০৯ নভেম্বর ২০১২, শনিবার, ৬:৫২:৪৫ অপরাহ্ন


দুই প্যানেলের সংবাদ সম্মেলন
গ্যাঁড়াকলে চট্টগ্রাম সমিতি নির্বাচনের ফল, আবারো সংকট
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১০-২০২৪
গ্যাঁড়াকলে চট্টগ্রাম সমিতি নির্বাচনের ফল, আবারো সংকট ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা


দীর্ঘ অচলাবস্থার পর প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতির বহুল আলোচিত নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া এবং কানেকটিকাটের ৪ কেন্দ্রে দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচর পরিচালনা করেন। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন ছিলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সবাই ছিলেন সন্তুষ্ট। কিন্তু গোল বেঁধেছে ৬টি চ্যালেঞ্জ ভোট। যে কারণে ভোট গণণা শেষেও নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে পারেননি। তবে তারা অন্তর্বর্তী ফলাফল ঘোষণা করেছেন। আন্তর্বর্তী ফলাফল ঘোষণার পূর্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ এম খালেক বলেন, আমরা নির্বাচনের কোন ফলাফল এই মুহূর্তে ঘোষণা করতে পারবো না। তবে এই গুনা পর্যন্ত কারা এগিয়ে আছেন সেই ঘোষণা আমরা দিতে পারবো। তিনি বলেন, ইউনাইটেড ভোটিং সার্ভিস (মেশিন কোম্পানী) আমাদের জানিয়েছেন, ৬টি চ্যালেঞ্জ ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়া নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা যাবে না। এই সময় দুই প্যানেলের প্রার্থী, সমর্থক এবং নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহাব উদ্দিন সাগর, মোহাম্মদ এ হান্নান চৌধুরী, মোহাম্মদ সেলিম এবং রুহুল আমিন। অন্তর্বর্তী ফলাফল ঘোষণায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সহযোগিতা করেন কমিশনের সদস্য শাহাব উদ্দিন সাগর। তিনিৎই জানিয়ে দেন কোন প্যানেলের কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন এবং এগিয়ে রয়েছেন।

