২৭ জুন ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:১৫:৩৪ পূর্বাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে ফাটল : বিপদে বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে ফাটল : বিপদে বাংলাদেশ


দৃশ্যমান দুই ইস্যুতে সম্পর্ক শীতল যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মধ্যে। এ দুটিই ভারতের সৃষ্ট। এর একটি কানাডাতে এক শিখ হত্যাকাণ্ড অন্যটি ইরানের সঙ্গে ভারতের এক চুক্তি। দুই বিষয়ই যুক্তরাষ্ট্রের মনঃপুতই হয়নি শুধু এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ মার্কিনিরা। এছাড়াও অন্যকিছু থাকলেও থাকতে পারে, তবে ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ ভারতনির্ভর এমনটা ভেবে ভারত যদি ওইসব ক্ষেত্রে উৎসাহী হয়ে থাকে সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কোনো পরিবর্তন হবে কি না সময় বলে দেবে তা। ওই দুই শক্তিধরের শীতল সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অনেক কথা উঠে আসছে। বাংলাদেশের বেলায় ওই দুই দেশ কি এক থাকবে, না দুই ধারার নীতি শুরু হবে-এটা নিয়ে এখন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তুমুল আলোচনা। আমেরিকা যতই বলুক বাংলাদেশ তারা ভারতের চোখে দেখে না। কিন্তু দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাস্তবরূপটা দেখা গেছে। অবশ্য তখন দুইয়ের সখ্যতা ছিল বেশ। এখন সে সম্পর্কে ফাটল। এতে করে বাংলাদেশের নীতিতে তারা এখন এক থাকবে, নাকি আলাদা হবে-সেটাই প্রশ্ন এ অঞ্চলের। 

কেন সম্পর্কে ফাটল 

যুক্তরাষ্ট্র তার সীমান্তবর্তী দেশ কানাডাতে যে শিখ নেতা হত্যাকাণ্ড সেটা মেনে নিতে পারেনি। কানাডার পাশে তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সমস্যা সেখানেও ছিল না। ওই এক ইস্যুতে ভারতের পাশে যখন রাশিয়া এসে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছে তখনই যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা ক্ষিপ্ত হওয়া শুরু। এরপর রাশিয়া চীনের ঘনিষ্ঠ ইরানের সঙ্গে ভারতের ১০ বছরের যে চুক্তি এটাতে মার্কিনিদের মেজাজ হট হওয়ার উপক্রম। 

কিন্তু সামনেই দেশটিতে নির্বাচন। সেক্ষেত্রে কিছুটা ধীরে চলানীতিতে এখন মার্কিনিরা। এজন্য এসব বিষয় নিয়ে সোচ্চার না হলেও ভেতরে ভেতরে কিছু একটা তো হয়েছেই যা না হলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিড়ির দিন শেষ হতে চলেছে-এমন কথা কেনই-বা বলবেন। 

ইরানের সঙ্গে ভারতের ১০ বছরের চুক্তি 

ইরানের চাবাহারে অবস্থিত বন্দর নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে গত ১৩ মে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১০ বছরের জন্য ইরানের চাবাহার শাহিদ বেহেশতি বন্দর পরিচালনা করবে ভারত। ‘ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড’ এবং ইরানের ‘পোর্টস অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের’ মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। শাহিদ বেহেশতি ইরানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সীমান্ত লাগোয়া এই বন্দর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণও বটে। ভারতের বন্দর, নৌপরিবহন ও নৌপথ মন্ত্রকের মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ইরানে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর হওয়ার পর বলেন, ‘ইরান এবং ভারতের সম্পর্কের নিরিখে এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’

এর আগে ২০১৬ সালেও ইরানের শহিদ বেহেশতি বন্দর পরিচালনার জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। প্রতি বছর এই চুক্তি ‘রিনিউ’ করা হতো। সাম্প্রতিক স্বাক্ষরিত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিকে ২০১৬ সালের চুক্তিরই একটা নতুন রূপ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ফলে বন্দরে বড় বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হবে। ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় প্রায় ১২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ভারতীয় সংস্থা ‘ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড’। এই বিনিয়োগের পাশাপাশি ২৫ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। চুক্তি মোট ৩৭ কোটি ডলারের।

কানাডায় শিখ নেতা হত্যাকাণ্ড 

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে গত ১৮ জুন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, নিজ্জারকে ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

আর ট্রুডো এমন অভিযোগ করার দিনই দেশটি ভারতের এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যালানি জোলি জানিয়েছেন, বহিষ্কৃত ওই কূটনীতিক কানাডায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। হারদ্বীপ সিং নিজ্জার ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে আলাদা ও স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের অন্যতম বড় নেতা ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার তৎপরতায় যুক্ত থাকায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।

