০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৮:২৭:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বিদেশী চাপ ঢাকতে আ.লীগের কৌশল
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
বিদেশী চাপ ঢাকতে আ.লীগের কৌশল


বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশীদের বিশেষ করে পশ্চিমাদের কঠিন চাপ ঢাকতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতেই এমনটা করছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

পশ্চিমাদের প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে সরকার। বিশেষ করে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি সুশাসন, মনবাধিকার নিশ্চিতে মারাত্মক চাপের মুখে আছে। এছাড়া দেশ থেকে বিভিন্ন কায়দার অর্থ প্রাচার করে পশ্চিমা বিশ্বে ধনকুবের বনে যাওয়া প্রভাবশালী বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারেও চাপ রয়েছেন সরকারের ওপর। 

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কুলকিনারা নেই..

২০২১ সালের শেষের দিকে গুরতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িতের অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞা যেনো প্রত্যাহার করা হয় তার জন্য হেন দেন দরবার নেই যে সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। ক্ষমতাসীরা এতে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কিন্তু দেশে এব্যাপারে কারো মধ্যে যেনো কোনো হতাশা কাজ না করে সেজন্য সরকারের শীর্ষ থেকে নানান ধরনের আশ্বাসমূলক দিয়ে বক্তব্য রাখা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র‌্যাব এবং এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ’ঘাবড়ানোর কিছু নেই’।

নয়া খড়গ ভিসানীতি

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা নিয়ে যখন সরকার ঘর্মাক্ত ঠিক তখনই মাথার ওপর এসে পড়ে মার্কিন নয়া ভিসানীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নয়া ভিসানীতি আরোপ করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেনো ঘি ঢেলে দেয়া হয়। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে এক নতুন ভিসানীতির কথা ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয় এই নীতির আওতায় যেকোনো বাংলাদেশি ব্যাক্তি যদি দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এ রকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ৯ আগস্ট বুধবার এ কথা ঘোষণা করেন। ব্লিংকেন জানান, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।  এনিয়ে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, প্রশাসনসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের আলোচনার ঝড় বয়ে যায়, যা এখনো চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরে এমনটাই তুলে ধরা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসানীতি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে খুব আলোচনা হচ্ছে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারিতে উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তার চোখে-মুখে উদ্বেগের ছাপ রয়েছে। খবরে আরো বলা হয় অনেক কর্মকর্তার সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন এবং সেখানে যাদের সহায়-সম্পদ ও যাতায়াত রয়েছে, এমন কর্মকর্তাই ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারিতে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। এর মধ্যে উঠে আসে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। এসব বিষয়গুলি নিয়েই সরকারের বিভিন্ন মহল দুশ্চিন্তায়। 

আলোচনা ঝড় ঠেকাতে কে কি বলছেন

এদিকে এসব আলোচনার ঝড়কে মাটি চাপা দিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শরিকরাও থেমে নেই। কেউ বলছেন আমেরিকা চায় সেন্ট মার্টিন। কেউ বলছেন এখানে সামরিক ঘাঁটি করতে চায়। কেউ বলছেন, পশ্চিমারা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। 

শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চায় ক্ষমতাসীনরা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন গত১৪ আগস্ট সোমবার যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক। তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। অন্যদিকে এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল অক্টোবরে বাংলাদেশে আসবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেস সদস্য এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। মার্কিন দুই রাজনীতিক বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সম্পর্কে জানা-বোঝার চেষ্টা করবেন বলে শোনা যায়। গণমাধ্যমে তিনি যা বলেছেন তার সার সংক্ষেপ একিই। তারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। আর পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এটা বলা যায় যে পশ্চিমারা বাংলাদেশে একটি মানবাধিকার ও সুশাসন চায়। অতীতের তুলনায় এবার জোরালোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরব হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের মতো দেশও আগের মতো সরাসরি কিছু বলেনি। বরং ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলেছে যার সার কথাও অনেকটা পশ্চিমাদেরই মতো। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সে দেশের জনগণ নির্ধারণ করবেন। ভারত আশা করে, শান্তিপূর্ণভাবে এই নির্বাচন পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে। কিন্তু এতো সব বক্তব্য পাশ কেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তারপরেও বলে যাচ্ছে পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এমন কি অতি সম্প্রতি বিদেশীরা বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না বলে মন্তব্য করে বসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, তারা আপনার (সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে) এখানে অশান্তি চায়। অশান্তি হলে দেশ যদি দুর্বল হয়, তাদের অনেক সুবিধা। তাই তারা দেশকে দুর্বল করতে চায়। তাদের ওই ভেল্কিতে অবগাহন করবেন না। দেশের উন্নয়ন দেশের লোক, সরকার করবে। প্রশ্ন হচ্ছে দিনের পর দিন যখন বলা হচ্ছে পশ্চিমারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। চায় মানবাধিকার ও সুশাসন। ঠিক এমন খোলামেলা চাওয়ার বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লাগের শীর্ষ থেকে নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাহলে কেনো এমন বক্তব্য দিচ্ছেন? রাজনৈতিব পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ক্ষমতাসীনরা আসলে তাদের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসন ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের মনোবল চাঙ্গার পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই বাংলাদেশ সর্ম্পকে পশ্চিমাদের সাম্প্রতিক আগ্রহকে ভিন্নভাবে ব্যাখা দিচ্ছেন। আর এজন্য জোড় গলায় বলছেন ওদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।

শেষ কথা

সরকারের একেক জন মন্ত্রী নেতা একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বক্তব্যে বিষয়বস্তু হচ্ছে একটি স্থিতিশীল দেশকে শুধু অস্থির করে তুলতে দেশের ভেতরে বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে পশ্চিমারা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেনো কি কারণে বাংলাদেশে এমন তৎপরতা বাড়িয়েছে। কেনো যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেস সদস্য এখন ঢাকায়। কেনো গত সপ্তাহে ঢাকা সফর করে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্র্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়কারী। গত সপ্তাহে দুর্নীতি দমন বিষয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা আসেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়কারী রিচার্ড ন্যাপিউ। কেনো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিলেন। আবার কেনো অক্টোবরে আসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল অক্টোবরে বাংলাদেশে আসবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।

শেয়ার করুন