১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০২:৫৪:৩৯ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্কে চার দিনব্যাপী বাংলা বইমেলা
অতিথি অবকাশ যাপন : সেলফিবাজি ও সামান্য বই বিক্রি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
অতিথি অবকাশ যাপন : সেলফিবাজি ও সামান্য বই বিক্রি ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বোধন


অন্যের অর্থে আমেরিকায় এসে অতিথি ও প্রকাশকদের অবকাশ যাপন, সেলফিবাজদের আড্ডা, ঘোরাঘুরি, বারবার একই শিল্পীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং সামান্য বই বিক্রির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নিউইয়র্কে মুক্তধারা আয়োজিত বইমেলা। তবে বইমেলার আগে কেন আন্তর্জাতিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। ঘুরেফিরে একই লোকজন বইমেলার সঙ্গে জড়িত। একেকবার একেকজন দায়িত্ব পালন করেন। অনেকটা সিন্ডিকেটের মতো। তারা যে প-িত এবং সজ্জন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও তারা কেন অসংলগ্ন এবং অসামঞ্জস্য বিষয়গুলো মেনে নেন তা কারো বোধগম্য নয়। তারা কী মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। যদি তাদের অ্যাফোর্ড থাকতো তাহলে বারবার একই অতিথি কেন? একই প্রকাশক কেন? একই শিল্পী কেন? একই ধাচের অনুষ্ঠান কেন? আমেরিকায় বেড়াতে আসা অন্য লোকজনকে টেনে এনে অতিথি করা কেন? অনুষ্ঠানে বারবার একই বিষয়বস্তু কেন? ৩৩তম মেলার পর বিষয়গুলো নিয়ে সিরিয়াসলি চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, যারা অতিথি হিসেবে আসেন, প্রকাশকরা আসেন বছরে একবার তাদের অবকাশ যাপন হয়ে যায় অন্যের অর্থে। এটাই তাদের লাভ। যাকে বলা যায়, রথ দেখা সেই সঙ্গে কলা বেচা। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বইমেলা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্বটি কমানো উচিত। ৩৩ বছরের বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের লোভ দেখিয়ে মানুষ নেওয়ার যে কৌশল তা পরিহার করা উচিত। বইমেলায় সংগীতপ্রেমীদের নয় বইপ্রেমীদের নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। কারো কারো ধারণা কয়েক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বইমেলার অঙ্গহানিরও কারণ বটে! তারা বলেন, ভেবে দেখুন তো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখার জন্য যে কয়েকশ লোক অডিটোরিয়ামে বসে থাকেন, তারা যদি বইমেলার প্রাঙ্গণে থাকতো, তাহলে পরিবেশটা কেমন হতো একটু চিন্তা করুন তো। বই মানুষের চিন্তা চেতনা এবং জ্ঞানের খোরাক। বই কিনলে কেউ দেউলিয়া হয় না- এই বাক্যটি বলে দেয় এখানে বাণিজ্যের ব্যাপারও রয়েছে। বাণিজ্য মানেই লাভ- ক্ষতি। ৩৩ বছরেও কেউ জানেনি, লাভ-ক্ষতির হিসাব কোথায়? ক্ষতি হলে কে দেয়, লাভ হলে কে নেয়!

সে যাই হোক ‘যত বই তত প্রাণ’ স্লোগান নিয়ে চার দিনব্যাপী নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা ২৪ মে থেকে শুক্রবার শুরু হয়েছে এবং বৃষ্টিস্নাত ২৭ মে শেষ হয়েছে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে ৩৩তম মেলার উদ্বোধন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, অভিনেত্রী সারা যাকের, কথা সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অভিনেতা আফজাল হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী, আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাজমুন নাহার পিয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর, মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী। দেশ ও প্রবাসের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই বইমেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‌জয় শুভ সময়, জয় বঙ্গময়, জয় বিশ্বময়। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এক মর্মমূলে, আমাদের পরিচয় আমরা মানুষ, আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি সারা পৃথিবীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে। আমরা বলছি, যত বই তত প্রাণ, যত বই তত শব্দ, যত শব্দ তত ধ্বনি, যত ধ্বনি তত অর্থ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্মিলিতভাবে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মর্যাদাশীল ভাষায় পরিণত করতে হবে। আমেরিকায় বড় হওয়া নতুন প্রজন্ম বইমেলা কে এগিয়ে নিয়ে যাবে আগামীতে এই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন বক্তারা। এরপর মিলনায়তনের ভেতরে ৩৩টি প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। অতিথিরা একে একে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন। অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় এই সময়। উদ্বোধনী দিনে মূল অনুষ্ঠানের আগে উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্টে নিউইয়র্কের খ্যাতনামা শিল্পী তাজুল ইমামের পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় সন্ধ্যায় গানের এই আসরে নিউইয়র্কের একাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়।

এ বছর বইমেলার একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সৌজন্য ‘জেনোসাইড ৭১’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন।

নিউইয়র্কে ৪দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার তৃতীয় দিন হোস্ট কমিটির পক্ষে এই নাম ঘোষণা করেন সাহিত্যামোদি ও শিল্পপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া। এ সময় তার পাশে ছিলেন বইমেলার আয়োজক ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’র চেয়ারপার্সন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ড. নুরুন্নবী। 

বয়সের কারণে খ্যাতনামা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মেলায় আসতে পারেননি, তবে ভিডিও-বার্তায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের এই বইমেলায় ইতিপূর্বে যোগদানের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বহুজাতিক সমাজে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের এই প্রয়াসকে অভিনন্দিত করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এ সময় মেলায় অংশগ্রহণকারী স্টলসমূহের মধ্যে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরস্কার’ গ্রহণ করেন ‘সময় প্রকাশ’র ফরিদ আহমেদ।

এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে সাহিত্য পুরস্কারের স্পন্সর-প্রতিষ্ঠান ‘জিএফবি গ্রুপ’র সিইও এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ফারুক ভূইয়া বলেন, প্রবাসে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নিরন্তরভাবে কাজ করছে। বিগত ৩৩ বছর ধরেই আন্তরিকতার সাথে ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যকে সঠিকভাবে এগিয়ে আজকের পর্যায়ে উন্নীত করার নেপথ্যে অন্যতম প্রধান প্রেরণাশক্তি হচ্ছে আপনাদের সহযোগিতা ও ভালবাসা। 

মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও থাকবে সেমিনার, কবিতা পাঠ, বই পরিচিতি, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা মেলার তৃতীয় দিনে অর্থাৎ রোববার একক সংগীত পরিবেশন করেন। চার দিনের মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরাও সংগীত এবং বিভিন্ন সংগঠন নৃত্য পরিবেশন করে।

শেয়ার করুন