কানেকটিকাটের ওয়াটারবেরি শহরের ক্যাম্পবেল হাইটস মিডল স্কুলে ১৩ বছর বয়সী মুসলিম যমজ ছাত্রীর ওপর ঘৃণাত্মক আক্রমণের অভিযোগে ১২ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে অভিযুক্ত ওই মেয়েটির বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিগ্রিতে ধর্মান্ধতা এবং পক্ষপাতের ভিত্তিতে ভয় দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ঘৃণামূলক অপরাধের অভিযোগেও অভিযুক্ত করেছে । এই ঘটনা ঘটেছে ২৮ মার্চ যেখানে শিক্ষার্থী এবং তার সহপাঠীরা মুসলিম ছাত্রীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ চালায়। পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনায় জানা যায় যে, এই আক্রমণটি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কর্তৃক মুসলিম যমজ ছাত্রীদের পিটুনি, কিল এবং হিজাব টেনে খুলে ফেলা হয়। হামলাটি ঘটে যখন ছাত্রীরা তাদের জিম ক্লাসে লকার রুমে ছিলেন। কানেকটিকাটের মুসলিম অধিকারকর্মী ফরহান মেমন জানান, হামলাকারীরা মুসলিম ধর্মীয় পরিচয় এবং হিজাবকে লক্ষ্য করে শারীরিক আক্রমণ চালিয়েছে। হামলায় একজন ছাত্রীর মুখে আঘাত ও ব্রুইস এবং অন্যজনের গলায় আঁচড় পড়ে। এক ছাত্রী জানায়, হামলাকারী তার গলায় কিছু ঠেকিয়ে তাকে আহত করেছে, ফলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওয়াটারবেরি পুলিশ, শহরের কর্মকর্তারা এবং স্টেট অ্যাটর্নি অফিস এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, এই হামলার তদন্তের পর এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আক্রমণটি ধর্মীয় এবং জাতিগত বিদ্বেষের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছে, যা আইনগতভাবে ঘৃণামূলক অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অভিযুক্ত ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীকে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডিগ্রির ঘৃণামূলক অপরাধের ভিত্তিতে আদালতে হাজির করা হয়।
এটি প্রথমবার নয়, যমজ ছাত্রীরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় এবং হিজাবের কারণে সহপাঠীদের বিদ্বেষ এবং হেনস্তার শিকার হয়েছেন। কেয়ার জানায় যে, হিজাব পরার কারণে ছাত্রীদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন অপমানজনক মন্তব্য, হাস্যকর আচরণ এবং একাধিক ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল। গত কয়েক সপ্তাহে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাদের আরব, মুসলিম এবং হিজাব সম্পর্কিত গালিগালাজ ও অশালীন আচরণ করেছে। তাদের ভাষায়, ‘আরব’, ‘মুসলিম’, ‘হিজাব’-এসব শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি স্কুলে আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে এক শিক্ষার্থী তার আঙুল দিয়ে ছাত্রীদের গলায় ‘মৃত্যু সাইন’ দেখিয়েছিল, যা পরে সিএআইআর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আনা হয়। স্কুলের মুসলিম ছাত্রীরা একাধিকবার স্কুলের প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে অবিচারের বিষয়ে অবহিত করেছিল। তবে তারা জানায় যে, এই প্রথম তাদের আক্রমণকারীদের কাছ থেকে হুমকি দেওয়ার পর তারা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করেছিলেন, কিন্তু সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ওয়াটারবুরি পাবলিক স্কুলের অন্তর্বর্তী সুপারিনটেনডেন্ট ড্যারেন শোয়ার্টজ বলেছেন, এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক সম্মান নিশ্চিত করার সুযোগ হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে, তিনি বলেছিলেন যে, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা তাদের প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকার। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের ঘটনার প্রতিক্রিয়া আমাদের স্কুলের মান এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
এই ধরনের ঘটনা কেবল একটি নির্দিষ্ট স্কুলের সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের সমাজে এক গভীর সমস্যা তুলে ধরেছে, যতটা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাব রয়েছে, ততটাই একে অপরকে বাঁচিয়ে রাখার মানবিকতা গুরুত্বপূর্ণ। সিএআইআর এবং স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষের তৎকালীন পদক্ষেপ প্রশংসনীয়, তবে সমাজের প্রতিটি স্তরের নাগরিকদের দায়িত্ব, যাতে একে অপরের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান জানানো হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব, তাদের শিক্ষার্থীদের সহিষ্ণুতা এবং আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।