৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:০৯:২৯ অপরাহ্ন


ডোনাল্ড লুতে রাজনীতির মাঠে ফের উত্তাপ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২৪
ডোনাল্ড লুতে রাজনীতির মাঠে ফের উত্তাপ ডোনাল্ড লু/ফাইল ছবি


আবার ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর। কিন্তু কেন? কী উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এ পররাষ্ট্র সহকারীর বাংলাদেশে আগমন-এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা তুঙ্গে। ৭ জানুয়ারি ভোট শেষ হয়ে গেছে, এখনো ছয় মাস পেরোয়নি। তাহলে এখন আবার কি উদ্দেশ্য? একটা নির্বাচিত সরকার এখন ক্ষমতায়। ভোটটা যেভাবেই হোক, নির্বাচন হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই এ ভোটকে সাপোর্ট করে নতুন সরকারকে অভিনন্দন এবং নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিনন্দন না জানালেও কাজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন ওই দেশের প্রেসিডেন্ট। এমন প্রেক্ষাপটে কী গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অবশিষ্ট-এ আলোচনায় চায়ের কাপে ঝড়। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বচনের আগে মার্কিনিদের ভূমিকা 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কী ভূমিকাতে ছিল, এটা এতো সকালে ভুলে যাওয়ার নয়। বিশেষ করে মার্কিন ফরেন মিনিস্টার ব্লিঙ্কেন, পিটার হাস, ডোনাল্ড লু, উজরা জেয়ার নামগুলো বাংলাদেশের মানুষের ঠোঁটের মাথায়। এদের ভূমিকার কথা মনে রাখার মতোই ছিল। কারণ তারা চেয়েছিল বাংলাদেশে যেন অনুষ্ঠিত হয় সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ প্রেক্ষাপট সামনে রেখে ডোনাল্ড লু গিয়েছেন বার কয়েক। প্রতিবারই উত্তাপ ছড়িয়েছে তার ওই আগমন। কারণটাও অজানা নয়। পাকিস্তানের ব্যাপক জনপ্রিয় ও নির্বাচিত ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর ইমরানের মন্তব্য ছিল তার ক্ষমতাচ্যুতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, যা বাস্তবায়ন করেছিলেন ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশে এ বাক্যটা ব্যাপক প্রচলন ঘটে সে সময়। কিন্তু নির্বাচনে এর ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি। বরং অজ্ঞাত কারণে সব চুপসে যাওয়ার পর একপেশে এক নির্বাচন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, তা-ও নিজ দলের ডামি বিরোধী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে। পরে ডোনাল্ড লু যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে প্রকারান্তে বলেছিলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক জোনে বাংলাদেশকে তারা ভারতের চোখে দেখছে। ওই এক কথাতে বাকিটা স্পষ্ট হয়ে যায় কি, কীভাবে, কেন হয়েছিল ওইসব। 

এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের মনে একটা নেগেটিভ ধারণা জন্মেছে। অন্তত এটা বলতে শোনা যায়, মার্কিনিরা আসলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য কাঁদছে বা লড়াই করছে না, যা করছে এটা তাদের স্বার্থে। তাদের স্বার্থরক্ষা করতে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকু করছে তারা। ওই চিন্তাভাবনা থেকে সাধারণ মানুষকে সরানো যাচ্ছে না। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বহুবার বলেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে মার্কিনিদের এতো কান্না কীসে। তাদের নিজেদের দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার তারা কতটুকু রক্ষা করে? 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর মার্কিনিদের ভূমিকা দেখার বাসনা ছিল অনেকেরই। কিন্তু তাতে তাদের প্রতিক্রিয়া-ধরি মাছ না ছুঁই পানি। বলেছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চিঠি লিখেছেন। প্রশ্নটা এখানেই দাঁড়িয়ে গেছে যে, যদি নির্বাচন ইস্যুটাকে তারা এতোটা হালকাভাবে নিয়েই থাকে, তাহলে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা-নীতি প্রণয়ন, মানবাধিকার প্রশ্নে স্যাংশন এতো কিছুর পেছনে আসলে কী। মানবাধিকার নিয়ে, শ্রম অধিকার নিয়ে, জলবায়ু নিয়ে এখনো তাদের বক্তব্য একই। বাংলাদেশের মানুষ ভাবছে এগুলো গতানুগতিক! 

ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর 

জাতীয় নির্বাচনের পর এটাই ডোনাল্ড লুর প্রথম বাংলাদেশ সফর। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সফরে এ মার্কিন সহকারী। আসলে এটাকে অতিরিক্ত কিছু ভাবতে কেউ চায় না। আবার কেউ কেউ চায়ও। কারণ লু এ অঞ্চলে সরাসরি বাংলাদেশে আসছে বিষয়টি এমন না। ভারত, শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি বাংলাদেশেও তার সফর করার পরিকল্পনা। যতদূর জানা গেছে, ১৪ ও ১৫ মে বাংলাদেশে তিনি সফর করবেন। ইন্দো-প্যাসিফিক জোনে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পরিকল্পনা, সেগুলোর বাস্তবায়ন বা কর্মপদ্ধতি এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি আসছেন, এমনটাই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এর আড়ালে কি কিছু আছে? 

ইন্দো-প্যাসিফিক মুখ্য

বিশ্বের এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না যে, বিমানে নিজস্ব তেল পুড়িয়ে অন্য দেশে উড়ে যাবে স্বার্থের বাইরে কিছু করতে! এটা এখন আর বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। ভারত মহান স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছিল বলে বহু সুবিধা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন যে, ভারতকে যা দেওয়া হয়েছে তা আগামী ৫০ বছরেও আশা করতে পারতো না তারা। ফলে স্বার্থ উদ্ধারের মিছিলে সবাই। ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। সামান্য সহায়তা চাইলেও তার হাজারো ব্যাখ্যা হয়। অনেক অবাঞ্ছিত কথাবার্তাও বাংলাদেশের মানুষকে হজম করতে হয়। 

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব একটা রোডম্যাপ ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে মন গলছে না বড়দের। তাদের প্রত্যাশা তাদের মতো করে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্রতম এক দেশ। জনবহুল দেশ। বহুকিছুর সহায়তার প্রয়োজন প্রতিবেশীদের থেকে। নগদ অর্থ সহায়তা, উন্নয়ন সহযোগিতা, জনগণের চাহিদা মেটাতে পণ্য আমদানি সে অনেক কিছু। ফলে কাউকে বেজার করে কাউকে খুশি করার পলিসিটা নিতে পারা যায় না। এরপরও শক্তিধরদের প্রতিযোগিতার দৌড়ে কোনো প্রতিযোগীর সঙ্গী হওয়া অবাস্তব। কিন্তু ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্ররা যেমন এ ক্ষুদ্র দেশটিকে কাছে পেতে চায় তেমনি চীন, রাশিয়া ও তাদের মিত্ররাও বাংলাদেশকে কাছে চায়। এমন প্রেক্ষাপট খুবই বিব্রতকর। কিন্তু এ চাওয়া ও চাহনি প্রতিনিয়ত। 

গণতন্ত্র ও মানবিধাকার প্রসঙ্গ নিয়ে বাংলাদেশকে কাঠগড়ায় তোলারাও এ তালিকায় রয়েছে। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে কোণঠাসাও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। কে কী চাচ্ছে, সেটা কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে এটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমস্যা অন্যখানেও। বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী মায়ানমারেও তুমুল বিশৃঙ্খল অবস্থা। অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ এতোটাই যে, এটা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেখানেও বাইরের দেশের খেলা আছে। ওই অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ-বিদ্রোহের সূচনার দিকে গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন একটি উচ্চ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। নিরাপত্তাবিষয়ক সে প্রতিনিধিদের সফরেও নানা ইস্যু ছিল। এছাড়াও চীনা প্রতিনিধি, ভারতীয়দের আসা যাওয়া এটা তো আছেই। 

