১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৯:২১:০৪ অপরাহ্ন


নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যানের মুসলিমদের বহিষ্কারের আহ্বান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৫
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যানের মুসলিমদের বহিষ্কারের আহ্বান নিউইয়র্ক রিপাবলিকান সিটি কাউন্সিল সদস্য ভিকি পালাডিনো


নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স এলাকার রিপাবলিকান সিটি কাউন্সিল সদস্য ভিকি পালাডিনো মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া একাধিক ইসলামবিদ্বেষী পোস্টে তিনি পশ্চিমা দেশগুলো থেকে মুসলিমদের “বহিষ্কার” করার আহ্বান জানান। এসব মন্তব্যের পর তার বিরুদ্ধে সিটি কাউন্সিলে সেন্সার বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি হানুক্কা উদযাপন অনুষ্ঠানে বন্দুকধারীদের হামলায় ১৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর পালাডিনো এসব মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিমদের বসবাস সীমিত করা উচিত এবং নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য একটি “আইনি কাঠামো” তৈরি করা প্রয়োজন। এক পোস্টে তিনি লেখেন, “আরেকটি ৯/১১-এর মতো ঘটনা এড়াতে মুসলিমদের বহিষ্কারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার।” ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি পরে পোস্টটি মুছে ফেলেন। পালাডিনোর এই মন্তব্যের পর নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আউটগোয়িং সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার বলেন, “সিটি কাউন্সিলের উচিত দ্রুত সেন্সার প্রক্রিয়া শুরু করা। সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস এক বিবৃতিতে মন্তব্যগুলোকে ঘৃণ্য ও বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নিউইয়র্ক শহরের মূল্যবোধের পরিপন্থী।

সম্ভাব্য পরবর্তী সিটি কাউন্সিল স্পিকার জুলি মেনিনও পালাডিনোর মন্তব্যকে বিপজ্জনক ও উসকানিমূলক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের ওপর দোষ চাপানো গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এমন বক্তব্যকে স্বাভাবিক হতে দিতে পারি না। এদিকে, মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস নিউইয়র্ক  পালাডিনোর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে সেন্সারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাশের বলেন, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি পুরো একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে সমাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান, তবে তার জনসেবায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তিনি আরও বলেন, মুসলিমরা নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রথম সারির উদ্ধারকর্মী ও ব্যবসায়ী হিসেবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তাদের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিমদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করেন, যার সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার। এদের মধ্যেই রয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির সদ্য নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। এর আগেও পালাডিনো মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে তাকে ‘ডিপোর্ট’ করার দাবি করেছিলেন। পালাডিনোর ধারাবাহিক ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে নিউইয়র্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের ঘৃণামূলক বক্তব্য সমাজে বিভাজন বাড়ায় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।

মার্কিন মুসলিমদের গণবহিষ্কারের আহ্বান, রিপাবলিকানদের মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক

অস্ট্রেলিয়ায় এক হনুক্কা উদ্যাপনে সংঘটিত গণগুলিবর্ষণের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মার্কিন মুসলিমদের গণবহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের এই মন্তব্যকে ঘিরে রিপাবলিকান দলের ভেতরে ক্রমবর্ধমান প্রকাশ্য ইসলামবিদ্বেষ নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

ফ্লোরিডার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র‌্যান্ডি ফাইন গত ১৫ ডিসেম্বর সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “মুসলিম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সব মূলধারার মুসলিম বৈধ ও অবৈধ অভিবাসীর র‌্যাডিকাল বহিষ্কার এবং যেখানে সম্ভব নাগরিকত্ব বাতিলের সময় এসেছে। মূলধারার মুসলিমরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা অন্তত তাদের আমেরিকা থেকে বের করে দিতে পারি।” তার এই মন্তব্য দ্রুতই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। তবে ফাইনের মন্তব্য একক নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরও কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ইসলামকে আমেরিকান মূল্যবোধের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়ে মুসলিমদের দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। টেক্সাসের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান  ব্র্যান্ডন গিল গত নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ইসলাম “আমাদের সংস্কৃতি ও শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং সব সংস্কৃতি নৈতিকভাবে সমান নয়।” তিনি আরও বলেন, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সুযোগ দিয়ে দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থা আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে।

গিলের এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে আল্ট্রা-রক্ষণশীল হাউস ফ্রিডম ককাস, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংক্ষেপে সত্য লিখে তার মন্তব্যের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। এদিকে, র‌্যান্ডি ফাইন অতীতেও একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে মিনেসোটার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ও সোমালি-আমেরিকান মুসলিম ইলহান ওমর ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানানোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করলে, তার জবাবে ফাইন কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন, আপনার সহধর্মী অনেক মুসলিম সন্ত্রাসীর হত্যাকারীকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এটা দেখতে নিশ্চয়ই আপনার কষ্ট হচ্ছে।

এই মন্তব্যগুলোর পর নাগরিক অধিকার সংগঠন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থার পরিপন্থী এবং এতে ঘৃণা ও বিভাজন আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন