২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৭:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন


বুধবার সংবাদ সম্মেলন, ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশে প্রতিক্রিয়া
উইনকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে : দাবি পরিবারের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
উইনকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে : দাবি পরিবারের ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে


গত ৩ মে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল ল্যাটেশিয়া জেমস ২৭ মার্চ নিউইয়র্ক পুলিশ অফিসার সাল্ভেটরে অ্যালঙ্গি এবং ম্যাথিউ ক্লানফ্রিকওর দ্বারা ১৯ বছরের বাংলাদেশি যুবক উইন রোজারিওর হত্যার বডি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ্যে এনেছে। উইন রোজারিওর পরিবার, জাস্টিস কমিটি এবং ড্রাম, দেসিজ রাইজিং অ্যান্ড মুভিং এবং পরিবারের অ্যাটর্নির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়।

উইন রোজারিওর পরিবারের বিবৃতি-নোটান আভা কোস্টা, উৎস রোজারিও এবং ফ্রান্সিস রোজারিও (উইন রোজারিওর মা, ভাই এবং বাবা)। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে আমরা আমাদের উইনকে হারিয়েছি। আমাদের হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমরা প্রতিটা দিনই তার অনুপস্থিতি টের পাই। এই বিষয়টি বারবার সামনে নিয়ে আসা আমাদের জন্য অসহ্য কষ্টের এবং বেদনাদায়ক। আমরা মনে করি, এই ভিডিও সর্বসাধারণের সামনে প্রকাশ করার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রকাশিত ভিডিও থেকে এটা পরিষ্কার যে আমাদের উইনের বেঁচে থাকা উচিত ছিল, কিন্তু তার প্রতি এবং আমাদের প্রতি কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ না করে পুলিশ আমাদের বাসায় এসে আমাদেরই রান্নাঘরে তাকে খুন করে চলে গেল। পুলিশ একটা সংকট তৈরি করে এবং খুব ঠান্ডা মাথায় তাকে খুন করে। ওই অফিসারদের কে যত দ্রুত সম্ভব বরখাস্ত করা এবং বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা উচিত। 

জাস্টিস কমিটির নির্বাহী পরিচালক লোয়োডা কলোনের ভাষ্য, ‘ফুটেজগুলো ভয়ংকর-এটি একটি হত্যা।’ শুরু থেকেই অপমানিত ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে, এই পুলিশদের কোনো মানসিক পরিস্থিতি উদ্ভূত হতে পারে এমন পরিস্থিতিতে এবং মানসিক জটিলতা আছে এমন কারো সঙ্গে যোগাযোগ বা সাড়া দেওয়া উচিত নয়। 

নিউইয়র্ক পুলিশ উইনকে হত্যার পর পরই এর বিপরীতে মিথ্যা রটনা ছড়াচ্ছে অথচ ভিডিওতে আমরা দেখতে পাচ্ছি কীভাবে পুলিশ এসে একতরফাভাবে একটা সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এবং বারবার সেই পরিস্থিতিকে আরো সংকটজনক করে তুলেছিল। পুলিশ তাদের সৃষ্ট সংকট কমাতে বা নিরসনে উইন বা তার পরিবারের সঙ্গে শুধু চিৎকার, চেঁচামেচি করা, তাড়াহুড়ো করা বা ঘেউ ঘেউ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। এটি ছিল একটি ঠান্ডা মাথার খুন এবং মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং একটি নয়, দুটি নয় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। অফিসার সালভাতোর অ্যালোঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকোকে অবিলম্বে বিনা বেতনে বরখাস্ত করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। মেয়র অ্যাডামসকে জবাব দিতে হবে, কেন তার প্রশাসন বেতন ছাড়াই বরখাস্ত করেনি এবং বিচার শুরু করেনি। মেয়র অ্যাডামসকে জবাব দিতে হবে, কেন তার প্রশাসন অ্যালোঙ্গি এবং সিয়ানফ্রোকোসের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছে এবং তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, কাওয়াস্কি ট্র্যাউইকের পরিবার যেভাবে বছরের পর বছর ধরে কভার আপ এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছে এখানে যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়।

ড্রাম-দেসিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিংয়ের জাতিগত ন্যায়বিচার সংগঠক- সিমরান থিন্ড বলেন, ‘নিউইয়র্ক পুলিশ এভাবে বারবার সংকট তৈরি করবে এবং দিনের পর দিন এই সংকটকে আরো বাড়িয়ে দেবে আর আমাদের পরিবারের প্রিয়জনকে হত্যা করবে আর আমরা বারবার এসব পরিবারের পক্ষে দাঁড়াবো। কিন্তু এটা আর কত দিন এবং আর কত বার এভাবে আমাদের পরিবারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে? কেন নিউইয়র্ক সিটিতে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য একটি প্রশিক্ষিত টিম থাকবে না, যখন এটি প্রমাণিত যে পুলিশের চেয়ে তারা বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এরকম বেদনাদায়ক ঘটনায় বায়ুবীয় মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে পরিবার এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। আমাদের প্রয়োজন নিউইয়র্ক সিটিতে আরো কার্যকর জননিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন। 

