০৯ নভেম্বর ২০১২, শনিবার, ০১:৪০:৫৫ অপরাহ্ন


জামায়াত দ্বারা ইসলামের বেশি ক্ষতি হয়েছে : বাবুনগরী
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২৪
জামায়াত দ্বারা ইসলামের বেশি ক্ষতি হয়েছে : বাবুনগরী বক্তব্য রাখছেন আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী


রাজনীতির মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। শঙ্কায় ধুঁকছে দল ও দলটির নেতাকর্মী। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো নেই কোনো দল। ওই স্থানটা দখলে আপ্রাণ চেষ্টা করছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। 

হঠাৎ করেই স্বপ্ন পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এককভাবে জামায়াত এখনও জাতীয় নির্বাচন করবে কি না ঠাহর করা যাচ্ছে না। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর জামায়াতে ইসলামী এমনভাবে আবির্ভূত হয়, যেন বিএনপিও জামায়াতের শক্তির সামনে তুচ্ছ। অবশ্য জামায়াত তাদের শক্তিমত্তা প্রকাশের নেপথ্যে ছিল সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে এক জোট হয়ে একটি নতুন প্লাটফর্ম গঠন। এটা করতে পারলে লড়াই হতেও পারতো কিছুটা। কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার মতো সিট এরপরও হওয়ার সুযোগ নেই এমনটা বলছে নানা পরিসংখ্যান।

জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য প্রক্রিয়ার চেষ্টার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকও। কিন্তু ইসলামী দলসমূহ নিয়ে যে ঐক্যর স্বপ্ন সেটাতে কুঠারাঘাত করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির বাবুনগরী জামায়াতের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। 

জামায়াত মদিনার ইসলাম নয়, মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে মন্তব্য করে দলটির কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। বাংলা ও উর্দু মিশ্রিত হেফাজত আমিরের এ বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

কী বলেছিলেন বাবুনগরী 

গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ফেনী মিজান ময়দানে দেওয়া বক্তৃতায় মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, জামায়াতে ইসলাম সকল ভ্রান্ত ফেরকাসমূহের মধ্যে নিকৃষ্ট দল। এমনকি তারা কাদিয়ানী সম্প্রদায় থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা কাদিয়ানীদের চেয়েও জামায়াত ইসলামের বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমরা জামায়াতে ইসলামীকে ইসলামের জামায়াত মনে করি না। জামায়াতে ইসলামী মদিনার ইসলাম চায় না, তারা মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি আরও বলেন, হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে ইসলাম হেফাজতের জন্য। আমাদেরকে ভ্রান্ত আক্বিদার দলসমূহকে মোকাবেলা করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। আমিরে হেফাজতের বক্তব্যের এই পর্যায়ে হাজার হাজার ভক্ত, হেফাজত কর্মী, সাপোর্টার, সাধারণ জনতা- ঠিক ঠিক বলে বক্তব্যকে সমর্থন জানান। 

ফেনী জেলা হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- হেফাজত মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামবাদী, মাওলানা নূর হোসাইন নূরানি প্রমুখ।

হেফাজতে ইসলামীর বিবৃতি 

এর আগে গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির ও দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমীও একই বিষয়ে কথা বলেছেন। সংগঠনের ব্যানার ও পদবি ব্যবহার করে হেফাজতের নীতি-দর্শন থেকে কোনো নেতাকর্মীর বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। 

হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, গঠনতান্ত্রিকভাবে হেফাজতের অরাজনৈতিক অবস্থানের ওপর যে অঙ্গীকার রয়েছে, সেটাকে সর্বাত্মকভারবে বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে দেওবন্দী ধারার পূর্বসুরী হক্কানী উলামায়ে কেরামসহ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের যে মতাদর্শিক অবস্থান, সেখান থেকেও হেফাজতে ইসলাম বিচ্যুত হবে না।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রায় সময়ই বলতেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনই রাজনীতিতে জড়াবে না, ক্ষমতার মসনদে বসবে না। হেফাজত ক্ষমতায় যেতে কারো সিঁড়ি হিসেবেও ব্যবহৃত হবে না। তবে হেফাজতের ইমান-আকিদার নীতি-আদর্শকে অবজ্ঞা করে কেউ ক্ষমতার মসনদে থাকতেও পারবে না।’

প্রতিষ্ঠাতা আমিরের এই দর্শন কঠোরভাবে অনুসরণ করে কোনোরূপ ছাড় না দিয়ে এর ওপর দৃঢ় থাকা সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর কর্তব্য।

শেয়ার করুন