৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৫৩:২২ অপরাহ্ন


দেশজুড়ে অসহনীয় বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের নেপথ্যে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৪
দেশজুড়ে অসহনীয় বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের নেপথ্যে


জ্বালানি সরবরাহ সংকট, ভারতের আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ রফতানির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া খনিমুখের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বিভ্রাট এতো কিছু একই সঙ্গে ঘটায় বিদ্যুৎ চাহিদা এবং সরবরাহে ২৫০০-৩০০০ মেগাওয়াট ঘাটতি দেখা দিয়েছে। 

২৭.৭৯১ মেগাওয়াট গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১৬০০০-১৬৫০০ মেগাওয়াট ছাইড়া মেটাতে পারছে না বিদ্যুৎখাত। জানা গেছে, এখন সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। নতুন সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মাধ্যমে। হাতে পেয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অদক্ষ একটি জ্বালানি বিদ্যুৎখাত। সংকট পথে থাকা এ খাতকে সংস্কার করে সঠিক পথে আনতে বেশ কিছু সময় প্রয়োজন। শেষ খবর উৎপাদনে ফিরেছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পুনরায় চালু হওয়ার অবস্থায় ফিরেছে সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল, জোর তৎপরতা চলছে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের অন্তত একটি ইউনিট চালু করার। এগুলো আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সম্ভব হলে লোডশেডিং অনেকটা সহনীয় হয়ে আসবে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২.০৪৮ মেগাওয়াট। গ্যাস প্রয়োজন কমবেশি ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নিদেন পক্ষে ১৪০০-১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলে ৭৫০০-৮০০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানিকৃত এলএনজিসহ দেশের গ্যাস-সরবরাহ ক্ষমতা ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ, সার, শিল্প সবাইকে চাহিদা সরবরাহ করতে প্রয়োজন ৪২০০-৪৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ভুল পরিকল্পনার কারণে দেশের গ্যাস মাটির নিচে, এলএনজি আমদানি পরিকল্পনা দীর্ঘসূত্রতায় অনিশ্চিত। তদুপরি অদক্ষতার কারণে তিন মাসের অধিক সময় সামিট মালিকানাধীন ভাসমান টার্মিনাল সক্রিয় ছিল না। এখন সক্রিয় হলেও মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করতে দুই-তিন মাস সময় লাগবে।

আদানি গ্রুপের ঝাড়খণ্ড গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এমতাবস্থায় চুক্তির আলোকে বকেয়া মূল্য পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে আদানি। কমিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতেও পারে। অনেকের মতে অস্বচ্ছ এবং একপক্ষীয় চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থে বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিত।

বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ৬৮৩ মেগাওয়াট। পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ি, বাঁশখালী চারটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চালু থাকলে ৪৫০০-৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু কখনো কয়লার অভাবে, কখনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন সীমিত হয়ে পড়ে। আরো একটি উৎপাদন ক্ষমতা তরল জ্বালানি বিশেষত ফার্নেস অয়েলভিত্তিক। ৬ হাজার ৮৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা শুধু ফার্নেস অয়েল বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা। সেখানেও জ্বালানি আমদানি সমস্যা রয়েছে। উৎপাদনকারী বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছে বিপুল বকেয়া রয়েছে বিপিডিবির। অধিকাংশ প্লান্ট অলস বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান করতে হচ্ছে।

এ ধরনের বহুমুখী সমস্যা জর্জরিত অবস্থায় বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতকে উদ্ধার করতে নতুন সরকারকে অনেক সংস্কার করতে হবে। সঠিক পেশাদারদের সঠিক স্থানে পদায়ন করে স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

নিজেদের জ্বালানি বিশেষত গ্যাস এবং কয়লা আহরণ এবং উত্তোলনের বাস্তবসম্মত কার্যক্রম হাতে নিতে হবে, জ্বালানি আমদানির সমস্যাসমূহ দূর করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বৃদ্ধির বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দ্রুত নিতে হবে। স্রেডা, বিপিআই, বিপিআইএম প্রতিষ্ঠালগুলোকে আমলা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে ক্রিয়াশীল করতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে বিইআরসিকে ক্ষমতায়ন করার ব্যবস্থা নিয়েছে। পেট্রোবাংলা এবং বিপিডিবিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি এবং গ্যাস ব্যবহারে কীভাবে কৃচ্ছ্রতা আনা সম্ভব ভাবতে হবে। চুরি, অপচয় রোধ করার জন্য স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে মেধা এবং যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যাবে। সেই সময় পর্যন্ত এ সেক্টরে নতুন সরকার সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারবে।

শেয়ার করুন