০৪ জুলাই ২০১২, বৃহস্পতিবার, ৬:০০:০২ পূর্বাহ্ন


অস্থির জাপাকে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
অস্থির জাপাকে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আ.লীগ


আওয়ামী লীগ মনে করে সব দিক থেকে মাজা ভাঙ্গা জাপা এখন কার্যত আরো দুর্বল হয়ে গেছে। যদিও গত পনের বছরে কখনোই জাপা আওয়ামী লীগের জন্য বিপদজ্জনক ছিলো তবে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে দলটি (জাপা) মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগের শীর্ষরা মনে করে জাপা এখন না যেতে পারবে পারে ডানে না পারে বামে। তাদেরকে কৌশলে মূলত অস্থির করে রাখা হয়েছে, যেনো মাঠে আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র সাথে কোনো ধরনের জোট পাকাতে না পারে। জাপা’র অবস্থান এখন বলা চলে সব দিক থেকে অস্থির। অস্থির জাপাকে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে আওয়ামী লীগ। এমনটাই জানা গেছে, রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সূত্র থেকে। 

অস্থির জাপা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরে জাপা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের বির্তক সৃষ্টি করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে জাপা’র বিশেষ করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিভিন্ন নাটকের জন্ম দেন। কখনো এমন প্রচরণা চালানো হয় যে দলটি আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। যোগ দিতে পারে সে-সময়ে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনাদের সাথে মাঠের একদফা আন্দোলনে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভারত সফর করে আসেন। এরপর থেকে জাপা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ পর্যন্ত একটি বিশেষ আবহ তৈরি করে। কঠিনভাবে ধারণা দেয়া হয় যে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের খুবই শক্তিশালি অবস্থানে আছেন। এর পাশাপাশি তার নেতৃত্বাধীন জাপাকে নিয়ে যাওয়া হবে বাংলাদেশে একেবারে ক্ষমতার কাছাকাছি। আর তা না হলেও জাপাকে একটি শক্তিশালি বিরোধী দলের আসনে বসানো হবে। এই ধরনের আবহে নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের বিপ্লবী ভাব চলে আসে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ধারণা জন্মে জাপা’র দেবতাতুল্য জি এম কাদের আওয়মী লীগকে একটি রাজনৈতিক শিক্ষা দেবে। নির্বাচনে অংশ না নেয়ার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটিকে একটি শক্তিশালি অবস্থানে নিয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ব্যাপক স্নায়ুচাপের মুখে পড়ে। এবং তাড়াতাড়ি তাদের রাজনৈতিক চালে জাপাকে কাবু করে মাত্র ২৬ আসনে সমঝোতা নামে নির্বাচনে অংশ নেয়ার দিকে ধাবিত করে। এমন নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাপার ধারণা ছিল তারা আওয়ামী লীগের সাথে ২৬টি আসনে সমঝোতার বাইরেও আরো কয়েকটি আসন তারা বাগিয়ে নেবে। কিন্তু তাদের মাথায় একটুও আসেনি কি হতে পারে তাদের সামনে। শেষ বিচারে ১১টি আসন নিয়েই জাপার জি এম গ্রুপকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। 

এবার ভাবীর ধাক্কা 

কিন্তু ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন ঘটনার জন্য দায়ি করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে এখন জাপা’র একটি অংশ মাঠে নেমে গেছে। জি এম কাদের, চুন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। নির্বাচনে ভরাডুবির কারণে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দিয়েছেন। গত ২৮ জানুয়ারি রোববার গুলশানের বাসভবনে মতবিনিময় সভার পর বিজ্ঞপ্তিতে এই দায়িত্ব নিলেন রওশন। আবার দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’র নিবন্ধন নিয়ে টানাটানি শুরুও হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। গত রোববার দলটির প্রধান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন এরশাদপত্নী রওশন। আগামী দুই মার্চ নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে নতুন মহাসচিবও নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। নতুন কমিটি ঘোষণার পরদিনই নির্বাচন কমিশনে লাঙ্গল প্রতীকে দল পরিচালনার চিঠি দেওয়া হয়েছে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পক্ষ থেকে। আর এভাবেই চলছে জাপা’র অস্থির রাজনীতি। 

আওয়ামী লীগ কি চায়? 

সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নানা ইস্যুতে জাপাতে যে অস্থিরতা চলছিল এই গণপদত্যাগ সেই অস্থিরতারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জাপায় এমন অস্থিরতাই চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে করে একদিকে জনগণকে সমসাময়িক অনেক ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে রাখা যাবে। আবার একটি শক্ত বিরোধী দল হবার খায়েশ থেকেও জাপা’র জি এম কাদেরকে দাবিয়ে রাখায় যাবে। কেননা ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর খোদ সরকারের শীর্ষ মহল থেকেই সাংবাদিকদের এমক প্রশ্নের জবাবেই তার উত্তর মিলেছে। গণভবনে নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সাফ বলে দিয়েছেন যে বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্র নেই, মানেন না শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে কথা ঠিক নয়। বরং জনগণ যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সেটিই বড় বিষয় বলে দাবি করেছেন তিনি। এমন বক্তব্যে ফুটে উঠেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংসদে আসলে কোনো শক্ত বিরোধী দলের উপস্থিতি চায় না। তারা মনে করে মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ তাদের সমমনারা আবোরা গর্জে উঠেছে। আড়াই মাস না যেতে রাজনীতির মাঠ গরম করে ফেলার মতো পরিস্থিতি খোদ রাজধানীতেই গ্রাউন্ড তৈরি করে ফেলার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন মুহূর্তে সংসদের বিরোধী দল যদি উচ্চবাচ্য শুরু করে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়তে পারে। আর একারণে তারা আসনের দিক থেকে যেমন ছোট্ট তেমনি মাঠেও কম ক্ষমতাসম্পন্ন বিরোধী দলকেই দৃশ্যমান রাখতে চায়। জাপা তেমনি একটি বিরোধী দলে রূপান্তরিত হতে দেখে ফুরফুরে মেজাজে আছে আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুন