১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪৪:৩৫ পূর্বাহ্ন


দেশকে শাবনূর
লুকোচুরি ছিল কথাটি নিয়ে আপত্তি আছে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১২-২০২৪
লুকোচুরি ছিল কথাটি নিয়ে আপত্তি আছে চিত্রনায়িকা শাবনূর


নব্বইয়ের দশকের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকাদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে শাবনূর যেভাবে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন, এতে তাকে আদর্শ হিসেবে মানেন এই প্রজন্মের অনেক নায়িকা। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতিভাধর সেই চিত্রনায়িকার জন্মদিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর। জন্মদিন এবং বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: ১৭ ডিসেম্বর আপনার জন্মদিন। এই দিনটিতে আপনার উপলব্ধি কি?

শাবনূর: এখনো আমাকে সবাই এতটা ভালোবাসে, এটা উপলব্ধি হয়। সহকর্মী, ভক্তদের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে এবং এই ভালোবাসা আমার জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। আমি তো আসলে মানুষের জন্য কিছুই করতে পারিনি। অথচ সাধারণ মানুষ আমার অভিনয় দেখে দীর্ঘদিন ধরে তারা তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। আমি এই প্রাপ্তিটা ধরে রাখতে চাই। 

প্রশ্ন: চলচ্চিত্রে আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ার। এই সময়ে কখনও স্ক্যান্ডাল নিয়ে বিচলিত হয়েছেন?

শাবনূর: নায়িকার জনপ্রিয়তা মানে, তাকে নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হবে। স্ক্যান্ডালও থাকবে। তবে আমি কখনো স্ক্যান্ডাল নিয়ে বিচলিত হইনি। আমি বিশ্বাস করি, যে তারকার জনপ্রিয়তা যত বেশি, তাকে ঘিরে আলোচনাও তত বেশি হবে।

প্রশ্ন: বিয়ে, সংসার নিয়ে আপনার মধ্যে সব সময়ই লুকোচুরি ছিল। এখনকার অবস্থা কি?

শাবনূর: লুকোচুরি ছিল কথাটি নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কারণ কিছু বিষয় দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা না করেই হয়েছে। দেখা গেছে একটা বিষয় চূড়ান্ত হবে, অথচ সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি হঠাৎ করে। তখন আর বিষয়টি সবাইকে আয়োজন করে জানানো হয়নি। আমি ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনীক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল করেছিলাম এবং পরবর্তী বছরে ২৮ ডিসেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। তবে বিয়ের পর ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে উপস্থিতি কমে যায় এবং ২০১৩ সালে ছেলে আইজান নিহানের জন্ম হয়। ২০২০ সালে ডিভোর্স হয় আমাদের। 

প্রশ্ন: ক্যারিয়ারে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় আপনি অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলেন। আলাদা কোনো কারণ ছিল?

শাবনূর: আমার ভাই-বোনসহ সবাই অস্ট্রেলিয়ায়। মূলত আমার ছেলের জন্য সেখানে গিয়েছি। নিজের কথা কখনো ভাবিনি। আমার জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখন ভেবেছি- আমার জীবনে তো অনেক কিছু হয়েছে, এখন তো ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। বলা চলে, ছেলের জন্য তুঙ্গে থাকা ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছি।

প্রশ্ন: বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় কেমন জীবনযাপন করছেন?

শাবনূর: এখন অস্ট্রেলিয়াতে পরিবারসহ বসবাস করছি। এখানে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। মাঝে মাঝে ছেলেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে ঘুরতে বের হই। ছেলের স্কুলের দেখভালও আমি নিজেই করি। সবকিছু মিলিয়ে এখানে বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং সাংসারিক কাজকর্মে সময় কাটে দারুণভাবে।

প্রশ্ন: নতুন করে সংসার শুরুর কোনো পরিকল্পনা আছে?

শাবনূর: আপাতত নতুন করে সংসার শুরুর কোনো পরিকল্পনা নেই। এখন আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ছেলেকে একজন মানবিক এবং মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আইজানকে মানবিক মূল্যবোধের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে আমার নিজেকে সার্থক মানুষ মনে হবে। আমার মনে হয় পৃথিবীর যে কোনো মা-বাবাই তার সন্তানের মাঝে নিজের ভালো লাগাগুলো দেখা চেষ্টা করেন। আমিও তাদের থেকে ব্যতিক্রম নই। 

প্রশ্ন: অভিনয় ক্যারিয়ার এবং প্রভাব সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?

শাবনূর: অভিনয় দক্ষতা এবং বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছি। নতুন যারা কাজ করছেন তাদের অনেকে আমার কাছে পরামর্শ চান, ভালো লাগা, মন্দ লাগা শেয়ার করেন। কেউ কেউ আমাকে অনুপ্রেরণা হিসাবে মানেন। সব কিছুই আমাকে কাজে ফিরে আসার উৎসাহ দেয় 

প্রশ্ন: তো, আপনি কি কাজে আগের মতো সক্রিয় হবেন?

শাবনূর : আগের মতো তো আর এখন সক্রিয় হওয়া সম্ভব না। তবে সবকিছু ঠিক রেখে যতটা সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করব। এই মধ্যে ‘রঙ্গনা’ নামের একটি সিনেমাতে অভিনয় করেছি। এটি পরিচালনা করছেন আরাফাত হোসাইন। কাজের সময় চেষ্টা করেছি দর্শকরা আমার উপর পূর্বে যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ছিলেন সেটা যেন ঠিক থাকে। 

প্রশ্ন: যার সিনেমা দিয়ে ফিরছেন তিনি নতুন। এর পেছনে কি কোনো রহস্য আছে?

শাবনূর: বরাবরই নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করি। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, আজাদী হাসানাত ফিরোজসহ আরো অনেক নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। একসময় আমিও নতুন ছিলাম। আর আমি মনে করি, নতুনদের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ নতুনরাই ভালো করে।

প্রশ্ন: শাকিব খানের সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন, এখনো তার সঙ্গে কাজ করতে চান?

শাবনূর: শাকিব এখন সুপারস্টার। সে আমার ভালো বন্ধুও। অনেক কষ্ট করে শাকিব এতদূর এসেছে। আমি দেখেছি, শুটিংয়ের সময় শাকিব কখনো বসেনি। কাজের বিষয়ে সে খুব সিরিয়াস। তার সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা বেশ ভালো। পরিচালক ও প্রযোজক যদি আমাদের নিয়ে কাজের পরিকল্পনা করেন, অবশ্যই করব।

শেয়ার করুন