়ো ছাড় দিতে লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে তরুণ প্রজন্মের নেতাদের নেতৃত্বে দলটির বেশ কয়েকজন বলা যায় বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। এবং বলা চলে বিএনপি থেকে তারা দূরে সরে যায়। কিন্তু অল্প কয়েকদির পরে এনসিপির নেতারা জামায়াতের কূটকৈৗশল ধরে ফেলে। জামায়াতের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তারপরে এনসিপিকে সাথে নিয়ে জামায়াত বেশ কয়েকটি ইস্যুতে মাঠ গরম করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে চাইলেও সায় দেয়নি নতুন গড়া এই দলটি। এসময় জামায়াতের টার্গেট ছিলো তারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে এনসিপি কে নিয়ে মাঠ গরম করতে জোরে নামবে। কিন্তু এমন হাক ডাকের এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা বলে অভিহিত করেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ফলে এসব কারণে জামায়াতের সাথে বড়ো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। 

এনসিপির অহমিকাও দায়ী

একটি সূত্র জানায়, এনসিপির এমন বেহাল অবস্থার পেছনে দলটির কতিপয় নেতা অহমিকাকেও দায়ী করেছেন। কারো কারো মতে, জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে সই করবে না এনসিপি’র বাড়াবাড়ি খোদ প্রধান উপদেষ্টাও মেনে নিতে পারেননি। এনসিপিকে রাজি করাতে দিনভর সরকারের দিক থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা চেষ্টা ও তৎপরতা চললেও তারা ব্যর্থ হন। বিষয়টি অনেককে অসম্মানিত করেছে। এর আগেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির বিশেষ দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে চলে যান। এই শীর্ষ নেতারা হলেন, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ মহলকে বির্বতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। 

এনসিপি’র শেষ কোথায়

জুলাই অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণে তিনটি রাজনৈতিক দলের ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে নতুন জোট ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নতুন জোট ঘোষণা করেন। আপাতত বলা যায় এখানেই হয়তবা এনসিপি অবস্থান করবে কিছুদিন। আর এই জোটের ঘোষণা দিয়ে নাহিদ ইসলাম ইঙ্গিত করলেন, আসনের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন দলের অনেককেই নানা জোটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেসব অফার আসছে, আমরা সাদরে তা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। শুধু নির্বাচনি জোট নয়, এটি একই সঙ্গে রাজনৈতিক জোট। একসঙ্গে এবং একই মার্কায় জোটবদ্ধ নির্বাচন করব। অন্যদিকে জামায়াত ইঙ্গিত করে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, কেউ যদি মনে করে আগামী নির্বাচনে গায়ের জোরে জয়ী হবেন, কিংবা ধর্মের দোহাই দিয়ে জয়ী হবেন-তারা সফল হবে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন দীর্ঘ সতের বছরের একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের পততরে আন্দোলন সফলতা লাভকারী তরুনদের নিয়ে গড়া এনসিপি সামনের দিনে কতটুকু এগুবো না অন্য কোনো দলের ভিড়ে মিশে যাবে তা দেখতে হয়তবা বেশিদিন লাগবে না। না পুরো দলটি ব্যাপক ভাঙ্গনের মুখে পড়ে তা-ও সময় বলে দেবে।

শেয়ার করুন