০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৭:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২২
কথার কথকতা মাইন উদ্দিন আহমেদ


মানুষ এক জীবনে জ্ঞান জগতের কতটুকুইবা আহরণ করতে পারে? সহজ-সরল মানুষেরা আরো কম পারে। এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো চালাক-চতুর ছেলেরা খুব দ্রæত জেনে যায়। এমনও বিষয় আছে যেগুলো এই বুড়ো বয়সে এসে আমার জানার সুযোগ হয়েছে অথচ দেখা যায়, চালাক ছেলেটি তা জেনে ফেলেছে কিশোর বয়সেই। তবে জীবনযাপনের বিষয় এবং কাজগুলো ফিরিস্তি দিয়ে লিখে শেষ করা যায় না।

এগুলো এতো ব্যাপক যে, বর্ণনা করতে গেলে অশেষ বলে মনে হয়। বহু বছর আগে একবার সারাদিন একটা মানুষ কি করে এ বিষয়ে লিখতে গিয়ে আমার প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অবস্থা হয়েছিলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে, বসে, তোশক, বালিশ ও কম্বল সরিয়ে একটু এগিয়ে খাটের পাশে গিয়ে নেমে, হেঁটে বাথরুমে গিয়ে হাত বাড়িয়ে টুথপেস্ট এবং ব্রাশ নিয়ে পেস্ট লাগিয়ে তাতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দাঁত মাজা শুরু করে সকালের এ কাজটি শেষ করার বর্ণনা দিতে গিয়ে দেখা গেলো দুই পৃষ্ঠায়ও লিখে শেষ করা যাচ্ছে না!


সমস্ত দিনযাপন করে রাতে আবার ঘুমানোর জন্য পায়ের স্যান্ডেল খুলে বিছানায় ওঠা পর্যন্ত কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গেলে এক মহাকাব্যেও শেষ হবে না বুঝবার পরও আমি যে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাইনি, সেটা ছিলো এক সৌভাগ্যের ব্যাপার। অবাক বিস্ময়ে থেমে গিয়েছিলাম আমি। শুধু মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম, একটা মানুষ এতো কাজ করে? করতে বাধ্য হয় তথাকথিত জীবনযাপনের নামে!  পরে বড় হয়ে বুঝলাম, স্বল্প জ্ঞানের কারণে আমি অনেক কাজই করা থেকে মুক্তি লাভ করেছিলাম। তবে একটা বিষয় জানি না বলে একদিন নিজেই খুব লজ্জা বোধ করলাম।


ঘেমে লাল হয়ে গেলাম। কিন্তু কেউ জ্ঞানটি আমাকে দান না করলে আমি তা জানবো কি করে? এ সময় পর্যন্ত বিদ্যা অর্জনের যে স্তরগুলো আমি অতিক্রম করেছি, তাতে কারো না কারো দায়িত্ব ছিলো আমাকে তা শেখানো, কিন্তু ওনাদের সেই সুযোগ হয়নি কেন আমি জানি না। জ্বি হ্যাঁ, বিষয়টি বলছি। সর্বসাধারণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না, তারপরও বলছি।

আপনাদের অনেকেরই মনে আছে, আশির দশকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমি বেশ কিছু গল্প লিখেছিলাম। ১৯৮৪-এ সেগুলো দিয়ে এক ছাপাখানার মালিক বন্ধু ‘অন্যত্র চলো’ নাম দিয়ে একটা বই ছেপেছিলো। বইটার পেছনে লেখকের পরিচিতিমূলক কিছু লিখতে গিয়ে লিখেছিলাম ‘পেপারব্যাক কিছু গল্প নিয়ে এই বই’। পরে একজন সিনিয়র সাংবাদিক প্রেসক্লাবে এটা দেখে বললেন, ওহে উদীয়মান লেখক সাহেব, পেপারব্যাক কথাটা এই অর্থে ব্যবহৃত হয় না। খুব শরম পেয়ে সবগুলো বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে শব্দটি কলম দিয়ে কেটে দিলাম।


তখন জানলাম, আমাদের এটা হার্ডবোর্ড বাঁধাই বই, বোর্ড ছাড়া শুধু মোটা কাগজের প্রচ্ছদযুক্ত বইকে পেপারব্যাক বলে। আমার ধারণা ছিলো, খরচ বাঁচানোর জন্য পশ্চিমের দেশগুলোতে বইয়ের কাভার এইরকম হয়। পরে জানলাম, পেপারব্যাক কাভার হলে বইগুলো পড়তে সহজ হয়, চলার পথেও সহজে সামাল দেয়া যায় এবং আরো অনেক সুবিধা। কিন্তু আমি এতো অজ্ঞ রইলাম কি করে! শিক্ষার্থী হিসেবে আমি তো সবসময় বিনয়ীই ছিলাম। যাক, এটা আমার কপাল। মনে পড়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার খুব প্রিয় শিক্ষক ড. মনিরুজ্জামান স্যার একদা বলেছিলেন, ‘রিয়েলি ইউ আর অ্যা মিসআন্ডারস্টুড বয়!’ তিনি তো পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগে। একজন খাঁটি ভদ্রলোক ছিলেন তিনি। আল্লাহ ওনার বেহেশত নসিব করুন।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে অল্পকিছু কথা বলে আজকের লেখা শেষ করবো। আপনাদের জানা আছে যে, আমি বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে চার দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছি। শুভাকাক্সক্ষীদের মধ্যে কেউ কেউ আমার বেহাল অবস্থা দেখে বলতো, এতো খাটুনি খাটলেন, আপনার মূল্যায়ন হলো না। দেশের সত্তর শতাংশ ধনী মানুষই তো আপনাদের ওইদিকের, দক্ষিণ বঙ্গের।


মিডিয়া-ফ্রেন্ডলি একজনকে মিডিয়া হাউজ করার প্রস্তাব দিন, আপনি কী-পারসন হয়ে সব ম্যানেজ করুন, আপনারও মূল্যায়ন হবে আর বিনিয়োগকারী মিডিয়া টাইকুন হবার সৌভাগ্য অর্জন করবেন। এসব কথা শুনে আমি প্রভাবিতও হয়েছিলাম। কিন্তু এ রকম পয়সা-কড়ির মালিকদের খোঁজখবর নিয়ে দেখি, কোনো কোনো মিডিয়া হাউজকে ওনাদের কেউ কেউ কোটি কোটি টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, কিন্তু নিজেরা কোনো মিডিয়া হাউজ করতে রাজি নন। অথচ যেই পরিমাণ অর্থ সহায়তার জন্য দিচ্ছেন তার চারভাগের একভাগ পয়সায় নিজেই স্বাধীনভাবে উদ্যোগ নিতে পারতেন। এই নেতিবাচকতার কারণ হিসেবে অনেকেই বিদ্যার স্বল্পতাকে দায়ী করেছেন। আমি অবশ্য বিদ্যা ও বিত্ত দুটোই আছে এরকম মানুষকেও অনাগ্রহী দেখেছি।


তবে মিডিয়ার বর্তমান করুণ অবস্থা দেখে এক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে বিনিয়োগে অনাগ্রহী ওইসব বিত্তশালীর প্রতি আমার মনে এখন আর কোনো কষ্ট নেই। কারণ ওনাদের কাউকেই শারীরিক অসুস্থতা সামাল দিতে গিয়ে আমার মতো বসবাসের জমি বিক্রি করতে হয়নি। তবে আমি বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে বলতে পারি, নিউজ ছেপে কারো কাছ থেকে কখনো দশ টাকাও নেইনি। পাঠকবৃন্দ, আমার আজকের লেখায় কোনো অনুচিত আবেগ থাকলে ক্ষমা করে দেবেন। আপনাদের জীবন সুখময় হয়ে উঠুক।


শেয়ার করুন