০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১১:৩৫:১৭ অপরাহ্ন


২০২৪-২৫ জাতীয় বাজেট
‘যাহা তোমাকে ভাসাইয়া রাখে তাহাই তোমাকে ডুবায়’
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৪
‘যাহা তোমাকে ভাসাইয়া রাখে তাহাই তোমাকে ডুবায়’


ঘনীভূত মুদ্রাস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাশছোঁয়া মূল্যের চাপে নুন আনতে পানতা ফুরোনো নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের জীবনে কতুটুকু স্বস্তি আনবে সেটি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। সদ্য ঘোষিত ঘাটতি বাজেটে সার্বিক বিচারে আদৌ জনবান্ধব হয়েছে কি না, তা নিয়ে খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা ত্রিধা বিভক্ত। বুদ্ধিজীবীদের আলোচনা শুনে মনে হচ্ছে বাজেট আদৌ উন্নয়নের মৌলিক সূচকগুলো সঠিকভাবে নজরে নিয়েছে বলা যাবে না। সূচনায় সংক্ষিপ্ত আকারে যদি বলি একটি জাতীয় দৈনিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত মন্তব্য ‘কলস যত বড়ই হোক না কেন তলায় সামান্য ফুটো হলেই আর কোনো কাজ পাওয়া যায় না। তখন যাহা তোমাকে ভাসাইয়া রাখে তাহাই তোমাকে ডুবায়।’ 

কী নির্মমভাবে কবিগুরুর কথা কী নির্মমভাবে মিলে যায় বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে। বাংলাদেশের উন্নয়নের খালি কলসিতে এখন একটি দুটি না, অসংখ্য ফুটো। এমতাবস্থায় বাজেট প্রস্তুত এবং ঘোষণা কতটা দুরূহ সেটা সহজেই অনুমেয়।

বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজর কোটি টাকা। জানিনা, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে থাকা অবস্থায় কতটা বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে সেটি অনিশ্চিত। হয়তো সরকারকে দেশীয় ব্যাংক থেকেই বড় ধরনের ঋণ নিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণায় বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক বাজেট প্রণয়ন করার চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করছি। বাজেটে দরিদ্র গোষ্ঠীর জন্য সেফটি নেট আরো বাড়ানো হয়েছে। কর কাঠামো পরিবর্তন সুনির্দিষ্ট না করেই অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে বাড়তি অর্থ জোগানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এহেন পরিস্থিতিতে ঘোষিত বাজেট মূল্যস্ফীতি ৯%+ থেকে কমিয়ে কীভাবে ৬.৫% পর্যায়ে আনবে সেটি নিশ্চিত নয়।

করোনা অতিমারির অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উঁচ্চমূল্যের কারণে সীমিত আয়ের মধ্যবিত্তের জীবনে বিরাজ করছে হতাশা হাহুতাশ। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়েনি। নি¤œবিত্তের জন্য সরকার স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিলেও সেটির আওতায় আসেনি মধ্যবিত্তসহ সমাজের একটি বিশাল অংশ। এমন এক ব্যবস্থায় বর্তমান বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরিমাণে কমিয়ে আনা। কিন্তু হয়েছে কি!

আসুন জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাত বিষয়ে। আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর হওয়ার ভ্রান্ত কৌশলের কারণে বিদ্যুৎ সেক্টরের দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। দেনার প্রতিক্রিয়ায় এবং সংস্থাগুলোর তহবিল শূন্য হয়ে পড়ায় সরকার ঘোষিত পর্যায়ক্রমে তিন বছরের মধ্যে সাবসিডি তুলে দেওয়ার ঘোষণা বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জ্বালানি-বিদ্যুতের অনিবার্য মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া অনিবার্য হয়ে যাবে। গ্রিড নন-গ্রিড মাইল ৩০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১৭ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা মেটাতে পারছে না। বাজেটে স্থানীয় প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়নি। জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন না হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বাণিজ্য সব খাতে সৃষ্ট সমস্যা অব্যাহত থাকবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণ সমাজকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংস্থাগুলোর সংযুক্তি বাড়াতে হবে। তরুণ সমাজকে উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন করতে প্রণোদনা দিতে হবে। জানি না, এক্ষেত্রে বাজেট কতটা সহায়ক হবে। সবকিছু মাইল সংকট সময়ে প্রণীত বাজেটকে মন্দের ভালো বলবো। সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়া বিপুল জনগোষ্ঠীকে করে আওতায় আনতে হবে। 

মোদ্দাকথা, নির্মোহভাবে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হবে। এটা আর বলার আপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন