০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৭:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তা বাড়ছে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২৪
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তা বাড়ছে মার্কিন ডলার ও চীনা মুদ্রা


বৈষয়িক বাস্তবতা এবং অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন সংকটের পথে। রফতানি আয়, শিল্প উৎপাদন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়েছে। জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টর ভ্রান্ত পরিকল্পনার মাসুল দিয়ে গভীর সংকটে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অশুভ প্রভাবের সঙ্গে এখন ইসরাইলের গাজা আগ্রাসন প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা। জ্বালানির সংকটের পাশাপাশি এখন বাণিজ্য সংকট সৃষ্টিরসমূহ সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছুদিন আগেই ২০২৪ ঘোরতর অর্থনৈতিক সংকট এমনকি দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনার আগাম সংকেত দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি ইরান-ইসরাইল সরাসরি সংঘর্ষের অশুভ প্রভাব বিষয়ে সতর্ক থেকে সব মন্ত্রণালয়কে কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন, সকল সংকটের জন্য নাকি বৈষয়িক পরিস্থিতি দায়ী। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি ইঙ্গিতও দিয়েছেন। 

সম্প্রতি বাংলাদেশে ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম তীব্র দাবদাহ দেখা গেছে। এই দাবদাহ সৃষ্টির জন্য কি পুরোপুরি বিশ্ব পরিস্থিতি দায়ী? উন্নয়নের নাম নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, নদী জয়শয় মেরে ফেলা, নিয়ম না মেনে শহর নাগরগুলোকে কংক্রিটের বস্তি বানানোর জন্য কি সরকারের ভুল পরিকল্পনা, তদারকির অভাব, স্বেচ্ছাচার এবং দুর্নীতি দায়ী নয়? কেন ২৯ হাজার মেগাওয়াটের অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১৬০০০-১৭০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না? কোনো দেশ কি বাংলাদেশকে নিজেদের কয়লা, গ্যাস আহরণ এবং ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে? 

এপ্রিল মাস জুড়ে গ্রামাঞ্চলে এমনকি ঢাকার সন্নিহিত পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকায় দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। কৃষিতে সেচ কাজ ব্যাহত হয়েছে। শিল্প উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে। এগুলোর ফলশ্রুতিতে মে, জুন, জুলাই মাসে শিল্প উৎপাদন, রফতানিতে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একটি সরকার ধারাবাহিকভাবে ১৫ বছর ৪ মাস ক্ষমতায় আছে। দুর্নীতির কারণে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সরকারি অধিকাংশ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দেনার দায়ে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। সরকারি ব্যর্থতায় মহানগরগুলো মারাত্মক পরিবেশদূষণে দূষিত। অথচ নগর পুড়লেও নিরোর মতো বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন সরকারের মন্ত্রী- উপদেষ্টারা। সবাই যেন গাছাড়া দিয়ে চলছেন, যার দায়ভার যেন সব সরকারপ্রধানের। সরকারপ্রধানই যদি সব তদারকিতে থাকবেন, তাহলে রাজস্ব কোষাগারের অর্থ খরচা করে এতো মন্ত্রী-উপদেষ্টার আর প্রয়োজন কী। 

জ্বালানি উপদেষ্টাকে একটা প্রশ্ন করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এতোদিন ঘুমিয়ে থেকে এখন নিজেদের গ্যাস উত্তোলনে তোড়জোড়। আগে থেকে এ উদ্যোগের পথে হাঁটা হয়নি কেন? জনমনে এ প্রশ্নটা কিন্তু বিরাজ করছে। কেন এতো দিনেও কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা গৃহীত হলো না? সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে কেন একযুগ পেরিয়ে গেল? বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের কারণে নিকট ভবিষ্যতে শিল্পক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ সম্ভাবনা তিরোহিত। এমনকি চালু শিল্পগুলোর অপারেশন সংকটে আছে। রফতানি আয় কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে সরকার কীভাবে ইতিমধ্যে গৃহীত বিপুল বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করবে? এ চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। এসব নিয়ে সরকার প্রধানকে কেন সারাক্ষণ চিন্তিত হতে হবে। 

সরকারের একটি ঘোষিত প্রতিশ্রুতি আছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা। অথচ কিছু ক্ষুদ্র পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লুটেরা শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবাজদের রাখা হয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকে মনে করেন দেশ পরিচালনা বিষয়ে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে। সত্যিকারের জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে সরকারের বাস্তবায়িত উন্নয়নের জোয়ার অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে অচিরেই। 

আশা করি আগামী অর্থবছরে সরকার কিছু ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ করে অর্থনীতিকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনবে।

শেয়ার করুন