ভারতের পাঞ্জাবের পর কানাডায় শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করেন। আর তাই সেখানে সাধারণ শিখরা প্রায়ই স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে মিছিলসহ বিভিন্ন আয়োজন করে থাকেন। আর এ বিষয়টি নিয়ে কানাডার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল ভারত। 

গুলিতে নিহত শিখ নেতা নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল ভারত। দেশটির অভিযোগ ছিল নিজ্জার ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন। জানা গেছে, হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করার গোটা বিষয়টির যাবতীয় তথ্য কানাডাকে অবহিত করে যুক্তরাষ্ট্রই এবং ওই ঘটনায় কানাডার পাশে দাঁড়ায় মার্কিনিরা। সেটা নিয়েও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মনোমানিল্য রয়েছে। এটা আরো বেশি বেড়েছে রাশিয়া যখন ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছে, এ প্রসঙ্গে ভারতকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র বেশিই চটেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি 

ইরানের সঙ্গে ১৩ মে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব ১০ বছরের জন্য নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে ভারত। এতেই নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, কেউ যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করার কথা ভাবে, তাহলে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে। ইরানের সঙ্গে ভারতের চাবাহার বন্দর নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। এরপরই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে ওয়াশিংটন।

বেদান্ত প্যাটেল বলেন, চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত ও ইরানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সেই বিষয়ে আমরা অবগত। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর নিয়ে তাদের সেই চুক্তি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতায় পড়ে। ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি আছে এবং তা জারি থাকবে। এরপর তিনি বলেন, কেউ যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা ভাবেন, তাহলে তাদের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখেন।

বলে রাখা ভালো, এর আগে রাশিয়ার কাছে থেকে ভারত যখন এস৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনেছিল, তখনো দিল্লিকে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভারত নিজের অবস্থানে অনড় ছিল। এর আগে ২০১৬ সালে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইরানে গিয়েছিলেন, তখন চাবাহার বন্দর নিয়ে চুক্তি হয়েছিল দুই দেশের। এরপর ২০১৮ সালে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ভারতে আসেন। তখন চাবাহার বন্দরে ভারতের ভূমিকা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। এরপর চলতি বছরের (২০২৪) জানুয়ারিতে ইরান যান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেই সময়ও এই বিষয়ে আলোচনা হয়। আর ১৩ মে সোমবার সর্বানন্দ সোনওয়াল চাবাহার বন্দর নিয়ে চুক্তি সই করেন ইরানের মাটিতে দাঁড়িয়ে। 

এস জয়শঙ্করের হুঙ্কার 

আমেরিকা আর বিশ্বের মোড়ল নয়, বরং তার প্রভাব এবং প্রতাপ ক্রমশ কমে আসছে। সম্প্রতি পিটিআইকে দেওয়া তার একটি সাক্ষাৎকারে নিজের এমন পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘আমি মনে করি, ঠান্ডা যুদ্ধের পর আমেরিকার যে আধিপত্য ছিল, আজকে তা শেষের পথে।’ টালমাটাল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জয়শঙ্করের এই পর্যবেক্ষণকে তার ব্যক্তিগত মত বলতে নারাজ অনেকেই। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, জয়শঙ্করের বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পরাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আমেরিকার গুরুত্ব এবং অপরিহার্যতাকে আর স্বীকার করতে চাইছে না নয়াদিল্লি? জয়শঙ্করের বার্তার মধ্যে বিদেশনীতিতে দিল্লির ‘আত্মনির্ভরতা’র সুরটি রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি একাধিক বিষয় নিয়ে মতপার্থক্যের জেরে সাময়িক দূরত্ব বেড়েছে নয়াদিল্লি আর ওয়াশিংটনের মধ্যে। এই আবহে জয়শঙ্করের ওই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। খলিস্তানপন্থী জঙ্গি নেতা গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুনকে ‘হত্যা করার ষড়যন্ত্র’ নিয়ে আমেরিকার একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন-দিল্লির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সম্প্রতি টানাপড়েন দেখা যায়। আমেরিকার ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, পন্নুন-হত্যার ছকে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ জড়িত। ভারত গোড়া থেকেই বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে। 

