০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩২:০৯ অপরাহ্ন


কার ইশারায় বেড়ে গেলো আ.লীগের ঝটিকা মিছিল?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১০-২০২৫
কার ইশারায় বেড়ে গেলো আ.লীগের ঝটিকা মিছিল? গত ২০ এপ্রিল খুলনায় আওয়ামী লীগের মিছিল। ছবি- সংগৃহীত


হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল। আর এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ক্ষোভ, নিন্দা ছড়ানোরা মাত্রাও বেড়ে গেছে। কিন্তু কেনো? কেনো এতো অল্প সময়ে দলটি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠছে? কার বা কাদের ইন্দন এর পেছনে কাজ করছে? রাজনৈতিক অঙ্গনে এনিয়ে নানান ধরনের বিশ্লেষণ। তবে এমন করে তড়িঘড়ি ক্ষমতা ফিরে পেতে মাঠে নামা রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন রহস্যের সৃষ্টি করেছে, তেমনি এনিয়ে নানা ক্ষেত্রে দলটির বোকামিও লক্ষ্যণীয়। একিই সাথে দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিস্থিতি আসা নিয়ে নানান ধরনের সংশয় কাজ করছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে চলতি বছরের গত মে মাসে। এনিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া ।

ঝটিকা মিছিলের মাত্রা বেড়ে গেছে

কিন্তু কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রায়ই দেশের আনাচে কানাচে, জেলা শহরে এমনকি রাতেও ঝটিকা মিছিল বের করছেন। এবং এর মাত্রা সেপ্টেম্বর মাসে অনেক বেশিই মাত্রায় লক্ষ্য করা গেছে। আর এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। এমনকি কি বড়ো ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আ.লীগের নেতাকর্মীরা এসব ঝটিকা মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। বলা যায় সেপ্টেম্বরে ঝটিকা মিছিলের মাত্রা বেড়েই চলেছে । সর্বশেষ রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করার সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১৪টি ককটেল ও ৭টি ব্যানার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে। 

দেশের বাইরে উগ্র হয়ে উঠছে নেতাকর্মীরা

এদিকে এ-মাসে দেশের বাইরেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ সক্রিয় হতে দেখা গেছে। এর মাত্রা দেশের বাইরেই ছড়িয়ে পড়েছে। সে-টা ঝটিকা মিছিল না হলেও রাজনৈতিক কর্মসূচিরও অংশ হিসাবে সভা সমাবেশ। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরে তা-র সফরসঙ্গীদের একজনকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনালে অবতরণ করে। এ সময় টার্মিনালের বাইরের পার্কিং লটে প্রচুর সংখ্যক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছুঁড়ে মারে। 

কিন্তু কেনো?

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এমন ঝটিকা মিছিল নিয়ে বেশ তোলপাড় বইছে। কেনো এই ঝকিটা মিছিলের মাত্র বেড়ে গেছে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। এনিয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের এই ঝটিকা মিছিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব নিয়ে বিন্তর আলোচনা হয়েছে। 

জামিন পেয়ে যাচ্ছে দ্রুত

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় জানানো হয় যে, গত বছর ৫ আগস্টের পর রাজধানীতে যত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশ জামিন পেয়েছেন। ঢাকার বাইরে এই সংখ্যা ৬১ শতাংশ। কারো কারো মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের একধরনের উদারতায় বিচার বিভাগে আগের মতো হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। একারণে দ্রুত জামিন পেয়ে যাওয়ায় আ’লীগের নেতাকর্মীরা সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে বলে কারো ধারণা। ওই বৈঠকে এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর মামলা দিচ্ছে। ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অনেককে গ্রেপ্তার করছে। কাউকে কাউকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপর তারা কারাগারে যাচ্ছেন। 

এটা আরও বাড়বে

এদিকে একটি সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয় আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই ধরনের ঝটিকা মিছিল আরও বাড়বে। তাই কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো যায়, এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই বৈঠকে। এর পাশাপাশি ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা কীভাবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে তারা জামিন পাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখার কথা বলা হয় ওই মিটিং। কিন্তু বৈঠকের বাইরেও খবর হচ্ছে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেয়াদের ইদানিং আরও উৎসাহ বা তেজ আরও বেড়েছে। কারণ গত বছর ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অল্প কিছুদিন বেশ তটস্থ ছিল। কখন তাদের ওপর হামলা মামলা হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি দিনে দিনে অন্যরকম হয়ে উঠছে। কেননা কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ঝকিটা মিছিল বা তাদের কার্যক্রমে সর্বস্তরের জনগণ প্রতিহত বা বাধা কিংবা ধাওয়া দিচ্ছে না, বরং অনেক স্পটে দেখা যায় জনগণ মৃদু সম্মতি, আবার কোথাও প্রকাশ্যেই সমর্থন দিচ্ছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। একারণেও ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী আ.লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে এাকধরনের সাহস বেড়ে গেছে। কিংবা বা তাদের ধারণা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে, জনগণ আ.লীগকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়। 

আসল কারণ কি, কারা এর নেপথ্যে?

কারো কারো মতে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশের ভিতরে ঝটিকা মিছিলের মাত্র বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড়ো ধরনের কারণ হচ্ছে ভারত ‘না’ ভূমিকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের থিংক ট্যাঙ্ক বলে পরিচিত মহল দেশটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা সভা হচ্ছে। এগুলো দৃশ্যত বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোগ হলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এর পেছনে ভারত সরকারের নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে। তাদের দেশের ভেতরে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের বিজ্ঞজনদের বৈঠক আলোচনায় খোদ ভারত সরকারের মনোভাবই ফুটে উঠছে ওই আয়োজনের মাধ্যমে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বৈঠকে ফুটে উঠেছে যে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তনকে যেনো ভারত সরকার মেনে নিয়ে সামনের দিকে কাজ কাজ করে। এধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারো কারো মতে, এটা আসলে পক্ষান্তরে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সরকারের-ই মনোভাব যা একটু কৌশলে বেসরকারি আয়োজকদের মোড়কে তা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। 

ভারতে কিছু বৈঠক মোড় ঘুরিয়ে দেয় ঝটিকা মিছিলকে

সম্প্রতি দৃশ্যত বেসরকারি মোড়কে ভারতে আরও কয়েকটি বৈঠক হয়ে যায়। এমন বৈঠকের খবর দিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে এখন যে সব চিন্তাভাবনা শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম। এতে দেখা যায় যে, আলোচকদের একটি বড়ো অংশই একটি বিষয় স্থির হয়েছে। তা-হলো বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে- এবং পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে তাদের নৌকা প্রতীকে লড়তে পারবে, এমন কোনো সম্ভাবনাই এ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ওই আলোচনা সভায় ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় আমলা ও প্রসার ভারতী বোর্ডের প্রাক্তন সিইও একজন আলোচক দেশটির সাবেক শীর্ষস্থানীয় আমলা ও প্রসার ভারতী বোর্ডের প্রাক্তন সিইও জহর সরকার মনে করেন, এই মুহূর্তে কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের নির্বাচনে কী ফলাফল হয়, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করা। এছাড়াও ওই বৈঠকে আলোচকদের আরেকটি বিষয়ে স্থির হতে দেখা যায় যে, ভারতের অভিপ্রায় আওয়ামী লীগ কোনো না কোনো আকারে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনেও থাকুক, সে দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক শক্তিটি ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাক। তবে একথা তুলে এটা-ও ওই বৈঠকে বলা হয় যে, আজকের বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ভাল যোগাযোগ আছে, দিল্লিতে এমন কেউ কেউ আবার মনে করছেন বাস্তবে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে!

এদিকে ভারতে থিংকট্যাঙ্কদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও দীর্ঘদিনের বাংলাদেশ গবেষক শ্রীরাধা দত্তের বাংলাদেশে সম্প্রতি তার সরজমিনে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে বিবিসিকে শ্রীরাধা দত্তে জানান যে, সদ্যই তিনি ঢাকা ঘুরে এসেছেন, সেই সফরে তিনি দেখা করেছেন জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি-সহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। তার সে-ই পর্যবেক্ষণের চিত্র ড: দত্ত বিবিসিকে জানান। শ্রীরাধা দত্ত জানান, ওরা বলছে আমরা আওয়ামী লীগকে কী করে আসতে দেব? যাদের জন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রাণ দিয়েছে ... এখনো তো কত হাজার ছেলেমেয়ে বুলেটের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে ... তাদেরকে আমরা কী জবাব দেব? এগুলো তো আওয়ামী লীগের শাসনামলেই হয়েছে, শেখ হাসিনা এগুলো করেছে। তার পলিটিক্যাল পার্টিকে আমরা আবার এক্ষুনি ডেকে নেব? এটা কোনো কথা? এই চরম আবেগের ইস্যুটার নিষ্পত্তি বা ’ক্লোজার’ হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সম্ভাবনা দেখছেন না বলেই শ্রীরাধা দত্ত মন্তব্য করেন।

আরও কিছু খবর

এদিকে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের হাসিনার ফেরা এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ-শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয় কোনো প্রস্তাবেই সায় দিচ্ছেন না ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলা হয় তার সামনে দুটো প্রস্তাব দেওয়া হয়। এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আপনাকে নিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশের মানুষ আপনার বিপক্ষে চলে গেছে। যেমনটা হয়েছে ভারতের বেলায়। গণহত্যা চালানোর দায় আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। আপনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। যা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফয়সালা হয়ে যাবে। যে মামলায় আপনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। দালিলিক প্রমাণসহ একাধিক অভিযোগে আপনি দন্ডপ্রাপ্ত হতে পারেন। এই অবস্থায় আপনার দেশে ফেরা খুব কঠিন। এছাড়া ওই রির্পোটে শেখ হাসিনাকে আরেকটি প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানানো হয়। প্রস্তাবটি হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে বলা হয়েছে যে তিনি অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন। তাতে করে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে।

এ কারণেই কি ঝটিকা মিছিল বেড়ে গেছে? নেপথ্যে কে

উপরের এসব খবরের বিষয়ে আমলে নিয়ে বাংলাদেশে ও বিদেশে অবস্থান করছেন এমন আওয়ামী লীগ নেতারর পাশাপাশি দলটির নেতৃত্বে ১৪ দলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তাদের কয়েকজনের সাথে দেশ প্রতিনিধির একান্তে কথা হয়। তাদের বক্তব্য হচ্ছে ভারত যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ঝক্কি ঝামেলা আছে তা স্পষ্ট। ধীরে ধীরে সেখানেও শেখ হাসিনার অবস্থান করা নিয়ে কটুক্তি বাড়ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক ইমেজ ও তার প্রভাব সম্পর্কেও ভারত ভালো জ্ঞান রাখে। তবে ভারতীয় থিংকট্যাঙ্ক এসবকে মূল্যায়িত করলেও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোটেই তা গ্রাহ্য করেন না বলে আওয়ামী লীগ নেতার পাশাপাশি দলটির নেতৃত্বে ১৪ দলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তাদের কয়েকজন দেশ প্রতিনিধিতে জানান। 

তাদের মতে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে শেখ হাসিনা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের বিভিন্ন ধরনের অনুরোধ অভিপ্রায় তিনি একধরনের অগ্রাহ্য করতেন। এনিয়ে ভারতের মোদী সরকার বেশ বিব্রকর পরিস্থিতিতে পড়তো বলে তারা জানান। এসব নেতার মতে, ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ভারতে শেখ হাসিনা প্রায়শই বোঝাতে সক্ষম হতো যে ‘বাংলাদেশ তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে,কেউ কিছুই করতে পারবে না’। আওয়ামী লীগের এসব নেতার মতে, তাদের ধারণা এখন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করেও শেখ হাসিনা একিই আচরণ করছেন, তার মধ্যে একটা ইগো কাজ করছে। শেখ হাসিনা ভারতীয়দের বোঝাতে চান যে তাদের সমর্থন থাকলে বাংলাদেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী শেখ হাসিনার ডাকে মাঠে নামবে। আর এতে করেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পতন হবে। 

কারণ শেখ হাসিনার মতে, বাংলাদেশের জনগণ এখন তাকেই চায়। ওই নেতাদের মতে, শেখ হাসিনা ভারতকে বোঝানোর জন্য বাংলাদেশসহ বহি:বিশ্বে আওয়ামী লীগের নেতাদের ঝাপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছেন। যার কারণে তারা বাংলাদেশে ঝটিকা মিছিলের মাত্রা বাড়িয়েছে, যেনো অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান নড়বড়ে করে দেওয়া যায়। এতে করে তার আশ্রয়দাতা ভারত সরকারকে বোঝাতে পারবে যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার জন্য জনগণ মাঠে নেমেছে, আরও নামবে। কারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখা চায়। ওইসব নেতাদের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঝটিকা মিছিল বেড়ে যাওয়ার পেছনে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রবল ইচ্ছায় এমন হচ্ছে। তা-ই ইগো কাজ করছে এধরণের ঝটিকা মিছিল করেই ইউনুস সরকারের পতন ঘটে যাবে।

শেয়ার করুন