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ বা ইন্দো-প্যাসিফিক জোনে ভূরাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে সেটা এখন বলাই যায়। বাংলাদেশ বরাবরের মতোই এ জোনে নিরপেক্ষ ভূমিকায়। শেখ হাসিনা বার কয়েক বলছেন যে, বাংলাদেশ কাউকে আক্রমণ করতে যাবে না। বাংলাদেশের মাটি কাউকে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করতেও দেওয়া হবে না। ঠিক এ কথাটা শুধুই যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঠিক তা নয়। এ কথা বাংলাদেশের ১৮ কোটি নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষের মনের কথা। বাংলাদেশ সর্বত্রই শান্তি প্রত্যাশা করে আসছে, ভবিষ্যতেও করবে। এরপও কিছুর একটা উত্তাপ মানুষ যেন টের পাচ্ছে ইতিমধ্যে।

ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল কী বলছেন 

বাংলাদেশে ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তোলপাড়। হঠাৎ করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছুটা চাঙ্গা ভাব! প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে তেমনটা কিছু না দেখা গেলেও রাজনীতিবিদরা তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় এর গুরুত্বটা দেখছেন। ওবায়দুল কাদের তো ডোনাল্ড লুর আগমনকে বিএনপির সক্রিয় হওয়াটা দেখছেন। এমনকি বিএনপি স্বপ্ন দেখছে কিছু একটার এবং আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং এগুলোর মোকাবিলার জন্য নতুন খেলা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। নিম্নে দেখা যাক, দুই দলের দুই শীর্ষ নেতার সম্প্রতিক বক্তব্যে কীসের ইঙ্গিত! 

মির্জা ফখরুল 

দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশের সংকট ‘আরো গভীর হয়েছে’ উল্লেখ করে তা নিরসন না হলে ‘সরকারের ভবিষ্যৎ খুব ভালো নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ভালো নয়-সেটা কী তিনি ক্লিয়ার করেনি। কারণ বিএনপি বরাবরই চাইবে ক্ষমতাসীনদের ব্যর্থতা ও তাদের ভরাডুবি ও পদত্যাগ। যদি তেমন লক্ষণ দেখা যায়, তাতে বিএনপিই খুশি। কিন্তু মির্জা ফখরুলের কথায় তেমন কিছুর ইঙ্গিত নেই। তিনি সার্বিকভাবে একটা আশঙ্কার কথা বলছেন বলেই মনে হচ্ছে। গত ১২ মে রোববার সংবাদ সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন ইস্যু টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা কথা আমি বলতে চাই, ওনাদের (সরকার) একটা ফলস ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ওভারকাম দ্য ক্রাসিস...সংকট থেকে তারা ওপরে উঠে গেছেন।

ফখরুল বলেন, আমি বলবো, সংকট আরো গভীর করেছে। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংকট আরো গভীর হয়েছে, সরকারের সংকট আরো গভীর হয়েছে। তিনি ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আপনারা যদি এখনো সেটা উপলব্ধি না করেন, সংকট নিরসনের চেষ্টা না করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ তাদের (আওয়ামী লীগের) জন্য খুব ভালো না। দেশের অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র অলরেডি হয়েই গেছে। আমরা সেটা আগে থেকে বলে আসছি যে, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এই রাষ্ট্রকে ব্যর্থতায় পরিণত করেছে। কখন ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়? যখন অর্থনৈতিক, মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে, যখন তার রাজনৈতিক স্ট্র্যাকচারটা ভেঙে ফেলে, সামাজিক কাঠামো ভেঙে যায়, যখন কোথাও জবাবদিহি থাকে না, তখন রাষ্ট্র একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়... নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এখন গোটা দেশে একটা নৈরাজ্য চলছে।

একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় বিষয়ক সহকারী সচিব ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেখুন এসব আমাদের জিজ্ঞাসা না করে ওনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) জিজ্ঞাসা করুন। এসব নিয়ে আমরা ইন্টারেস্টেড নয়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের ওপরই আমাদের ভরসা, আমাদের পুরো আস্থা, সেই আস্থার ওপর আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। রাজনীতিও আমাদের জনগণকে নিয়ে। 

ওবায়দুল কাদের 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আবার চাঙ্গা হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আসবেন বাংলাদেশে। এটা শুনেই তারা চাঙ্গা হয়ে গেছে। ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেছে। আরে বেকুবের দল, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে আসছেন শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে।

