০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১০:১৬:৩৫ অপরাহ্ন


মানবাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে ছাড় দেয়নি ডোনাল্ড লু
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
মানবাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে ছাড় দেয়নি ডোনাল্ড লু মিডিয়ার সাথে কথা বলছেন ডোনাল্ড লু


বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে ডোনাল্ড লু’র থেকে কোনো ধরনের ছাড় পায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। বরং এর বিপরীতে এসব বিষয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেলতে সরকার কি ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তা দেখতে ও জানতে চেয়েছে ডোনাল্ড লু। এসব বিষয়ে ক্ষমতাসীনরা যতো তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেবে দু-দেশের মধ্যে অতীতে সৃষ্ট তিক্ততা তত কমে আসবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দেশের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কূটনীতিকের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতার সাথে একান্তে কথা বলে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে এধরনের তথ্য মিলেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান ডোনাল্ড লু দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসাবে গত ১৪ মে তিন দিনের ঢাকা সফর করে গেছেন। এর আগে তিনি ভারত ও শ্রীলংকা সফর করেছেন। কলম্বো থেকে সরাসরি ঢাকায় আসার পর সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্নন্তরের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত সপ্তাহের ১৪ মে মঙ্গলবার ঢাকা পৌঁছানো ডোনাল্ড লু সেদিনই নিজ দেশের কূটনীতিক, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, শ্রম অধিকার কর্মী ও পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে বৈঠক ও নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। ১৫ মে বুধবার ডোনাল্ড লু একে একে বৈঠক করেন মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে। পরিবেশমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে। টানা বৈঠক শেষে বিকালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে এসে সময় কাটান লু। সেখানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে ডোনাল্ড লু ব্যাটবল হাতে দেশের নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠেন। 

আর কি কি হয়েছে

গণমাধ্যম থেকে জানা গেলো যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানবাধিকার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় আওয়ামী লীগ সরকারের। কেননা অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্বিঘ্নে নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতিতে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণাও দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে নির্বাচন শেষ হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় ডোলান্ড লুর এবারের সফর সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্যেই এর স্পষ্ট আভাস পাওয়া গেছে। এমন ইতিবাচকই অধিকাংশ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। 

ডোনাল্ড লু প্রকাশ্যে কি বলে গেলেন

এখন দেখা যাক ডোনাল্ড লু প্রকাশ্যে কি বলে গেলেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেলো গত সপ্তাহের বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড লু বলেছেন, বাংলাদেশ সফরে এসে গত দুই দিনে আমি দুই দেশের জনগণের মধ্যে পুনরায় আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা জানি, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক টেনশন ছিল। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন (বাংলাদেশে) অনুষ্ঠানে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। এতে কিছু টেনশন তৈরি হয়। জানালেন, আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। আরো বললেন যে, আমেরিকা সামনে তাকাতে চায়, পেছনে নয়। সম্পর্কোন্নয়নের উপায় খুঁজে বের করতে চায়। তবে এসব বলতে গিয়ে ডোনাল্ড লু বলে ফেলেন যে, আমেরিকার সাথে সম্পর্কের পথে অনেক কঠিন বিষয় রয়েছে। এব্যাপারে উল্লেখ করেন র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়নের বিষয়টি। এসব বলতে গিয়ে বলেন, ‘কিন্তু কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য ইতিবাচক সহযোগিতার ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে চাই।’

ব্রিফিংয়ে সালমান এফ রহমান যা জানালেন

এদিকে এর আগে জানা গেলো যে ডলার-সংকটের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের অংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। এ অর্থ বাংলাদেশ থেকে কবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা জানতে চেয়েছেন ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। জানা গেলো যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাসভবনে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে নৈশভোজে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ডোনাল্ড লু। এসব বিষয়ে নিয়ে সালমান এফ রহমান গণমাধ্যমে ওই ব্রিফিং এ আরো জানালেন যে, ডলার-সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ব্যবসা করছে, তারা অভিযোগ করছে, তাদের অর্থছাড়ে দেরি হচ্ছে। তাঁরা এটাও বলেছেন, আমরা বুঝি বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপর চাপ রয়েছে।’ বাংলাদেশ কত দিনে এ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে, তা জানতে চেয়েছেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা তাদেরকে যা বলেছেন বলে জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা আশাবাদী বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়বে। আমাদের রপ্তানি বাড়বে, রেমিট্যান্সও বাড়বে। মার্কিনদের জানিয়েছি যে যদিও আমাদের অর্থ পরিশোধে একটু সমস্যা হচ্ছে, একটু দেরি হচ্ছে, তবে আমাদের অর্থছাড় ক্রমাগত হচ্ছে। আমরা একেবারে অর্থছাড় বন্ধ করিনি।’

বিশ্লেষণ কি বলে? 

দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েক জন নেতার সাথে একান্তে কথা হয় বাংলাদেশে আসা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই ডোনাল্ড লু’র এই সফরের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে। কেননা এই ডোনাল্ড লু’র হচ্ছেন পৃথিবীর একটি শক্তিধর দেশের দক্ষ তেজী কূটনীতিক। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন এই কূটনীতিক ডোনাল্ড লু নিয়ে জোরেশোরে আলোচনার শুরু পাকিস্তানে ইমরান খানের পতনের সময়। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এবং ইমরানের দল পিটিআইসহ নানা দিক থেকে দেশটির সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে ডোনাল্ড লু’র নাম উঠে আসে। বলা হয় যে লু’র কাজের পদ্ধতিকে অনেকে ‘জবরদস্তি মূলক’ হিসাবেও মন্তব্য করেন। তা-ই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে সব মহলের কাছে, যে বাংলাদেশের সাথে এই ক্ষমতাধর দেশটি আসলেই কি সম্পর্ক আরও ভালো করতে চায়, যা গণমাধ্যমের খবরে জানা গেলো? প্রশ্ন হচ্ছে যে আমেরিকা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চেয়েছিল। অথচ সে-ই আমেরিকা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন তাদের মন:পুত হয়নি বলে সাফ জানিয়েও দিয়েছে। এ বিষয়টিকে কি আমেরিকা মাথা পেতে নিয়ে কি ক্ষমতাধর দেশটি আসলেই কি সম্পর্ক আরও ভালো করতে চাইছে? এর পাশাপাশি আরেকটি শক্তিধর দেশের চাপে আমেরিকা চুপসে যাবে? 

আমরা বড় দেশ

এমন প্রশ্নের উত্তর কিন্তু ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে একটি বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকে ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এক সাক্ষাৎকার দেন। এতে ঐ পত্রিকার সাংবাদিক একটি প্রশ্ন করেন। বাংলাদেশের একটি বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে, ভারতের মধ্যস্থতায় প্রভাবিত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেছে। বিএনপির নেতাদের এসব দাবির বিষয়ে ডোনাল্ড লু’র মতামত কী জানতে চাওয়া হয়। ডোনাল্ড লু উত্তরে বলেন, অভিযোগটি হাস্যকর। আমরা বড় দেশ। সারা বিশ্বেই আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, সে বিষয়ে কেউ আমাদের পরামর্শ দেয় না। এমন অহংকারি উত্তরে সহজেই বোধগম্য আমেরিকা আসলে কি বোঝাতে চেয়েছে। 

ডোনাল্ড লু বললেন জনগণের স্বার্থ দেখি

ওই পত্রিকায় সাংবাদকের একিই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ডোনাল্ড লু বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আমরা অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্য জায়গায় ডোনাল্ড লু বলেন, বাংলাদেশ সফরে এসে দুই দেশের জনগণের মাঝে ফের আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। তিনি জানালেন যে আমেরিকা জানে, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক অস্থিরতা ছিল। জানালেন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছিল দেশটির পক্ষ থেকে। এতে কিছু মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন। লু’ বললেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। তা-ই জানালেন কূটনৈতিক ভাষায়, এখন আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়। আমরা সম্পর্ক জোরদারের উপায় খুঁজে বের করতে চাই। ’এখানে স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে যে আমেরিকানরা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ নিয়েই বেশি কথা বলতে চান, কোনো সরকার বা দলের পক্ষে তারা কাজ করেনি বা করছে না। ডোনাল্ড লু’র এমন মন্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায় পৃথিবীর এই শক্তিধর দেশটি এদেশ অঞ্চলের পাশাপাশি শাসকদের কাকে কিভাবে দেখে বা মূল্যায়ন করে। তাই বলে গেলেন যে ‘আমরা সভা-সমাবেশ ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলাম। এটা খুবই স্বাভাবিক। এ অঞ্চলে আমরা এটা করি। জোড় দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে এসব মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’ এসব বক্তব্য বিশ্লেষণ করে কূটনীতিরকরা মনে করেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রশ্নের আমেরিকা ছাড় দেয়নি বা দিচ্ছে না।

ফখরুলও একি কথা বললেন

এদিকে ঢাকা সফরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বক্তব্য-বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বক্তব্য দেন। যা আওয়ামী শিবিরে বেশ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র আগের অবস্থানেই রয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ”আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থান, সে অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা তাদের দেশের প্রয়োজনে যেটা মনে করছে, সেটাই করছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে করছেন না।” এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কীভাবে জানলেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মানবাধিকার প্রশ্নে কি বার্তা আমেরিকার

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফর নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, আমেরিকা বাংলাদেশের সাথে সর্ম্পকোন্নয়নে বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরই বেছে নিয়েছে। এবং আমেরিকা আর কোনো কিছুই চায় না। কিন্তু একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে লু স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, সারা বিশ্বেই আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, সে বিষয়ে কেউ আমাদের পরামর্শ দেয় না। অন্যদিকে মানবাধিকার প্রশ্নে আমেরিকা কতটা শক্ত অবস্থানে থাকবে তারও আভাস পাওয়া গেছে ডোনাল্ড লু’র বক্তব্যে। ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সাফ বলে দিলেন, আমাদের সম্পর্কের পথে অনেক কঠিন (?) বিষয় রয়েছে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন। তাই বলেছি কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হলে ইতিবাচক সহযোগিতার ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে চাই। আর র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তো আমেরিকা যা বলার তা বলেই দিয়েছে ঠিক যখন লু’র সফর নিয়ে নানান ধরনের পজিটিভ হিসাব-নিকাশ করে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মহল। (১৬ মে) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল সাফ জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশে র‍্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র দুই দিনের সফরে ছিলেন ওই সময়ে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এ সফর প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক জানতে চান, লুর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিতে বেশ আন্তরিক। তিনি আরও বলেছেন, এ নিয়ে হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তর কাজ করছে। এর জবাবে প্যাটেল বলেন, এসব দাবি মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। এই দাবিগুলো মিথ্যা। নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো র‍্যাবের আচরণের পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতে উৎসাহিত করা। 

সর্বশেষ ঘটনা

এদিকে গত ২ মে মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইনে একটি খবর ফলাওভাবে প্রচার করা হয়েছে। সে-টি হলো দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয় স্থানীয় সময় ২০ মে সোমবার (বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতের পর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার খবরটি দিয়ে কিছু কঠিন বার্তা জুড়ে দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে। এতে বলা হয় আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আর এমন ঘটনাটি ঘটে গেলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর শেষের এক সপ্তাহের মধ্যেই। ফলে এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে ডোনাল্ড লু’র থেকে কোনো ধরনের ছাড় পায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।

শেয়ার করুন