আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজা যুদ্ধে সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ তদন্ত স্থগিত করার জন্য ইসরায়েলের করা একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের একটি আপিল খারিজ করেছে। ১৫ ডিসেম্বর সোমবার আইসিসির আপিল বিভাগের বিচারকরা রায় দিয়ে বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর গাজায় সংঘটিত ঘটনাবলিও আদালতের চলমান তদন্তের আওতায় পড়বে। এর ফলে নিম্ন আদালতের আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকল এবং প্রসিকিউশনের তদন্ত অব্যাহত রাখার আইনি ভিত্তি আরও শক্তিশালী হলো।
আইসিসির আপিল চেম্বার জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে বলে এটিকে ‘নতুন পরিস্থিতি’ হিসেবে গণ্য করা যায় না। ফলে রোম স্ট্যাটিউটের ১৮ অনুচ্ছেদের আওতায় তদন্ত পুনরায় শুরু করা বা ইসরায়েলকে নতুন করে নোটিশ দেওয়ার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি। বিচারকদের মতে, অক্টোবর ২০২৩-এর পরের ঘটনাগুলো একই ধরনের সশস্ত্র সংঘাত, একই ভূখণ্ড এবং একই পক্ষকে ঘিরে সংঘটিত, যা ২০২১ সালে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন পরিস্থিতি সংক্রান্ত তদন্তের মধ্যেই পড়ে। ওই তদন্ত ২০১৪ সালের ১৩ জুন থেকে সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এর কোনো নির্দিষ্ট শেষ তারিখ নেই।
এই রায়ের ফলে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল থাকছে। আইসিসি তাদের বিরুদ্ধে গাজায় সংঘটিত অভিযানে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে। আদালত আগে হামাস নেতা ইব্রাহিম আল-মাসরির বিরুদ্ধেও অনুরূপ অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল, তবে তার মৃত্যুর বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়ার পর সেই পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়।
ইসরায়েল এই রায় প্রত্যাখ্যান করে আইসিসির এখতিয়ার মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, এই সিদ্ধান্ত আইসিসির পক্ষ থেকে সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌম অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার প্রতিফলন। ইসরায়েলের অবস্থান হলো, তারা আইসিসির সদস্য নয় এবং আদালতের বিচারিক ক্ষমতা তাদের ওপর প্রযোজ্য নয়। একই সঙ্গে দেশটি গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যেই তাদের সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
রায়ে বিচারকরা উল্লেখ করেন, এই সিদ্ধান্ত অন্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নষ্ট করে না, তবে এটি গাজা যুদ্ধসংক্রান্ত তদন্ত অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগত বাধা দূর করেছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে করা আরও কয়েকটি আইনি চ্যালেঞ্জ এখনো আইসিসিতে বিচারাধীন রয়েছে, তবে সেগুলোর বিষয়ে রায় ঘোষণার কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি জানানো হয়নি।
এদিকে সংঘাতে একটি যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর কার্যকর হলেও গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী যা জাতিসংঘ নিয়মিতভাবে নির্ভরযোগ্য হিসেবে উদ্ধৃত করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধের ফলে গাজার অবকাঠামোর বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং যুদ্ধবিরতির শর্ত সত্ত্বেও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এখনো চরম দুর্বিষহ রয়ে গেছে।