২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৫:৩১:০৭ পূর্বাহ্ন


প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে উপজেলা নির্বাচনও
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে উপজেলা নির্বাচনও


বিএনপি’র বড়ো ধরনের প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ নেই উপজেলা নির্বাচনে। শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ-হামলা আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদেরই ভোটকেন্দ্র আনা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড বেশি চাপাচাপি করতে ঠিক এ মুহূর্তে নারাজ। তাদের মতে, সারা দেশে এ মুহূর্তে দলের কারো বিরুদ্ধে এ্যাকশনে গেলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতি আরো কমে যেতে পারে, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পারতে পারে পুরো নির্বাচন। 

সংঘাত থামছে না উপজেলায়

বুধবার (৮ মে) দেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ১৪০টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে। এরমধ্যে ২২টি উপজেলায় ইভিএমে হবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পযন্ত ভোট চলবে। কিন্তু একের পর এক উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে যেন সংঘাত সহিংসতা থামতেই চাইছে না। প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ হয়েছে। গত ৬ মে সোমবার মধ্য রাতে শেষ হবে প্রথম ধাপের নির্বাচনি প্রচারণা। নির্বাচনি সংঘর্ষ-হামলার ঘটনা চলছেই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় নির্বাচনি প্রচারের সময় এক প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। রাজশাহীর বাগমারা ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বাকিরা আহত হন। এছাড়া পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেখ রাসেল স্মৃতি পাঠাগারে আগুন দেওয়া হয়েছে। এদিকে ভোলায় ৩ মে শুক্রবার রাতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংঘর্যের ঘটনায় পাল্টা পাল্টি মামলা হয়েছে। ৬ মে সোমবার পর্যন্ত খবরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের রির্পোটে দেখা গেলো নাটোর সদর উপজেলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণাকালে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোস্তারুল ইসলাম আলমের দুজন কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা হয়েছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় পাল্টা-পাল্টি হামলার অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী। উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শফিক খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজীকে (আনারস) আবারও শোকজ করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের (দোয়াত কলম) অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ মে শনিবার রাতে তাকে শোকজ করা হয় বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান।

আশ্বাসে কি কাজ হবে?

এদিকে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যা বিভিন্ন গণমাঘধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সময় তিনি আরও জানান, মন্ত্রীরা সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ায় নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। এমপির ভাই বা আত্মীয় নির্বাচন করবে কি না এ নিয়ে আইনে কোনো ব্যত্যয় নেই। নির্বাচন কমিশন দেখবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় কি না। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে। যে অভিযোগ আসছে সেগুলো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে এলাকায় এমপিদের পাশাপাশি যারা দাপুটে নেতা আছে সে-সব আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কে দেবে? একই দল, এলাকায় থেকে এমন দাপুটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসি কতটা সক্ষম তাও আলোচিত হচ্ছে। এনিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। 

শেষ কথা

ভোট বর্জনে নানামুখী কৌশল নেয়া হয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র পক্ষ থেকে। ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে ৫ লাখ লিফলেট বিতরণ, জেলা-উপজেলায় কর্মিসভা করে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানা গেছে। কিন্তু বিএনপি এধরনের প্রচার-প্রচারণার চেয়ে সবচেয়ে বড়ো বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের মধ্যে সংর্ঘষ আর হানাহানির কারণে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষ-হামলা দিনের পর দিন বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন উপজেলায় দলের সমর্থকরাই পালিয়ে বেরাচ্ছে নয়তো দূরে সরে আছে। এসব তথ্য মিলেছে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন এলকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে। অথচ ক্ষমতাসীন দলটির হাই কমান্ড দেখতে উপজেলায় রেকর্ড সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি। এজন্য ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে গুরুত্ব দিতে চান প্রচার-প্রচারণায়। হুঙ্কার ছাড়া হচ্ছে এমপি-মন্ত্রীসহ দলীয় নেতারা নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করলে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনা হবে। সর্বশেষ খবরে বলা হয় যে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতা নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, তাদের কোনো না কোনোভাবে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আর এতে করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আমলে। এতে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার ব্যাপারে পশ্চিমাদের উদ্বেগে আরো ঘি ঢেলে দেয়া হলো। এখন দেখা যাক পরপর দু’টি (৭ জানুয়ারি ও বর্তমানে চলমান উপজেলা নির্বাচন) নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হলে তা নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা আপত্তি দেখা দেবে। আর সেটা কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার বিষয়। কেননা এমটাই টের পেয়ে যে কোনো মূল্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে বলে ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

শেয়ার করুন