এইচ-১বি ভিসায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত ২ ডিসেম্বর বিদেশে কর্মরত সব দূতাবাস কর্মকর্তাকে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে যে, যেসব ভিসা আবেদনকারী অতীতে ফ্যাক্টচেকিং, কনটেন্ট মডারেশন বা ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি-সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ছিলেন, তাদের ভিসা দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি-এসব কাজ আমেরিকানদের ওপর সেন্সরশিপ আরোপের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এ ধরনের পেশাগত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ জাতীয় স্বার্থের বিরোধী হতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ফ্যাক্টচেকিং ও সংশ্লিষ্ট কাজের বহু অংশ আমেরিকান নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করে, যার ফলে মানুষ তাদের ইচ্ছামতো মতপ্রকাশের অধিকার হারায়। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন গত ৩ ডিসেম্বর ঘোষণা করেছে যে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশিদের জন্য ব্যবহৃত এইচ-১বি ভিসার আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে আরো কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী সব মার্কিন দূতাবাসে পাঠানো এক গোপন কেবলে কনস্যুলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আবেদনকারীদের রিজুমি, লিংকডইন প্রোফাইল এবং পূর্বের চাকরির ইতিহাস বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করতে-তারা ভুয়া তথ্য দমন, ভুল তথ্য প্রতিরোধ, কনটেন্ট মডারেশন, ফ্যাক্টচেকিং, অনলাইন সেফটি বা কমপ্লায়েন্স সংশ্লিষ্ট কোনো কাজে জড়িত ছিলেন কি না তা নিশ্চিত করার জন্য।
কেবলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়-যদি কোনো আবেদনকারীকে যুক্তরাষ্ট্রে সুরক্ষিত মতপ্রকাশ বা মুক্ত বক্তৃতার অধিকার দমনমূলক কাজে জড়িত পাওয়া যায়, তবে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের নির্দিষ্ট ধারার অধীনে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। এই নীতি শুধু নতুন আবেদনকারীদের জন্য নয়; পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা এবং পুনরায় আবেদনকারী সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র বলেছেন, আমরা এমন বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চাই না যারা আমেরিকানদের মুখ বন্ধ করবে। প্রেসিডেন্ট নিজেও অতীতে এ ধরনের সেন্সরশিপের শিকার হয়েছেন এবং তিনি চান না কোনো আমেরিকান নাগরিক একই অভিজ্ঞতা ভোগ করুক।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট রিভিউ–সংশ্লিষ্ট কর্মীরা, ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থার সাংবাদিক ও গবেষকরা, এবং অনলাইন সেফটি বা ভুল তথ্য প্রতিরোধ–সংক্রান্ত পেশাজীবীরা। নতুন নীতি কার্যকর হলে তাদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে এইচ-১বি ভিসার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি; দেশটির বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক দক্ষ কর্মী নিয়োগ করে থাকে। যদিও এসব কোম্পানির অনেক নেতাই ট্রাম্পকে সমর্থন করেন, তবু নতুন নীতি প্রযুক্তি খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগকে আরো জটিল করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও ছাত্র ভিসায় কঠোরতা, সোশ্যাল মিডিয়া কার্যক্রম যাচাই এবং এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশাসনের দাবি-এসবই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং অনলাইন সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে অবস্থানের অংশ। তবে সমালোচকরা বলছেন-এই নীতি অস্পষ্ট, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিখাতে দক্ষ কর্মী প্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।