১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৭:২১:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টে অপপ্রচার
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৫
বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টে অপপ্রচার


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর যে একটা চাপ অনুভব করেছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল। সে চাপ অনেকাংশেই মুক্ত হয়ে গেছেন তারা। যে রাগ-ক্ষোভ বিরাজ করছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে, সেটা হ্রাস পেয়ে অনেকটাই কূন্যের কোঠায় যাচ্ছে। সে স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো চলছে বিভিন্ন মহলের। 

১৬ বছর একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে আওয়ামী বিরোধীদের ওপর যে ব্যাপক হত্যা, গুম নির্যাতন চালিয়েছিল আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হবে, সেটা এক বক্তৃতায় বলেছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর একদিনের মধ্যে ১০ লাখ আওয়ামী নেতাকর্মীকে মেরে ফেলবে বিএনপি। ওবায়দুল কাদের মিথ্যাচার করেননি। বিএনপিসহ বিরোধীদলের ওপর যে নির্যাতন দলটি করেছে তৃণমূল পর্যন্ত, তার রেজাল্ট ওরকমই হওয়ার কথা। কিন্তু বিএনপি সেটা তেমন আচরণ করেনি। 

পক্ষান্তরে বিএনপির দেশকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ধৈর্যধারণ করেছেন। কিন্তু এমন ধৈর্যধারণ এখন উল্টো এক বিভ্রান্তিতে পড়েছে দলের নেতাকর্মী। বিএনপিকে নিয়ে কৌশলে খেলা হচ্ছে, অন্য এক খেলা। কৌশলে মার দেওয়া হচ্ছে দলটিকে। চেষ্টা করা হচ্ছে দলটির ভাবমূর্তি। অপপ্রচার করা হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ভিলেন বানিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সাধারণ নেতাকর্মীরা এখন কোথাও কোথাও নিজেদের উপস্থাপন করতেও লজ্জাবোধ করছেন। শীর্ষনেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে উদাসীন। বিএনপির নেতাকর্মীকে এখন গণহারে চাঁদাবাজ, দখলবাজ হিসেবে উপস্থাপন করে হেয় করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিবাদ হচ্ছে খুবই সামান্য। এতে আড়াল পড়ছে ১৬ বছরে আওয়ামী অপকর্মের সব হিসাবনিকাশ। সমালোচনার সে স্থানে শুধু বিএনপি ও বিএনপি। 

জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগ যেভাবে নাজেহাল হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়, দলটির শীর্ষপদে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যান ও দলের প্রায় সব নেতাকর্মী বিভিন্নভাবে পালিয়ে গেছেন, এতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকলেও কৌশলে ক্ষমতার লোভী কিছু দলের প্ররোচনায় আওয়ামী অপকর্ম ভুলে সেখানে বিএনপির প্রতি সব ফোকাস দেওয়ায় সিস্টেমে আওয়ামী লীগের প্রতি অনেকটাই সহমর্মিতা রূপ নেয়। 

এছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতিপয় উপদেষ্টা অত্যন্ত সুকৌশলে দলটিকে যেভাবে সেফগার্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন, এতে এখন নিরাপদে বের হয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারছেন অনায়াসে। কৌশল শুধু কতিপয় উপদেষ্টাই করেননি, করছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলও। এর মধ্যে বিএনপির কিছু নেতাও আওয়ামী লীগের সময়ে সুবিধাভোগী হয়েছিলেন, তারাও আছেন। প্রশ্ন আসতে পারে বিএনপি নেতা আবার কীভাবে? রাজনীতির শুদ্ধাচারের এ সময় অতি সাধু (দোষ অন্যসব নেতা ও নেতৃত্বের, আমি তো এসবের মধ্যে ছিলাম না, নেইও) এ জাতীয়রা। যাদের কথাবার্তা মোটেও দল হিসেবে বিএনপি ও বিএনপির নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সেভ করার জন্য নয়। 

এ ব্যাপারে বড় ভূমিকায় আওয়ামীপন্থী সুশীল শ্রেণি ছাড়াও ইসলামপন্থী কয়েকটি দলও। জুলাই হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিনের মধ্যেই ইসলাম নামধারী দলের শীর্ষনেতা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়ার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। ফলে ক্ষমতার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ কূন্যস্থানে তিনি টার্গেট তৈরি করেন বিএনপিকে। এক দল চলে গেছে আরেক দল চাঁদা ও দখলদারিত্ব শুরু করে দিয়েছে। এমনকি জুলাই-আগস্টের দুই সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে এক দলের নেতা বলেন, বিএনপি ৮০ ভাগ স্থান দখল করে নিয়েছে। আর কী বাকি। ক্ষমতায় যাওয়ার আর দরকার কি, ক্ষমতার প্রায় সবকিছু তো উপভোগ শুরুই করে দিয়েছেন তারা-এমন বক্তব্যও দেন। ওনার এ বক্তব্যই ভাইরাল করেছে তার দলের অনুসারী ও সমর্থকরা। অতীতেও যারা দখল চাঁদাবাজি করেছেন, তাদেরও ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হবে না। এ জাতীয় বক্তব্য অপপ্রচার চলছে অনবরত। সরাসরি কেউ, ইশারা-ইঙ্গিতেও বলছেন কেউ কেউ। তাদের মুখে আওয়ামী লীগের অপকর্মের কোনো বার্তা নেই। সব বিএনপিকে কেন্দ্র করেই। 

