১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৫৮:১৯ পূর্বাহ্ন


দলীয় পরিচয়ে বছরের পর বছর অনেকে কাজ করছেন
কনসাল জেনারেলের অফিসে আ.লীগ নেতৃবৃন্দের ষড়যন্ত্র
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৮-২০২৪
কনসাল জেনারেলের অফিসে আ.লীগ নেতৃবৃন্দের ষড়যন্ত্র


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে যান। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। তিনি জাতীয় সংসদকে বিলুপ্ত করে আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথবাক্য পাঠ করান। প্রধান উপদেষ্টার পদে রয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আরো রয়েছেন ১৭ জন উপদেষ্টা। এ উপদেষ্টারা গত ৮ আগস্ট শপথবাক্য পাঠ করেন এবং দায়িত্ব বুঝে নেন। নানাবিধ কারণ এবং ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ইন্ধনে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশে। ভারতের চ্যানেলগুলোও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখার জন্য লাগাতার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তাদের বি টিমকে ক্ষমতায় বসানোর চক্রান্ত এখনো করছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি ক্যু ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ ক্যু ছিল জুডিশিয়াল ক্যু। ছাত্র-জনতা এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কারণে সে ক্যু ব্যর্থ হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও গত ১৫ বছর রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান অনেকটা দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করা হয়েছে। দলীয় লোকজন নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই টানা ২০২৪ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায়। দেশ-বিদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের লোকজনের কারণেই এখনো ষড়যন্ত্র করার সাহস দেখানো হচ্ছে। যার ব্যতিক্রম নয় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে এখনো আওয়ামী লীগের লোকজন কাজ করছে। গত কয়েক বছরে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যেন দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মোহাম্মদ নাজমুল হুদা নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব নেওয়ার পর। এমন দলীয় কনসাল জেনারেল এর আগে দেখা যায়নি। তাকে সব সময়ই শেখ মুজিবুর রহমানের কোটপিন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা এবং আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকদের বৈঠকখানা ছিল। কোনোদিনই প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাছাড়া অধিকাংশ কর্মচারী শেখ পারিবারের বা আওয়ামী লীগের এমপি বা মন্ত্রীর আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে দাপট দেখাতো। তারা মানুষকে মানুষই মনে করতো না। আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্ষেত্রে ছিল সাত খুন মাফ। তারা যখন খুশি তখন যেতেন এবং সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাতেন। বিরোধীদলীয় কাউকে দেখলেই তারা হাতির সাত পা দেখানোর চেষ্টা করতেন। যত ধরনের হয়রানি আছে তা করতেন। তারা যদি সরকারি কর্মচারী হতো, তাহলে তা করতেন না। দলীয় নিয়োগের কারণেই তারা যা খুশি তা করতেন। একটি সূত্রে জানা যায়, কনসাল জেনারেল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসানের সলাপরামর্শেই চলতেন এবং এখনো চলছেন। তিনিই যেন কনস্যুলেটের বস!

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখনো কাউকে পরিবর্তন করা হয়নি। তার পদত্যাগের কয়েক দিন পরই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পাতি নেতাদের প্রতিবাদের মুখে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলা হয়। একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশে কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। কানাডা এবং লন্ডন দূতাবাসেও বৈঠক করা হয়েছে। নিউইয়র্কের বৈঠক নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের দ্রুত বদলি না করলে সমস্যা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, সহ-সভাপতি ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, হাজি এনাম, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীসহ আরো কয়েকজন। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, আমরা গিয়েছিলাম কনসাল জেনারেলের কাছে। আমরা তাকে জানিয়েছি শেখ হাসিনার ছবি সরানো হয়েছে, তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই, কিন্তু জাতির জনকের ছবি কেন নামালো হলো। আমরা তাকে জাতির জনকের ছবি লাগানোর অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কনসাল জেনারেল আমাদের বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ এলে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগাবেন। তিনি আরো বলেছিলেন, এ সময় বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগালে বিএনপির নেতারা এসে আবার গণ্ডগোল করবে।

এদিকে নিউইয়র্ক কনস্যুলেট অফিসে কর্মরত আছেন শেখ হাসিনার আত্মীয় হিসেবে পরিচিত আসিফ উদ্দিন। তিনি ভাইস কনসালের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কনস্যুলেটে অঘোষিত সম্রাট হিসেবে পরিচিত। গত ১৬টি বছর এ অফিসে তার কথায় সবকিছু পরিচালিত হতো। পেশাদার সাংবাদিকদের কালোতালিকা তিনি প্রণয়ন করতেন। তা জাতিসংঘস্থ বাংলাদেশ মিশন ও কনস্যুলেট অফিস সংরক্ষিত থাকতো। সরকারবিরোধী সাংবাদিকের তকমায় পেশাদার সাংবাদিকরা সরকারি এ দুই অফিসে ছিলেন নিষিদ্ধ। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্লারিক্যাল পদে আত্মীয়তার সূত্রে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার চাকরি চলে যায়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাকে পুনর্বহাল করা হয়। তাকে পদোন্নতি দিয়ে কূটনৈতিক পদমর্যাদায় সেকেন্ড সেক্রেটারি করা হয়েছে গেল বছর। তিনি অবশ্য পরিচয় দিতেন ভাইস কনসাল হিসেবে। ননক্যাডার পর্যায় থেকে এমন পদোন্নতির নজির অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে নেই। তিনি প্রথম শ্রেণির কর্মচারীর মতো বাসা ভাড়া নিতেন, বেতন নিতেন, টেলিফোন বিল নিতেন, নিতেন আরো সব সরকারি সুযোগ। গত শুক্রবারও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া আসিফ কন্স্যুলেট অফিসে কাজ করেছেন। শেখ হাসিনার নিকটতম আত্মীয় এমন একজন ব্যক্তির উপস্থিতি সরকারের অনেক গোপন তথ্যাদি বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। দলীয় পরিচয়ে আরো কাজ করছেন আকিব হাসান এবং মহিলা এমপির ভাইয়ের পরিচয়ে কাজ করছেন তাসলিমুল ইসলাম।

শেয়ার করুন