১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্কে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠান ১৭ নভেম্বর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৭-২০২৪
নিউইয়র্কে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠান ১৭ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মোহাম্মদ খলিলুর রহমান


আমেরিকায় বাংলাদেশি খাবার দেশি-বিদেশিদের পছন্দের খাবার হয়ে উঠেছে। এই খাবরের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিরিয়ানিসহ আরো অনেক খাবার। বাংলাদেশি খাবার ব্র্যান্ডিং করার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি খাবার নিয়ে নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ অনুষ্ঠান। গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে জ্যামাইকায় হিলসাইড অ্যাভিনিউস্থ খলিল বিরিয়ানি হাউজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে, আগামী ১৭ নভেম্বর আয়োজিত হবে এ অনুষ্ঠান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের খাবারের পছন্দের তালিকার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে খলিল বিরিয়ানি। খলিল বিরিয়ানির স্বত্বাধিকারী শেফ খলিলুর রহমান ইতিমধ্যে পেয়েছেন ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড। তার উদ্যোগ এবং আগ্রহে নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ অনুষ্ঠান। আগামী ১৭ নভেম্বর নিউইয়র্কের কুইন্সের টেরেস অন দা পার্ক-এ আয়োজিত হবে এই অনুষ্ঠান।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যে কারি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা শেফ খলিলুর রহমান ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ অনুষ্ঠান বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। বলেন, আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ডে ছয়টি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে। পুরস্কারের সঙ্গে থাকবে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট। ক্যাটাগরিগুলো হলো- লাইফ টাইম এসিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, রেস্টুরেন্ট অব দ্য ইয়ার, এক্সিকিউটিভ শেফ অব দ্য ইয়ার, শেফ অফ দা ইয়ার, ফুড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অফ দা ইয়ার, হোম কুক অব দ্য ইয়ার। এই আয়োজনে জুরিবোর্ডে থাকবেন বিশ্বখ্যাত মাস্টার শেফ এবং কালিনারি বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের নানা সেক্টরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে শেফ খলিলুর রহমান ছাড়াও কারি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এনামুল হক এনাম ও কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট অ্যাডভোকেট এন মজুমদার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। পরে তারা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন আশরাফুল হাসান বুলবুল।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে খলিলুর রহমান জানান, ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ আয়োজনের সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা থাকবে। এর ওয়েবসাইট ছাড়াও মিডিয়ার মাধ্যমে সময়ে সময়ে সব তথ্য জানানো হবে। পৃষ্ঠপোষক আর স্পন্সরদের অর্থের পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠানের অর্থে এই অনুষ্ঠানের ব্যয় মেটানো হবে। অপর এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ কোনো গতানুগতিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান হবে না এবং এখানে অর্থের বিনিময়ে কাউকে কোনো অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে না। বিচারকদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অ্যাওয়ার্ডের জন্য যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে শেফ খলিলুর রহমান জানান, নিউইয়র্কের সব আইনকানুন মেনেই ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ আয়োজন করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেফ খলিলুর রহমান বলেন, আমি পেশায় একজন শেফ। নিউইয়র্কের খলিল বিরিয়ানি হাউজের প্রতিষ্ঠাতা, চিফ শেফ এবং সিইও। খুব অল্প সময়ের মধ্যে খলিল বিরিয়ানি হাউজ নিউইয়র্ক তথা পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত খাবারের ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেই নয়, স্থানীয় আমেরিকানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছেও আমাদের খাবারসমূহ সমান জনপ্রিয়। মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ‘খলিল বিরিয়ানি’ তিনি বলেন, আমাদের যাত্রা কিন্তু খুব বেশি দিনের নয়। ২০১৭ সালে নিউইয়র্কে খলিল বিরিয়ানি হাউজ যাত্রা শুরু করে। আর অল্পসময়ের মধ্যেই আমাদের খাবার মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে। সাম্প্রতিককালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নামানুসারে ‘বাইডেন বিরিয়ানি’ নামে নতুন একটি ডিশ চালু করেছি। ব্যতিক্রমী এ ডিশটি আমেরিকায় বেশ আলোচিত হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম আরো কিছু ডিশ প্রচলনের ইচ্ছা আমাদের আছে। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড’ জনপ্রিয়তার পাশাপাশি গ্রাহক সেবায় অনন্য অবদানের জন্য খলিল বিরিয়ানি হাউজের স্বত্বাধিকারী এবং প্রধান শেফ হিসেবে আমি অর্জন করেছি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড’। পাশাপাশি ২০২২ সালে পেয়েছি কালিনারি শিল্পের অস্কার হিসেবে খ্যাত ‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’। যা অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পুরস্কার।

যেভাবে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’-এর পরিকল্পনা হলো

‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার পর আমার মাথায় চিন্তা আসে যে, ‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’-এর মতো করে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ করলে কেমন হয়? এই প্রেক্ষাপটে, আমি আর বিজনেস আমেরিকা ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা এনামুল হক এনাম মিলে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ নিয়ে কাজ শুরু করি। সিদ্ধান্ত নেই আমেরিকায় ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ চালু করবো। শেফ খলিরুর রহমান বলেন, ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন। অবশেষে যা বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। আগামী ১৭ নভেম্বর ২০২৪ রোববার নিউইয়র্কের কুইন্সের ‘টেরেস অন দ্য পার্ক’-এ অনুষ্ঠিত হবে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’-এর প্রথম আসর। ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে চাই যে, আমাদের এ আয়োজন হবে অত্যন্ত জমকালো এবং আকর্ষণীয়।

‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ সম্পর্কে তথ্য

‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজনগত দিক দিয়ে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ অনেকটা ‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’-এর আদলেই হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও থাকবে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে আয়োজনের ব্যাপ্তির জায়গায়। ‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’ মূলত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক। শুধু ব্রিটেনের শেফরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। কিন্ত ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ শুধু যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হবে না। ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ এর আয়োজন সব দেশের অংশগ্রহণকারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের শেফরা এই আয়োজনে অংশ নিতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের শেফরা যেমন এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন, তেমনি অংশ নিতে পারবেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইতালি, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের শেফরা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’-এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এছাড়া এবারই এ ধরনের আসরে আমেরিকায় বসবাসরত যারা নিজের রান্না বা ঘরে (হোম কুক) সৃজনশীল খাবার তৈরি করেন তাদের মধ্য থেকে সেরাদেরও এখানে পুরস্কৃত করা হবে।

জুরিবোর্ডে থাকবেন বিশ্বখ্যাত মাস্টার শেফ এবং কালিনারি বিশেষজ্ঞরা

এ আয়োজনের জুরিবোর্ডে থাকছেন, বিশ্বখ্যাত মাস্টার শেফ এবং কালিনারি বিশেষজ্ঞরা। সার্বিকভাবে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ হবে একটি আন্তর্জাতিক মানের মূলধারার আয়োজন। এ আয়োজনে সিনেটর থেকে শুধু করে যুক্তরাষ্ট্রের নানা সেক্টরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।

আমরা বাংলাদেশের খাবার এবং সংস্কৃতিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই

শেফ খলিলুর রহমান বলেন, আসলে ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজনের পেছনে নিশ্চিতভাবে আমাদের একটি উদ্দেশ্য আছে। আমরা জানি, খাবার (ফুড) হচ্ছে এমন একটি পণ্য যা একটি দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। খাবারকে বলা হয় ‘কালচারাল অ্যাম্বেসেডর’ অর্থাৎ সংস্কৃতির দূত। আর তাই ‘খাবারের সংস্কৃতি’র (কালচার) মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের খাবার এবং সংস্কৃতিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই। একইসঙ্গে আমরা নিজেরাও বিশ্বের নানা প্রান্তের বৈচিত্র্যময় খাবারের সঙ্গে পরিচিত হতে চাই। ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ হবে প্ল্যাটফর্মটি বিশ্বের বৈচিত্র্যময় খাবার ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ প্ল্যাটফর্মটি বিশ্বের বৈচিত্র্যময় খাবার ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাবে। তবে প্রধান উদ্দেশ্য থাকছে, বাংলাদেশের খাবারকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা। বাংলাদেশের আকর্ষণীয় এবং মুখোরচক সব খাবার এবং খাবারের সংস্কৃতিকে আমরা বিশ্বজুড়ে পরিচিত করতে চাই।

কালিনারি পেশাকে আরো বেশি জনপ্রিয় করতে চাই

শেফ খলিল বলেন, পাশাপাশি কালিনারি পেশাকে আরো বেশি জনপ্রিয় এবং নতুন প্রজন্মকে এই পেশায় আগ্রহী করাও আমাদের এই আয়োজনের আরেকটি উদ্দেশ্য।

‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ বিশ্ব কালিনারি শিল্পে সম্মানীয় অ্যাওয়ার্ড হবে

তিনি বলেন, আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ সেই স্বপ্নযাত্রার প্রথম পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, ‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’-এর মতো একদিন ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ও বিশ্বের কালিনারি শিল্পের অন্যতম গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানীয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে। ‘আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ড’ বিশ্ব কালিনারি শিল্পে একসময় সবচেয়ে সম্মানীয় অ্যাওয়ার্ড হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের এই যাত্রায় আপনাদের সবার সহযোগিতা এবং সমর্থন প্রত্যাশা করছি।

শেয়ার করুন