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ পরিকল্পিত প্রচার অব্যাহত রেখেছে। কন্টেইন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে দেখানো হয় কিছু তরুণ চাঁদা তুলছে রাস্তা আটকে অটোওয়ালার কাছ থেকে। উপায়ন্ত না পেয়ে অটোওয়ালা আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে বলতে বলতে যান, ‘এক দল খেয়ে গেছে ১৬ বছর, আরেক দল আবার শুরু করছে ক্ষমতা যাওয়ার লড়াই ও চাঁদাবাজি। আল্লাহ তোদের বিচার করবে।’ 

এসব ভিডিও পরিকল্পিতভাবে তৈরি, যা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিকেও কৌশলে ভাবমূর্তি ও ভিলেন হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস। সাধারণ মানুষ এসব অপপ্রচার ধরতে পারবে না। তবে যারা কন্টেইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত তারা অনায়াসেই ধরে ফেলবেন এটা সাজানো নাটক ও অভিনয়। 

অথচ বিএনপি নয়, ওই স্থানে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে যেসব অপকর্ম, অর্থ পাচার, প্রশাসনে হেন জায়গা নেই, যেটা আওয়ামীকরণ হয়নি, প্রতিপক্ষকে দমন করতে লাখ লাখ লোক যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে, পরিবার-পরিজন হারিয়ে, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে নিঃস্ব, সে কাহিনী বেমালুম চেপে যাওয়া হচ্ছে পাঁচ মাসের ব্যবধানে। এখন আর আওয়ামী লীগ বা তাদের শাসনামলের কথা কেউ মুখেও আনছে না। 

১৬ বছর ক্ষমতার বাইরেই শুধু নয়, বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমিজমা থেকে শুরু করে সম্পদ যেভাবে দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেটা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর উদ্ধার করতে গিয়ে এখন কতিপয় দল বিএনপিকে দখলবাজ বলেও অ্যাখ্যা দিচ্ছে। নির্যাতন হজম করা বিএনপি নেতাকর্মীদের নিজের সহায় সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য উদ্ধার করতে গিয়ে এখন চাঁদাবাজ, দখলদার বলেও অ্যাখ্যা পাচ্ছে। এমনকি পরিকল্পিতভাবে এমনভাবে মিডিয়া ও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে বিএনপির শত শত নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের মতো কঠিন শাস্তিও ভোগ করতে হচ্ছে। 

এ মুহূর্তে বিএনপির একটাই দোষ, নির্বাচন হলে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ক্ষমতায় যাবে। অর্থাৎ ভবিষ্যদ্বাণী। এ হিংসা-বিদ্বেষ বিএনপি বিরোধী চক্রকে হতাশ করে তুলেছে। আওয়ামী লীগ দোষ করেছে সেটা গৌণ বরং বিএনপিকে অনেকেই ‘ভয়ানক’ একটা দল হিসেবে দেখানো শুরু করে দিয়েছে। অথচ বিএনপি তার যে ক’বছর শাসন করেছে, তার সবটা মিলালেও আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের অপকর্মের ২০ ভাগের একভাগও অপকর্মের রেকর্ড নেই। তবু বিএনপি ভয়ংকর, বিএনপি ভিলেন। 

শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যেই নয়, এখন ওয়াজ মাহফিলেও বিএনপিকে নিয়ে বিষোদগার করা শুরু হয়ে গেছে। ভাবখানা এমন বিএনপির চেয়ে সেই পুরোনো আওয়ামী লীগই ভালো। দলটির নেতৃত্বে থাকা এসবের পাত্তা না দিয়ে রিল্যাক্সমুডে স্বপ্নে মন্ত্রণালয় বা কাক্সিক্ষত স্থান দেখা শুরু করে দিয়েছে। অনেক নেতাদের খুঁজেও পাওয়া যায় না। রিল্যাক্সমুডে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা। তুলছেন তৃপ্তির ঢেঁকুর। স্বপ্ন দেখছে নির্বাচনে বিজয়ের ও প্ল্যান-পরিকল্পনায় ব্যস্ত তারা। 

কিন্তু দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার যে সতর্কবাণী দিচ্ছেন যে, আগামী নির্বাচন হবে খুবই ভয়াবহ, তীব্র লড়াই হবে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য আমলে নিতে চান না অনেকেই। ভাবখানা ক্ষমতায় যেন এক পা দিয়ে রেখেছে বিএনপি।

জুলাই-আগস্টের বিপ্লব সফল হওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। উপায়ন্ত না দেখে নেট বন্ধ করে দিয়েছিল হাসিনা সরকার। ফলে সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে চলা প্রপাগান্ডার জবাব না দিলে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে করা অপপ্রচার বন্ধ বা জবাবদানের উদ্যোগ না নিলে বিএনপি এবার ক্ষমতায় গেলেও আওয়ামী লীগ ও ইসলাম নামধারী কয়েকটি দল মিলে অপপ্রচার অব্যাহত রাখলে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে যাবে এবং লেজেগোবরে অবস্থায় পড়বে এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন