এই বিশ্বে কঠিন কাজের একটি হলো পিতা কাঁধে পুত্রের লাশ। জন্মের পর মৃত্যু এটা নিশ্চিত এবং আল্লাহর বিধান। এই বিধানকে আমাদের সবার মেনে নিতে হয়। আমরা মেনেও নিই। কিন্তু সব মৃত্যুকে মেনে নেওয়া সহজ নয়। যেমন বাবা-মার জীবিত অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু। তা-ও তরুণ অবস্থায়। এমন একটি মৃত্যুতে পুরো কমিউনিটি শোকে শোকাহত। কোনো বাক্য দিয়ে এই মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। শোকে মুহ্যমান অনেকেই।
বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদ রেজা চৌধুরী এবং সাবেক ব্যাংকার সুরাইয়া খানমের একমাত্র পুত্র তানজির রেজা চৌধুরীর নামাজে জানাজা শনিবার (১৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে (জেএমসি) অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজ শেষে তানজিরের মরদেহ লং আইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পার্ক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে তানজির রেজা চৌধুরী গত ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকালে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডস্থ নরশোর হাসপাতালের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৩৯ বছর। মৃত্যুকালে তানজির স্ত্রী অ্যাটর্নি সুরাইয়া রহমান ও মা-বাবাসহ অনেক আত্মীয়স্বজন রেখে যান।
তানজির রেজা চৌধুরীর নামাজে জানাজায় সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক বিদেশিও সমবেদনা জানাতে জেএমসিতে উপস্থিত হন। জেএমসিতে তার মরদেহ আনার পর শেষবারের মতো তাকে দেখার সময় তার মা-বা সহ অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় বাবা মাহমুদ রেজা চৌধুরী পুত্রের কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করেন। এরপর জানাজা নামাজের আগে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং একমাত্র পুত্রের জন্য দোয়া কামনা করেন। এরপর জেএমসির ইমাম ও খতিব মির্জা আবু জাফর বেগ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এদিকে মাহমুদ রেজা চৌধুরী জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে তানজির সস্ত্রীক থাইল্যান্ড বেড়াতে যায়। সেখানে অসুস্থবোধ করলে দ্রুত নিউইয়র্ক ফিরে আসে। পরে তানজির চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয় এবং শরীর খারাপ বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শে লং আইল্যান্ডের নর্থশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার হার্টে একটি ৯০ শতাংশ এবং অন্যটি ১০০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে রিং পরানো হয়। এরপর হাসপাতালে সপ্তাহখানেক থাকার পর চিকিৎসকরা তাকে বাসায় বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয়। গত ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তানজিরের শারীরিক অবস্থা স্টাবল ছিল। এদিন মাহমুদ রেজা চৌধুরী সস্ত্রীক পুত্রকে দেখতে তার লং আইল্যান্ডের বাসায় দেখতে যান এবং দীর্ঘসময় মা-বাবা পুত্রের সঙ্গে সময় কাটান। এটাই ছিল পুত্র তানজিরের সঙ্গে মা-বাবার শেষ দেখা ও কথা। এর পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুত্রবধূ অ্যাটনি সুরাইয়া রহমান জরুরি ফোনকলে জানান যে, তানজিরের অবস্থা খারাপ এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শোক প্রকাশ : কমিউনিটির পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদ রেজা চৌধুরীর পুত্র বিয়োগে নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাংলা মিডিয়ার সম্পাদক, সাংবাদিক, কবি-লেখক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।