০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:২৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বঙ্গবাজারে আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো ব্যবসায়ীদের হাহাকার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৪-২০২৩
বঙ্গবাজারে আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো ব্যবসায়ীদের হাহাকার


আবারও রাজধানী ঢাকায় বড় দুর্ঘটনা। গুলিস্তান সংলগ্ন বঙ্গবাজার খুচরা ও পাইকারির অন্যতম বৃহৎ মার্কেট আগুনে পুড়ে ছাই। গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এতে শেষ পর্যন্ত ৪৯ টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট অংশ নেয়। পরিস্থিতি ভয়াবহতায় যোগ দেয় বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনীও। এরপর ওই এলাকায় আইনশৃংখলা বজায় রাখতে নিয়োগ করা হয় বিজিপি। এরই মধ্যে সকাল ১১ টার দিকে বঙ্গবাজার লাগোয়া ফায়ার সার্ভিসের অফিস ও তার নিচে থাকা গাড়ি ভেঙ্গে তছনছ করে উচ্ছশৃংখল কিছু মানুষ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বিমান বাহিনীর হেলিকাপ্টার হাতিরঝিল থেকে বিশেষ পাত্রে পানি ভরে উড়িয়ে এনে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। ফায়ার সার্ভিসও পানি সঙ্কটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরের আশ্রয় নেয়। শেষতক প্রায় সাড়ে ৬ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তবে নিভু নিভু আগুন জ্বলছিল আরো প্রায় ৬-৭ ঘন্টা ধরে। এদিকে বঙ্গবাজার এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ধরনের ব্যবসায়ীদের আহাজারিতে। স্বর্বস্ব খুইয়ে মুর্চ্ছা যাচ্ছিলেন তারা। সামনেই ঈদ। সাথে পহেলা বৈশাখও। এর জন্য প্রচুর পরিমাণ মালামাল দোকানে তোলেন তারা। কিন্তু সবকিছু নিমিষে পুড়ে ছাই।  

কদিন পূর্বে গুলিস্তান সংলগ্ন সিদ্দিকবাজারে একটি বহুতল ভবনের নিচে তলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের রেশ কাটতে না কাটতে এবার গুলিস্তানের পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। 

মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্তদের শপিংয়ের পছন্দের এ স্থানটি অবশ্য দীর্ঘদিনের। যা নির্মিত মূলত উপরে টিন ও কাঠ দিয়ে। দেশের অন্যতম এ মার্কেট পাইকারি বাজারও। যেখান থেকে অনেক কাপড় পাইকারি যায় দেশের বিভিন্নস্থানে। করোনার অভিঘাত কাটিয়ে ওঠাই ছিল বড় চ্যালেঞ্চ। এরপর হাটি হাটি পা পা করে এগুতে থাকলেও দেশের অর্থনীতিতে মন্দা ভাবের কারণে সেভাবে বেচা বিক্রি হচ্ছিলনা। এরই মধ্যদিয়ে চলছিল তাদের জীবন। সামনেই পবিত্র মাহে রমজান শেষে ঈদ। একই সঙ্গে পহেলা বৈশাখেরও উৎসব। এ মুহূর্তের বেচা বিক্রি দিয়ে বছরের বড় একটা সময় পার করে যেতেন তারা। এবার তো পুজি সহ সবই শেষ। এ বিপর্যয় থেকে কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন তারা সে দুশ্চিন্তায় নির্বাক ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে ১৭ জন অঅহত হবার খবর পাওয়া গিয়েছে। 

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) 

৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মাইন উদ্দিন বলেন, বঙ্গবাজারের আগুন ১২টা ৩৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে।  আগুন আর ছড়াবে না। তবে পুরোপুরি নির্বাপণে আরও সময় লাগবে। এখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নির্বাপণ ও ডাম্পিংয়ের কাজ করছেন। এর মাঝেও বিকট বিকট শব্দ হচ্ছে ভেতরে। বিমানবাহিনী বিভিন্নস্থান থেকে পানি এনে উপর থেকে আগুন নেভাতে পানি ছাড়েন। এদিকে আগুনে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের আটজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে তিনটি প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছেন, মহাপরিচালক। তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রধান বাধা ছিল উৎসুক জনতা। পানির স্বল্পতা ও বাতাসের কারণেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক অগ্নিকা-ের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, উৎসুক জনতার কারণে কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। তিনি তাঁর নিজের করা একটি ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের দেখিয়ে বলেন, ‘কোন জায়গা দিয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিস কাজ করব। কোথায়, কীভাবে ফায়ার সার্ভিসের লোক কাজ করবে? আমরা তো আপনাদের জন্যই জীবন দিচ্ছি।’

আগুন নেভাতে পানির স্বল্পতার কথা বলেন মহাপরিচালক মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী পানির বাউজার এনে এবং ওয়াসাও পানির বিষয়ে সহায়তা করেছে। আর ঘটনাস্থলে অনেক বাতাস ছিল। বাতাসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আগুন চলে যায়। এর ফলে নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে।

ঢাকা উত্তর মেয়র তাপস 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) চার বছর আগেই বঙ্গবাজার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল বলে জানিয়েছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যালয় নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। মেয়র তাপস বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেট ২০১৯ সালে করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তখন নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সে সময় মার্কেট সমিতি নতুন ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে এবং হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। এতে সিটি করপোরেশনের কিছু করার ছিল না।

এ সময় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ অগ্নিকাণ্ডে ৫ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই দুর্ঘটনা তদারকি করছেন। 

বিদেশী মিডিয়ায় খবর 

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডের খবর চাঞ্চল্যলের সৃষ্টি করেছে। সকাল থেকে টেলিভিশনগুলোতে লাইভ খবর প্রচারতি হয়। অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতেও টানা সংবাদ প্রচার হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বঙ্গবাজারে আগুনের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হয়। রয়টার্স, এএফপি,  আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, হেরাল্ড, আল আরাবিয়া নিউজ, আরব নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমসসহ প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে।

বঙ্গবাজারের আগুন, নরকের সঙ্গে তুলনা

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। বঙ্গবাজারসহ আশেপাসের মার্কেটগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের এই খবর এখন বিশ্ব গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলোর প্রায় সবাইই এই অগ্নিকান্ডের খবর প্রচার করছে। 

বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শিরোনাম করেছে, ‘ঢাকার বিশাল কাপড়ের বাজারে অগ্নিকান্ড মোকাবিলা করছে শত শত দমকলকর্মী’। এতে বলা হয়েছে, অন্তত ৬০০ দমকলকর্মী আগুন থামাতে কাজ করছে। বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও আগুন নেভানোর প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছে। 

মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টও তাদের রিপোর্টে এই আগুনের ভয়াবহতা তুলে ধরেছে। গণমাধ্যমটির হেডলাইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কাপড়ের বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ আগুন। রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি সস্তা কাপড়ের বাজারে ওই আগুন লেগেছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

দুবাইভিত্তিক আল-অ্যারাবিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানীতে বিশাল বাজার গ্রাস করে নিয়েছে আগুন। তারা এই আগুনকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছে।

গণমাধ্যমটি রিপোর্টের শুরুতে বলেছে, ঢাকার একটি জনপ্রিয় পোশাকের বাজার আগুনের কারণে নরকে পরিণত হয়েছে এবং সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করছে শত শত দমকলকর্মী। কেউ হতাহত না হলেও দোকান মালিকরা বলছেন, পুরো বাজার এলাকাটিই কার্যত ছাই হয়ে গেছে। 

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের খবরে আগুন নেভাতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকাকে প্রাধান্য দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে প্রায় ৩০০০ দোকান নিয়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। প্রাথমিকভাবে দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে কাজ শুরু করলেও পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে সামরিক বাহিনীকে সেখানে মোতায়েন করতে হয়। রয়টার্স বঙ্গবাজারকে বাংলাদেশের বিখ্যাত কাপড়ের বাজারের জনপ্রিয় বিক্রয়কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেছে।

শেয়ার করুন