গত ১১ মে শনিবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ তিনি বলেন, কত নাটক করেছেন আপনারা (বিএনপি)। জজ মিয়া নাটক ও বাইডেনের উপদেষ্টার নামে নাটক করেছেন। আবারও নাটক শুরু করেছেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় অপশক্তির বিরুদ্ধে আবারও খেলা হবে। লন্ডন থেকে আন্দোলনের ডাক দিয়ে কোনো লাভ হবে না। পালিয়ে গিয়ে বুড়িগঙ্গার পচা পানি খেতে হবে। যাদের সঙ্গে জনগণ নেই, তাদের আন্দোলন ও কর্মসূচি ভুয়া। বিএনপিও একটা ভুয়া রাজনৈতিক দল। এই ভুয়া দলের ভুয়া আন্দোলন জনগণ বিশ্বাস করে না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের সঙ্গে ২১ বছর শত্রুতা করে লাভ হয়নি। বিএনপি শত্রুতা করে সংশয় ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছিল। সে কারণে সম্পর্কের উন্নতি হয়নি। শেখ হাসিনা সে অবিশ্বাসের দেওয়াল ভেঙে দিয়েছেন। ভারত আমাদের বন্ধু। আমরা কারো দাসত্ব করি না। আমাদের শক্তির উৎস এদেশের মানুষ ও জনগণ। ভারতের কাছে আমরা বন্ধুত্ব চাই। কারণ, এটা আমাদের স্বার্থেই দরকার। শত্রুতা করে আমাদের ক্ষতি হয়েছে ২১ বছর। আমরা সে অবস্থায় আর ফিরে যেতে চাই না। 

ফ্লাশব্যাক ফেব্রুয়ারির মার্কিন প্রতিনিধিদের সফর 

নির্বাচনের ঠিক পরের মাসে অর্থাৎ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসএআইডির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল তিন দিনের সরকারি করে গেছেন। 

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ছিলেন-মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর আইলিন লাউবাচার, ইউএসএআইডির এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী সেক্রেটারি (এসসিএ) আফরিন আখতার। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘তিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের উপায়, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির লক্ষ্যে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবেন।’ তারা এই সফরকালে যুবকর্মী ও সুশীলসমাজের নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক সংগঠক এবং মুক্ত ও অবাধ মিডিয়া বিকাশে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নিতে, মানবাধিকারকে সমর্থন করতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে, আন্তর্জাতিক হুমকি মোকাবিলায় আঞ্চলিক টেকসই জোরদার ও অর্থনৈতিক সংস্কার প্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ 

সবশেষ 

বলার অপেক্ষা রাখে না, ওই প্রতিনিধিদলের সফরের উদ্দেশ্যগুলোর ফলোআপ বা সেগুলো কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বা কার্যকর কী পদক্ষেপ হতে পারে, সে জাতীয় সূচিপত্র নিয়েই ডোনাল্ড লু’র এ আগমন এবং মার্কিনিরা যে তাদের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বের যে চাওয়া সেখান থেকে এক চুল পরিমাণ সরেনি সেটা নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় সে বিষয়বস্তু নিয়ে তাদের দৌড়ঝাঁপের প্রমাণ মেলে। অনেকের ধারণা পিটার হাস ব্যর্থ হয়ে চলে যাচ্ছেন সেখানে নতুন একজনকে দেওয়া হচ্ছে দায়িত্ব। মার্কিনিরা বোধহয় একটু পিছু হটলো! আসলে তেমনটা নয়। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চীনেও যে বেশ কিছুদিন থেকে আরো অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। এমনকি বছর দশেক আগে বার্নিকাডের সময় বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা এক মার্কিন কর্মকর্তা ডেভিড স্লেটন মিলি পিটারহাসের স্থলাভিষিক্ত করা দিয়ে বাংলাদেশকে আরো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তা হাসের চেয়ে সম্ভবত আরো চৌকশ ও মার্কিন স্বার্থ রক্ষাকারী হবেন স্লেটন মিলি, সেটা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে! 

শেয়ার করুন