০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:২৯:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১০-২০২২
কথার কথকতা


নিউইয়র্কে যাঁরা সাহিত্যচর্চা করেন, তাঁদের মধ্যে সবাইকেই আমার কাছে নিবেদিতপ্রাণ মনে হয়েছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন যে, সবাইকে আমি চিনি কিনা? হয়তো সবার সাথে পরিচয় হয়নি, হওয়াটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে অনেককেই দেখেছি, তার ভিত্তিতেই আমার এই হ্যাঁ-সূচক মন্তব্য। এর মধ্যে বেশি স্পষ্ট করে আলোচনায় উঠে আসেন কবিগণ। কারণ সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চেয়ে কাব্যজগতে বিচরণের লোক অনেক বেশি। কবিতা যাঁরা ছাপেন, তাঁরা আবার অনেকের ব্যাপারে একটু সঙ্কুচিত থাকেন। সংশ্লিষ্ট কবির লেখার মৌলিকতা নিয়ে তাঁদের অনেককেই সন্দেহ পোষণ করতে শুনি। যাকগে, আমরা ওই নেতিবাচক বিষয়টার দিকে আপাতত নাই-বা গেলাম। নিউইয়র্কের বাংলা ভাষার কবিদের এই নিবেদিতপ্রাণ অবস্থাটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমার একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হলো, গুণী মানুষ বয়সে আমার চেয়ে ছোট হলেও আমি সম্মানের চোখে দেখি এবং সেভাবে কথা বলি। অনেকে এটার মধ্যে কিছুটা অস্বাভাবিকতা খুঁজে পান, একটু বিস্মিতও হন। ওতে অবশ্য খুব বড় ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না।

কবিতা, এর মান, উৎকর্ষ, পরিপক্বতা প্রভৃতি নিয়ে প্রচুর কথা হয়, বাগবিতণ্ডাও হয়, কিন্তু আমি বিষয়টাকে সহজ করে দেখার পক্ষপাতি। লেখার জগতে প্রবেশের বিষয়টিকে কঠিন করে তোলার কোনো মানে হয় না, সহজ করে দিন। অনেকে আপত্তি তুললেও আমি বলি, কবি যা লিখছেন বা বলছেন সেটাই কবিতা আর কবিতা যিনি লিখছেন বা বলছেন তিনিই কবি। তবে হ্যাঁ, আমার এই সহজীকরণ মানসিকতার মধ্যে ছোট্ট একটা শর্ত থাকে, তাহলো প্রকাশের ভাষাটা শুদ্ধ হওয়া। আর ছন্দের ব্যাপারে আধুনিক কালে তো কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। কবির নিজস্ব শ্রুতি প্রক্রিয়া এবং দমের সীমাবদ্ধতা তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে অবশ্যই শৃঙ্খলিত করে দেবে। ছন্দের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া বলতে যা ভাবা হয়, সেটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ মানুষের সর্ববিষয়ক সক্ষমতা একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে আবর্তিত হয়, এর বাইরে চলে যাবার ক্ষমতা মানুষকে দেয়া হয়নি।

এতোটুকু বলাবলির পর আমরা স্পষ্টই দেখছি, কবিতার দ্বার উন্মুক্ত এবং সবাই এই জগতে স্বাগতম। এর মধ্যেও নিউইয়র্কের বাংলা ভাষাভাষী কবিদের মধ্যে একটা বিষয় দেখে আমি অনেকটাই অবাক হয়েছি। ওনাদের মধ্যে বেশিরভাগ কবিই কোথাও কবিতা আবৃত্তি করতে দাঁড়ালে কবিতার শিরোনামের আগে এটি কোন ছন্দে লেখা তা ঘোষণা করেন। এটা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কারণ একটা শিশুর মা ডাক শুরুর সময় আপনি যদি তাকে ভাষার ব্যাকরণ এবং ছন্দ ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, তা যেমন অস্বাভাবিক ও অনুচিত মনে হবে, এ ক্ষেত্রেও তাই। কবিতাটি উপস্থাপনের সময় আপনি যখন ছন্দ ও ব্যাকরণ নিয়ে টানাটানি করেন, তখনই কবিতাটি আধমরা হয়ে যায়। এটি তার আসল কাব্যিক আবেদন নিয়ে শ্রোতার কছে হাজির হতে পারে না। হয়তো প্রশ্ন করবেন, তাহলে কি করতে হবে? আপনি কবিতাটির শিরোনাম বলে আবৃত্তি চালিয়ে যান, বাকিটুকু শ্রোতার কান এবং মেধার হাতে ছেড়ে দিন। কবিতাটি ওর কাব্যবৈশিষ্ট নিয়ে শ্রোতার মধ্যে অনুরণিত হতে থাকুক। অন্য বিষয়গুলো আসবে গবেষকের কাজের সময়। এই মুহূর্তে কবিতাটিকে আপন কাব্যিক মহিমা নিয়ে নিবেদিত হতে দিন।

আজ আরেকটা বিষয় নিয়ে একটু বলবো। সে বিষয়ে বলতে বা লিখতে আমি খুবই সঙ্কোচবোধ করি, তারপরও লিখতে হচ্ছে এজন্য যে, মানুষ তখনই লেখে যখন আর না লিখে পারে না। হয়তো জিজ্ঞেস করবেন, আপনার আবার তেমন কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? বলছি, সংক্ষেপেই বলবো, আপনাদের মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলবো না।

আপনারা অনেকেই একটা বিষয়ে অবগত আছেন যে, এই অধম চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মিডিয়াতে কাজ করছি। কি পেয়েছি, কি পাইনি অথবা কি হারিয়েছি এগুলো আমার কাছের মানুষেরা অনেকেই জানেন। আমি আমার মিডিয়া সম্পৃক্ত জীবনের ব্যাপারে অবশ্যই গর্বিত। কারণ জীবনে কখনো কারো নিউজ ছাপানোর কথা বলে আমি কোনো টাকা বা সুবিধা নেইনি। তবে এ প্রসঙ্গে অনেকেরই মুখোশ উন্মোচনের বিষয় রয়েছে। তাও আমি করতে চাই না। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সম্মানিত হবার বিষয়টি দুই নম্বরি পদ্ধতিতে হয় না। তো আজ যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে চাই এটাও আমি না লিখে থাকতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু অল্প একটু হলেও লিখবো এজন্য যে, বিষয়টি আমাকে ক্রমাগত অবাক করে দিচ্ছে।

দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবন পার হবার কারণে অনেকেই অনুরোধ করেন, তাঁদের পত্রিকার জন্য লিখতে। ওনাদের ভাষ্য হলো, ভালো লেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে, ভালো লেখক গড়ে উঠছে না। আবার যাঁরা টেলিভিশন চালান, তাঁরাও বলেন- ভাইজান বলতে তো অনেকেই চায়, কিন্তু বলা হয় কয়জনের! বক্তব্য নিঃসন্দেহে সত্য, কিন্তু আমার প্রশ্ন এবং বিস্ময় অন্যখানে। সচেতন এই দুটো মহলকেই একটা বিষয়ে খুবই উদাসীন মনে হয়। সেটি কি? হ্যাঁ, বলছি। তার আগে পটভূমিটা তুলে ধরি।

মনে করুন, আপনি ব্রুকলিনে থাকেন। উল্লিখিত কোনো একটা কারণে জ্যাকসন হাইট যাবেন। আপনার নিজস্ব গাড়ি নেই। দু’বার ট্রেন পাল্টে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগিয়ে আপনি যথাস্থানে গেলেন। আপনার যাতায়াত খরচ কখনো পৌনে তিন ডলার করে সাড়ে পাঁচ অথবা পরিস্থিতিতে এগারো ডলার খরচ হলো। আপনি সময়ের দীর্ঘতার কারণে ওখানে একটা সিঙ্গাড়া ও চা খেলে তিন ডলার লাগবে। জ্যাকসন হাইট ছাড়া অন্য এলাকায় দুই ডলার লাগবে। তাহলে আপনি এগারো যোগ তিন সমান সমান চৌদ্দ ডলার খরচ করলেন। ভ্রমণ আরো সহজ হলে সাড়ে পাঁচ যোগ তিন সমান সমান সাড়ে আট ডলার হলো। চা-সিঙ্গাড়া না খেলে সাড়ে পাঁচ ডলার খরচ। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আপনি দেখলেন, আপনার ক্ষেত্রে এ বিষয়টির দিকে সংশ্লিষ্ট কারোই কোনো মনোযোগ নেই। অথচ আপনি বাসায় তিরস্কৃত হচ্ছেন এই কারণে। স্বাভাবিকভাবেই আপনার বাসা থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে এই মর্মে যে, কেন ভূতের ব্যাগার খাটছো?

যা-ই হোক, এ বিষয়টি লিখলাম বলে আপনারা আবার মাইন্ড করে বসবেন না। আমি কিন্তু কারো নাম উল্লেখ করিনি। তো, প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনাদের অনেক সময়তো নিইনি, বিরক্ত হবার মতো কিছু তো লিখিনি। আজকের আলোচিত বিষয়গুলোর যে কোনো সমাধান নেই, পরিস্থিতি কিন্তু তেমন নয়। একটু ঝাঁকুনি দিলে বা একটা উদ্যোগ নিলে এগুলো সমাধান করে ফেলা যায় ইনশাআল্লাহ্। তো বলুন, কোনটা অবলম্বন করবো- ঝাঁকুনি নাকি উদ্যোগ?

শেয়ার করুন