০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:২৯:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৮-২০২২
কথার কথকতা


কথা কি? মানুষ কেন কথা বলে? মানুষ কি নিজে থেকে কথা বলে নাকি কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে দিয়ে কথা বলায়? এগুলো মনে হয় সহজ-সরল বিষয়, আসলে কিন্তু তা নয়। উল্লিখিত কয়েকটা প্রশ্ন পড়ার সাথে সাথেই যে কোনো মানুষ চমকে উঠবে এই ভেবে যে, আসলেই তো বিষয়টি রহস্যপূর্ণ!

কথাতো মানুষ শব্দ শেখার আগেই ধ্বনি দিয়ে বলা শুরু করে, জন্মের পরপরই। তাহলে এ বিষয়ের সমাপ্তি হবে কোন সিদ্ধান্তের ওপর? মনে হবে যে, কথাতো মানুষ বলে, বলবেই, এটা নিয়ে এতো ভাববার কি আছে, বলে যেতে থাকো, যতোদিন প্রয়োজন হয়। কিন্তু যখন একজন মানুষ বলে ওঠে, আরে, আমি এটা কি বললাম? সবাই কি মনে করবে? যদি প্রশ্ন করা হয়, বললে কেন, উত্তর এলো, ‘মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে’। সদ্য ভ‚মিষ্ঠ শিশুটির ক্রন্দনধ্বনিও এমনি করে মুখ ফসকে এবং বাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসে, স্কুলে গিয়ে কথা ও ধ্বনি এবং সেগুলোর অর্থের ওপর কোনো ক্লাস করার আগেই!

আধ্যাত্মিক লাইনের কিছু মানুষ মনে করেন, মানুষ নিজে থেকে কিছু বলে না, এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মানুষ কথা বলে। ওনারা আবার এ প্রসঙ্গে কখনো কখনো একটু আবেগায়িত হয়ে বলে ওঠেন, ‘আমি কে কথা বলার, কথাতো সব ওনার, উনি আমাকে দিয়ে বলান।’ এদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা ভালো-মন্দ কোনো কথার জন্যই বক্তাকে দায়ী করতে চান না, বলেন যে, নিয়ন্ত্রণকারীই তো আমাকে দিয়ে কথা বলাচ্ছেন, আমি দায়ী হবো কেন!

এদিকে আমরা মুরুব্বি মহলের কাছ থেকে শুনে আসছি, কথা খুব কম বলবে, ভেবেচিন্তে কথা বলবে, যে নীরব থাকে সে মুক্তি পায়- এরকম অনেক মহান বাণী। আবার সমাজে খারাপ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে বিজ্ঞজনেরা বলেন, আপনার সন্তানকে ‘না’ বলা শিক্ষা দিন, না হয় সে প্রচুর সর্বনাশের মুখোমুখি হবে, শিকার হয়ে যাবে! প্রিয় পাঠক, কি মনে হয়? আমরা সচরাচর কথা বলার মতো করে কথার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, বিষয়টি এতো সহজ নয়!

‘কি দারুণ কথা শুনাইলি! এটাতো কথার কথা। তোমার কথা শুনে মনটা জুড়িয়ে গেলো। তুই কি কথা বললি নাকি বোমা ফাটাইলি! তোর কথা বিষাক্ত তীরের মতো আমার কলজেটা ছিদ্র করে বেরিয়ে গেলো। তোমার কথা শুনে পথের দিশা পেলাম।’ কথা সম্পর্কে এরকম অনেক কথা আছে। একটা মানুষের একটা কথাই আরেকটা মানুষের জীবনকে বেহেশত বা দোজখ, স্বর্গ বা নরকে পরিণত করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে যিনি কথাটি বললেন, তিনি নিজেও হয়তো জানেন না যে, ওনার কথাটি কত সুদূরপ্রসারি সুফল বা কুফল বয়ে এনেছে।

আসলে কথা সম্পর্কে আমরা সবাই যদি একটি অনন্তকালীন অনলাইনে কথা বলতে থাকি, তাহলে এ বিষয়ের কথা অনন্তকাল অসমাপ্ত অবস্থায়ই চলতে থাকবে। যে বিষয়টি এতো ব্যাপক সে বিষয়ে আমরা কি সমাধান দিতে পারবো? সদাসর্বদা ভেবে না ভেবে, মেপে না মেপে অসংখ্য কথা বলে যাওয়া মানুষ আমরা যখন দেখি কথার কথা এতো জটিল, তখন সত্যিই নির্বাক হয়ে যাবার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এটি! এখানেই কি আমরা বিষয়টি শেষ করে দেবো? যাঁরা লম্বা লেখা পড়তে অনিচ্ছুক তাঁরাও হয়তো বলবেন, লেখাটা আরেকটু লম্বা করুন এবং কথা বিষয়ক কথাগুলো একটা সমাধানের স্তরে এনে এমন কিছু বলে যান যে, আমরা যাতে অস্থির হয়ে কেবল কথা চালিয়ে যাওয়া অথবা অবাক হয়ে কথা বন্ধ করে দেয়ার মতো অবস্থায় পতিত না হই। জ্বি হ্যাঁ, এরকম বাণী যাঁরা দিয়ে থাকেন ওনারাই আসলে বর্তমান সমাজের বিজ্ঞ শ্রেণি, যাঁরা জানেন যে, কথার কথা আর কথা নিয়ে কথা আকাশ-পাতাল তফাৎ, প্রথম বা দ্বিতীয় কোনোটাই আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করে একটি সমাধানে পৌঁছা অনেক অনেক কঠিন ও জটিল একটি বিষয়।

তাহলে কি কথার ওপরই মানুষের জীবন নির্ভর করে? এ প্রশ্ন আমাদের আলোচনার এ স্তরে মনে জাগতেই পারে। এক্ষেত্রেও আমরা একটা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছি। যিনি খুব কম কথা বলেন, তিনিও জীবনযাপন করেন আর যিনি প্রচুর কথা বলেন, তিনিও জীবন নির্বাহ করেন। তাহলে কথা বেশি বা কম বলার ওপর জীবন নির্ভর করছে বলে মনে হচ্ছে না। কি রে ভাইতো বোমা মারলেও একটা কথা বলতে চাইতেন না, এখন এতো কথা কেমন করে বলছেন! এই, উনিতো অক্লান্ত প্রচুর কথা বলতেন, এখন এতো নির্বাক হয়ে গেলেন কেন! এ দুটো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্টজন ওনাদের দু’জনেরই জীবনের কোনো কোনো ঘটনার উল্লেখ করে সেসব সুখ বা দুঃখকে ওনাদের এই পরিবর্তনের কারণ বলে উল্লেখ করবেন আর আরেকজন প্রবীণ হয়তো মৃদুস্বরে বলে উঠবেন, ‘আরে বোকারা, এসবই ওনার ইচ্ছা, সেই অদৃশ্য শক্তির কলকাঠি নাড়া এবং ইশারা থেকে হয়ে থাকে।’

কথা এবং কথাবিষয়ক কথা বলতে গিয়ে আমরা ক্রমশ সব জটিল কথা টেনে আনছি এবং কথা সম্পর্কে একটি সমাধানসূচক কথায় উপনীত হওয়া থেকে ক্রমশ দূরে সরে গিয়ে জটিলতার জালে আবদ্ধ হচ্ছি! কথা সম্পর্কিত গল্পে প্রবেশ করে অর্থাৎ কথার কথকতা বা কথার কত কথা নিয়ে মত প্রকাশ করতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, কথা নিয়ে কথা বলা নেহায়েতই কথার কথা নয়, অনেক জটিল একটি বিষয়। বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলতে গেলে বরং বিষয়টি অল্প সময়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদি আমরা পানি নিয়ে কথা বলি, তাহলে মোদ্দাকথা দাঁড়াবে যে, হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিলে পানি হয়, প্রথমটি দ্বিতীয়টির দ্বিগুণ পরিমাণ লাগে। প্রমাণ করতে বললে, ল্যাবে ঢুকে দেখিয়ে দেয়া যায় অল্প সময়ে, কিন্তু কথা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল, আলোচনা ও বিতর্কের শেষ নাই আর এ বিষয় নিয়ে ল্যাবে ঢোকার সুযোগই হচ্ছে না। ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা মনে হলো, কোনো এক বিজ্ঞ লোক নাকি বলেছেন, কথা বোমার চেয়েও শক্তিশালী। কথাটি মেনে নিলেও আমরা তা গবেষণাগারে নিয়ে পরীক্ষা করতে পারবো না। তোমার কথা শুনে মনে এক প্রশান্তি নেমে এলো, যা শুনে প্রশান্তি লাভ করা গেল সে কথাটিও আমরা ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করতে পারবো না! তাহলে অবশেষে কথাটা কি দাঁড়ালো?

প্রিয় পাঠকমÐলী, কথা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমরা সমাধানসূচক কোনো কথায় উপনীত হতে পারলামনা এবং এর জন্য আমরা দুঃখ বা সুখ কোনোটাই প্রকাশ করতে চাই না। কারণ সেটাও কঠিন। আপনারা যদি কথা সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা বা সমাধানসূচক কোনো কথা আমাদের শোনাতে চান, তা লিখে জানালে আমরা সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে তা পাঠকবৃন্দের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো, কথা দিলাম। এ অবস্থায় আপনারা কেউ যদি প্রশ্ন করেন, ‘কথা কি কোনো বস্তু, এটা কি দেয়া যায়’, তাহলে আমি বলতে বাধ্য হবো যে, আমার কথা বন্ধ। অবাক হয়ে যাচ্ছি এই ভেবে যে, কথা নিয়ে কথা সত্যিই তো কোনো সহজ কথা নয়!


শেয়ার করুন