সম্প্রতি বণিকসভা ‘ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স’-এর একটি অনুষ্ঠানে নাম না করে আমেরিকা এবং পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনা করেন জয়শঙ্কর। আমেরিকার হুঁশিয়ারি নিয়ে জয়শঙ্করের বক্তব্য, চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত-ইরান চুক্তি গোটা এলাকাকে উপকৃত করবে। একই সঙ্গে তার আর্জি, বিষয়টিকে যেন সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা না হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সমালোচনাও করেন জয়শঙ্কর। ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে যাওয়া ফলাফল বদলাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, ‘যেসব দেশ ফলাফল বদলাতে আদালতে যায়, তারা আমাদের জ্ঞান দিচ্ছে যে, কীভাবে নির্বাচন করাতে হবে।’ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা প্রকাশ্যে কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে নেয়।’ 

এর আগেও অনেকবার যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানির সামনে রাশিয়া এসে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারতের। যদিও বেশ কিছুদিন যাবৎ ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ধীরে ধীরে মজবুত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের মতো শক্তির প্রভাব কমাতে ভারতের গুরুত্ব টের পেয়েছে ওয়াশিংটনও। ইন্দো-প্যাসিফিক পলিটিক্সে শক্ত অবস্থান মজবুত করতে ভারতের ওপরও নির্ভরতা বাড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনি মুুহূর্তে জয়শঙ্করের এমন হুঙ্কার। অবশ্য জয়শঙ্কর তার কথায় অগ্রাধিকার দিয়ে বার বারই বলেছেন ‘জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার’ প্রসঙ্গ। জয়শঙ্কর এখণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেও সে একজন পাকা কূটনীতিকও। ফলে তার নিজস্ব বক্তব্য সেটা রাষ্ট্র বা মোদি সরকারের চিন্তার প্রতিফলন ঘটাই স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যাবে। 

বাংলাদেশের জন্য কী মেসেজ 

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একাত্মবোধ দারুণভাবে টের পেয়েছিল বাংলাদেশের জনগণ ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে। এমনিতেই ইন্দো-প্যাসিফিকে ওই দুইয়ের দারুণ মিল থাকলেও বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই যা হওয়ার দাবি ছিল একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে এমনটা হয়নি বিগত সময়েও। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ দাবি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত যে নির্বাচনটা করেছে তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিগত প্রায় দুই বছরের তৎপরতার কোনো ছিটেফোঁটাও মিল ছিল না। কথিত আছে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দিল্লিতে টু টু বৈঠক হয় দুই দেশের মধ্যে। ওই সময়ের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব তৎপরতার আগুন নিভে যায়। অথচ এ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা পূরণে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য আলাদা নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। 

তারও আগে বহুবার বলেছিল, ভারতের চোখে আর বাংলাদেশকে দেখবে না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শেষতক সেই ভারতের প্রত্যাশা অনুসারেই যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে। বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটা কীভাবে হয়েছে, কে কে অংশ নিয়েছে এগুলো আর দ্বিতীয়বার বলার প্রয়োজন নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন ইন্দো-প্যাসিফিকে কী ভূমিকা নেবে এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাদের নীতি কী হবে সেটা তারাই ঠিক করবে।

তবে এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সহকারী ডোনাল্ড লুর গুরুত্বটা প্রথমে অনুভব করা গেলেও সেটা গুরুত্বহীন হয়ে যায়। বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়েছে বিএনপি বিদেশি কোনো শক্তির ওপর নির্ভর করে কিছু করবে না। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এ সফরে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের সঙ্গেও না। রাষ্ট্রীয় আলাপ আলোচনায় অনেকটা নীরবে প্রস্থান করেছেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা। যদিও তার এক বক্তব্য পুরোনো কথা স্মরণ হয়েছে অনেকেরই। যেটা তিনি বলেছেন, তা হলো যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাদের পুরোনো নীতিতেই বহাল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ মার্কিনিদের এমন কথার ওপর আর আস্থা রাখতে চায় না বলে সাধারণ মানুষকে বলাবলি করতে শোনা গেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সেই পুরানো বক্তব্যটাই নতুন করে রেখেছেন এ প্রসঙ্গে। সেটা হলো যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের জন্য নয়, তাদের স্বার্থে তারা বরাবর কাজ করতে অভ্যস্ত। তবে আশঙ্কা জন্ম দিয়েছে, আমেরিকা এবং ভারতের সম্পর্কে ফাটল ধরলে বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণ ভারতের কথা শুনেই আমেরিকা নির্বাচনের পূর্বে চুপ হয়ে গিয়েছিল, ছিল কোনো লোভনীয় অফার। সেই অফারের কারণেই ভারতের দাবি মেনে নিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু সম্পর্কে ফটল ধরলে আমেরিকা নিশ্চয় ভারতের কথা আর শুনবে না-এমন আশঙ্কা অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের। ফলে নিশ্চতভাবে বলা যায় আমেরিকান ভারতের সম্পর্ক ভালো না হলে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন