২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৪:২৬:১৪ পূর্বাহ্ন


ঢাকা যাচ্ছেন ডোনাল্ড লু ও বিনয়
মে’তে বিএনপি’র কর্মসূচিতে সরকারের কঠোর নজরদারি নেপথ্যে..
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
মে’তে বিএনপি’র কর্মসূচিতে সরকারের কঠোর নজরদারি নেপথ্যে..


চলতি মে মাসে রাজধানীতে টানা দু’টি কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন জনগণের মধ্যে নানান জল্পনা-কল্পনা দেখা দিয়েছে। লিফলেট কর্মসূচি ছেড়ে বিএনপি মাঠ কাঁপানোর কর্মসূচিতে যাওয়ার মত পদক্ষেপ শুরু করেছে? না-কি এর পেছনে আরো অনেক কারণ আছে তা নিয়ে কপালে ভাঁজ ক্ষমতাসীনদের। আগামী ১০ মে শুক্র ও ১১ মে শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবীসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে এমন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। ১০ মে শুক্রবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এবং ১১ মে শনিবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের মাথাব্যাথা

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ‘ডামি’ আখ্যা দিয়ে তা বর্জনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের বেলাতে এটি করেছে বিএনপি। এখনো সেই ধরনের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। গত ৭ মে মঙ্গলবারও রাজধানীর বনানী এলাকায় মহিলা দলের উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে এই লিফলেট কর্মসূচির ফাঁকে আগামী শুক্র ও শনিবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বিএনপি। কিন্তু কেনো? সমাবেশের কর্মসূচি সরকারকে বেশ কয়েকটি কারণে ভাবিয়ে তুলছে। কারণে সামনে দেশে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ও ভূ-রাজনৈতিক ইভেন্ট আছে। 

গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ও ভূ-রাজনৈতিক ইভেন্ট কি?

এখন দেখা যাক গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট কি। নিচে দু-একটি তুলে ধরা হলো। এছাড়া রয়েছে পদ্মার আড়ালে রয়েছে অনেক কিছু। 

চীন-বাংলাদেশ মহড়া

মে মাসে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য যৌথ সামরিক মহড়ার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই মহড়া হওয়ার খবর দিয়ে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি খবর। চীনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) একটি কন্টিনজেন্ট যৌথ মহড়ায় যোগ দিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে যাবে বলে ধরে নেয়া হয়েছিল। আর এমন খবরে ভারতের পক্ষ থেকে মন্তব্যও করা হয়েছে। দিল্লিতে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, প্রতিবেশী দেশ কিংবা অন্যত্র এ ধরনের মহড়ার ওপর ভারত সব সময় দৃষ্টি রেখে চলে। তবে এই মহড়াটি এমাসে আদৌও হচ্ছে কি-না সেব্যাপারে সন্দিহান অনেকে। কিন্তু এনিয়ে একটা কঠিন আলোচনা হয়ে গেছে বলে অনেকের ধারণা। হয়েছে পানি অনেক ঘোলা। 

আসছেন ডোনাল্ড লু

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু মে মাসের মাঝামাঝি ঢাকা সফরে আসছেন। বলা হয়ে থাকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তাানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়টি দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ফলে বাংলাদেশে এসে এই মে মাসেই তিনি তি করবেন তা নিয়ে অনেকেরই উৎসুক্য। 

বুধবার আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা ৮ মে বুধবার ঢাকায় আসছেন। বলা হচ্ছে বছরের মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতেই তিনি আসছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমেও মে’র প্রথম সপ্তাহে বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফরের বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে। এর আগে ২০ এপ্রিল ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের কথা থাকলেও সেটা শেষ সময়ে স্থগিত করা হয়। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঠানো দিল্লি সফরের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেবেন। ওইদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এমন সময়ে কী চায় বিএনপি

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু মে মাসের মাঝামাঝি ঢাকা সফরে আসছেন। অন্যদিকে এপ্রিলে আসার কথা থাকলেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা ৮ মে বুধবার ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য যৌথ সামরিক মহড়ার হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল সেটিও চলতি মাসে। এসব কারণে রাজনৈতিক মহলে নানান ধরনের প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। কারণ এখনো চলমান আছে বাংলাদেশে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরিতে পশ্চিমা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা। আর ঠিক একিই সাথে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বুধবার ঢাকায় আসছেন। বিষয়টি মোটেও কাকতলীয় না বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। হয়তবা এখানে ভূ-রাজনৈতিক একটি বিষয় জড়িয়ে আছে। তবে এর পাশাপাশিও আছে বাংলাদেশে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরিতে নতুন করে তৎপরতা। কেননা সারা বিশ্বের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট-২০২৩ প্রকাশ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি যে বিশেষ ব্রিফিং হয়েছিল তাতে বলা হয় সরকার এবং শাসকদের দ্বারা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন সহজতর করতে সহায়তা করতে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উপ-সহকারী সচিব ও ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট এটা একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন।

কারো মতে, এসব কারণে বিএনপি চায় এমাসেই তাদের অহিংস আন্দোলনে কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিক বা না বলুক। এর পাশাপাশি বিএনপি ভারতকেও তাদের মাঠের শক্তি দেখাতে চায়। বোঝাতে চায় বিএনপি এখনো মাঠ কাঁপাতে পারে। আর এত্তোসব কারণে সরকারেরও কড়া নজর বিএনপি’র দিকে। যে কারণে দেখা যাচ্ছে বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ মুক্ত হলেও অনেককে নতুনভাবে কারাগারে যেতে হচ্ছে। কেননা ক্ষমতাসীনরা ধারণা করছে বিএনপি কোনো একটি বিশেষ সময় কাল খুঁজছে। আর সে সময়টি হয়তবা এই ’মে’। একারণে সরকার তার পক্ষ থেকে নানান কৌশল বজায় রেখেছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে আছে। কারণ, আরব বসন্তের ছোঁয়া আটলান্টিকের ওপারেও লেগেছে। আবার বলা হচ্ছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে থাকলে তারপরেও কেনো নজরদারি সরকারের? এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে।

শেয়ার করুন