লুনা ড্রৌবি, অ্যাটর্নি-বেল্ডোক লেভিন অ্যান্ড হফফমেন এলএলপি বলেন, তারা তাকে পেছন থেকে গুলি করেছে। নিউইয়র্ক পুলিশ বেপোরোয়াভাবে একজনকে খুন করেছে। এই অফিসারদের বরখাস্ত করা উচিত। এটি চরম অপমানজনক।

এদিকে ভিপিও প্রকাশের পর বিভিন্ন সংগঠন এবং আইনজীবীদের উদ্যোগে আগামী ৮ মে বুধবার দুপুর ১২টায় সিটি হলের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে অংশগ্রহণের জন্য ড্রামের সাংগঠনিক আর্গানাইজার কাজী ফৌজিয়া আহ্বান জানিয়েছেন।

পেছনের কথা

২৭ মার্চ, নিউইয়র্ক পুলিশ অফিসার সালভাতোর অ্যালোঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো যখন ১৯ বছরের বালক উইন রোজারিওকে হত্যা করে তখন উইন-কুইন্স, ওজন পার্কে তার নিজ বাসায় অবস্থান করছিল। সে তার মা এবং ছোট ভাইয়ের চোখের সামনে খুন হয়। রোজারিওকে যখন হত্যা করে তখন নিউইয়র্ক পুলিশ ওই অফিসারদের নাম তাদের পেশাগত অবস্থানের তথ্য এবং বডি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ করেনি। 

জাস্টিস কমিটি

১৯৮০ সাল থেকে জাস্টিস কমিটি নিউইয়র্ক সিটিতে পুলিশের সহিংসতা এবং কাঠামোগত জাতিগত বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলায় নিয়জিত রয়েছে। আমাদের কাজের কেন্দ্রবিন্দু হলো যেসব পরিবার পুলিশের দ্বারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে অথবা পুলিশের সহিংসতার শিকার হয়ে বেঁচে আছে সেসব পরিবারকে সংগঠিত করা এবং সহযোগিতা করা। আমরা আমাদের সম্প্রদায়কে পুলিশি সহিংসতা রোধ করতে, আইনপ্রয়োগকারীকে জবাবদিহি করতে এবং তৃণমূল সংগঠিত প্রচারাভিযান, সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক শিক্ষা, আমাদের কপওয়াচ প্রোগ্রাম এবং পুলিশের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে এমন নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং প্রকল্পগুলোর বিকাশের মাধ্যমে জনগণের নেতৃত্বে সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা গড়ে তুলতে সক্ষম করি। জাস্টিস কমিটি অন্যান্য বর্ণবাদী, অভিবাসী নেতৃত্বাধীন সংগঠনের লোকদের সঙ্গে সংহতি গড়ে তোলার মাধ্যমে, ন্যায়বিচার কমিটি, জাতিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি সুদূরপ্রসারী আন্দোলনে অবদান রাখতে চায়। 

ড্রাম-দেশিজ রাইজিং আপ এবং মুভিং 

ড্রাম দেশিজ রাজিং আপ অ্যান্ড মুভিং নিউইয়র্ক সিটির স্বল্পআয়ের দক্ষিণ এশীয় এবং ইন্দো ক্যারিবীয় বহুভাষা ভাষী অভিবাসী সদস্য দ্বারা নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সংগঠন। ২০০০ সালে ড্রাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হাজার হাজার দক্ষিণ এশীয় এবং ইন্দো-ক্যারিবীয়ান স্বল্পআয়ের মানুষের-অভিবাসী অধিকার থেকে শুরু করে শিক্ষা সংস্কার, জাতিগত ন্যায়বিচার, শ্রমিক অধিকারসহ যেসব বিষয় তাদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে সেসব বিষয়ে সামাজিক ও নীতিমালা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব গড়ে তুলেছে। 

বর্তমানে ৫ হাজার জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে। যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক, যুবক, এবং পরিবার। যারা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, গায়ানা, ত্রিনিদাদ, সুরিনাম এবং টোবাকো এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা। এরা সবাই দক্ষিণ-এশীয় এবং ইন্দো-ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, ড্রাম দক্ষিণ এশীয় এবং ইন্দো-ক্যারিবিয়ার কর্মী এবং যুবাদের নেতৃত্বে অধিকার এবং ন্যায়বিচারের জন্য স্থানীয় থেকে বিশ্বব্যাপী সংগঠনের একটি অনন্য মডেল তৈরি করেছি, যার মূল ভিত্তি-বেইজ তৈরি, নেতৃত্বের বিকাশ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিচালনা।

শেয়ার করুন