ঘোঘিত ফলাফল অনুযায়ী সভাপতি পদে এগিয়ে রয়েছেন মাকসুদুল হক চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১০২৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবু তাহের পেয়েছেন ১০২৬ ভোট। সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এগিয়ে রয়েছেন মোহাম্মদ মুক্তাদির বিল্লাহ। তিনি পেয়েছেন ১১০৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ আলী নূর পেয়েছেন ৯১৬ ভোট। সহ-সভাপতি পদে এগিয়ে রয়েছেন আলী আকবর বাপ্পী ও মোহাম্মদ আইয়ুব আনছারি। তারা পেয়েছেন ১০৬৮ ও ১০২৪ ভোট। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হাজী টি আলম ও ফরিদ আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন ৯৪৬ ও ৯৭১ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ৯৫৮ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই পদে মোহাম্মদ মাসুদ এইচ সিরাজি পেয়েছেন ৯৩৩ ভোট এবং মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ১৪৫ ভোট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ইকবাল হোসেন ভূইয়া ১০৬৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কলিম উল্যাহ পেয়েছেন ৯৫২ ভোট। সহ সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ হারুণ মিয়া ১০৩৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নওশাদ কামাল পেয়েছেন ৮৯১ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ সুমন উদ্দিন ১০১৩ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শফিকুল আলম পেয়েছেন ১০১০ ভোট। সহকারী কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নূরুল আমিন পেয়েছেন ১০২৭ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী তমাল কান্তি টৌধুরী পেয়েছেন ৯৮১ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ ফরহাদ পেয়েছেন ১০৩২। প্রতিদ্বন্দ্বী তানিম মহসীন পেয়েছেন ৯৮৫ ভোট। দপ্তর সম্পাদক পদে শিমুল বড়ুয়া ১০০৩ ভোট পেয়ে এগিয়ে। প্রতিদ্বন্দ্বী অজয় প্রসাদ তালুকদার পেয়েছেন ১০০০ ভোট। সহকারি দপ্তর সম্পাদক পদে ইমরুল কায়সার পেয়েছেন ১০১৮ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ১০০৩ ভোট। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে এনামুল হক চৌধুরী ১০১৭ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী সুশান্ত দত্ত পেয়েছেন ৯৯৩ ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে জাবের শফি ১০১৮ ভোট পেয়ে এগিয়ে। প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল অদুদ পেয়েছেন ৯৯৪ ভোট। সমাজ কল্যাণ পদে আকতার উল আজম ১০৩৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আকতার হোসাইন পেয়েছেন ৯৭৫ ভোট। ক্রীড়া সম্পাদক পদে মোহাম্মদ ইসা পেয়েছেন ১০০৯ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী জাহেদুল আজম পেয়েছেন ১০০৭ ভোট। সদস্য পদে শকেত আলী পেয়েছেন ১০৪৮ ভোট, শাহ আলম পেয়েছেন ১০২১ ভোট, নূরুস সোফা পেয়েছেন ১০১৯ ভোট। নাসির চৌধুরী পেয়েছেন ৯৯২, পল্লাব রায় পেয়েছেন ৯৬১ ভোট ও মাহিম উদ্দিন পেয়েছেন ৯৫৬ ভোট।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৬টি চ্যালেঞ্জ ভোটের মধ্যে ৪টিই ফিলাডেলফিয়া কেন, একটি ব্রুকলীন এবং একটি জ্যামাইকা কেন্দ্রে। ফিলাডেলফিয়া কেন্দ্রের ৪ চ্যালেঞ্জ ভোটার ডিজিটাল আইডি নিয়ে আসেন, ব্রুকলীন কেন্দ্র যিনি চ্যালেঞ্জ ভোট দিয়েছেন তিনি অজীবন সদস্য এবং জ্যামাইকা কেন্দ্রে যিনি চ্যালেঞ্জ ভোট দিয়েছেন তার নামের সমস্য ছিলো। এদিকে গত ২২ অক্টোবার জ্যাকসন হাইটসে উভয় প্যানেল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তারেহ-আরিফ প্যানেল চ্যালেঞ্জ ভোট গুনা করে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান। অন্যদিকে মাকুসদ-সিরাজি অবৈধ ভোট বাতিলের দাবি জানিয়ে চূজান্ত ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান।

মাকসুদ- সিরাজির সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য

আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন গত ২০ অক্টোবর ২০২৪ রবিবার প্রবাসের অন্যতম বৃহত সামাজিক সংগঠনটন চিটাগাং এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। উক্ত নির্বাচনের ফলাফল এবং বেশ কিছু অনিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। আমাদের বিশ্বাস আপনাদের মাধ্যমে উত্তর আমেরিকার সকল চট্টগ্রামবাসী আমাদের বক্তব্য জানতে পারবেন। 

২০ অক্টোবর নির্বাচন হয়েছে মোট চারটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়, তার মধ্যে একটি ব্রুকলীন, একটি কুইন্সের জ্যামাইকাতে বাকী দুইটির মধ্যে একটি কানেক্টিকাটের স্টামপোর্ডে এবং অপরটি পেনসিলভেনিয়ার আপার ডারবিতে। নিউ ইয়র্কে ভোট শুরু হয় সকাল নয়টায় এবং শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটায়, নিউইয়র্কের বাইরের স্টেট গুলোতে শুরু হয় সকাল দশটায় এবং শেষ হয় বিকাল ছয়টায়। ভোট গ্রহণ শেষ করে প্রতিটি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্র ভিত্তিক ঘোষণা করা হলেও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করার ক্ষেত্রে গড়িমসির করতে থাকে, নিউইয়র্ক নিউজার্সী, কানেক্টিকাট ও পেনসেলভিনিয়াসহ বিভিন্ন স্টেট থেকে শতশত চট্টগ্রামবাসী যখন চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনি বলা হলো পেনসিলভেনিয়াতে চারটি চ্যালেঞ্জ ভোট রয়েছে এবং ঐ ভোট গুলো গণনা করতে হবে, যা আমাদের প্যানেলের প্রতিনিধির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, আমরা যখন জানতে চাই কেমন চ্যালেঞ্জ ভোট তারা জানাই ঐ চারটি ভোট যারা দিয়েছেন তারা আইডি দেখাতে পারেনি তাই চ্যালেঞ্জ ভোট হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তখন শতশত চট্টগ্রামবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে, আমাদের অপেক্ষার পালা বেড়ে যেতে থাকে, রাত তখন আনুমানিক ১১ টার কাছাকাছি তখন পেইজ বুক লাইফের মাধ্যমে দেখতে পেলাম নির্বাচন কমিশনার ফলাফল ঘোষণা করছেন এবং ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সভাপতিসহ মাকসুদ মাসুদ প্যানেলের ১৩ জন প্রার্থী এবং সাধারণ সম্পাদকসহ তাহের আরিফ পরিষদের ৬ জন প্রাার্থী জয়ী হয়েছেন। তখন চট্টগ্রামবাসী বিজয় উৎসব করতে থাকে। এবং মিছিল সহকারে পুরো চার্চ ও ম্যাকডোনাল্ড প্রদক্ষিণ করে। পরক্ষণেই জানতে পারলাম গুটি কয়েক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে ধরেছে এবং বলেছে এই নির্বাচনের ফলাফল তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন! কারণ তারা চাই পেনসিলভেনিয়াতে অবৈধ ভাবেগ গ্রহণ করা চারটি ভোট গণনা করতে হবে। 

নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় ৪৮ ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেনি! যা উত্তর আমেরিকার সকল চট্টগ্রামবাসীদের চরমভাবে হতাশ করেছে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত বিধিমালাতে স্পটভাবে বলা আছে নো আইডি, নো ভোট। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে বিশাল আকারে একাদিক সাইন ছিল। তাহলে আইডি ছাড়া ভোট গ্রহণ কেন? নির্বাচন কমিশন নিজেরাই নিজেদের দেয়া বিধিমালা ভঙ্গ করেছেন।

দীর্ঘ দশ বছর চট্টগ্রাম সমিতিতে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং গত ৮ বছর কোন নির্বাচন হয়নি, সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিনের গ্রুপিংকে বন্ধ করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয় এবং এই অন্তবর্তীকালীন কমিটি দীর্ঘ ১৮ মাস কাজ করেছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সংগঠনটিকে গতিশীল করার জন্য। এই নির্বাচন কমিশনার ৫ মাসের ও বেশী সময় নিয়ে নির্বাচন করেছে, তাদের এত সময় ক্ষেপণ করার পরও অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে পুনরায় প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য প্যানেলের আজ্ঞাবহ আরেকজন নির্বাচন কমিশনার নতুন ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়েছেন। আমরা গত দুদিন ধরে অপেক্ষা করেছি নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণা শুনার জন্য কিন্তু কোন ঘোষণা এখনো শুনতে পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে আজ আপনাদের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল চট্টগ্রামবাসীদের জানাতে চাই তাদের আসল চরিত্র। 

মেশিনের যে ফলাফল এবং নির্বাচনের দিন কমিশনের পক্ষ থেকে যে ফলাফল আমাদেরকে হস্তগত করা হয়েছে তাতে আমরা বেসরকারি ভাবে ১৩টি পদে জয়ী হয়েছি, অপর প্যানেল ৬ টি পদে জয়ী হয়েছেন।

আমরা আপনাদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করতে চাই চট্টগ্রামবাসী দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারিনি এবং গত ২০ অক্টোবর অনেক উৎসাহভাবে ভোট দিয়েছে বিশেষ করে নিউইয়র্কে। সুতরাং মানুষের দেয়া গণতান্ত্রিক রায় পরিবর্তনের কোন রকম চেষ্টা করবেন না। 

শেয়ার করুন