যুক্তরাষ্ট্রে এলজিবিটিকিউ (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার এবং অন্যান্য হেটেরোসেক্সুয়াল নয় এমন পরিচয়ে) সদস্যদের সংখ্যা এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্যালপ জরিপে দেখা গেছে যে, ২০২৫ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের ৯.৩ শতাংশ এলজিবিটিকিউ হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন। গ্যালপ জরিপের তথ্যে বলা হয়েছে, গত বছর থেকে এলজিবিটিকিউ পরিচয়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত নতুন প্রজন্মের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দৃশ্যমান। জরিপটি ১৪ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ফোন সাক্ষাৎকার পরিচালনা করে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করেছে। দেখা গেছে, ‘জেন জেড’ (১৯ থেকে ২৮ বছর বয়সী) প্রায় এক-চতুর্থাংশ, ২৩.১ শতাংশ, এলজিবিটিকিউ হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করেছেন। এর তুলনায়, মিলেনিয়ালদের (২৯ থেকে ৪৪ বছর বয়সী) মধ্যে ১৪.২ শতাংশ, জেন এক্স (৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী) এর ৫.১ শতাংশ, বেবি বুমারদের (৬১ থেকে ৭৯ বছর বয়সী) ৩ শতাংশ এবং ৮০ বছর বা তার ওপরের ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ১.৮ শতাংশ এলজিবিটিকিউ হিসেবে পরিচিত।
গ্যালপ জরিপে আরো দেখা গেছে যে, এলজিবিটিকিউ পরিচয়ে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই বাইসেক্সুয়াল হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করছেন। প্রায় ৫৬.৩ শতাংশ এলজিবিটিকিউ সদস্যই বাইসেক্সুয়াল, যা তরুণ প্রজন্মে বিশেষভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০২৫ সালে গ্যালপ জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৫৯ শতাংশ জেন জেডের এলজিবিটিকিউ সদস্য বাইসেক্সুয়াল, যা অন্যান্য প্রজন্মের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। জরিপে ইউএস প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এলজিবিটিকিউ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার বাড়তি হার একটি বড় সামাজিক উদ্বেগেরকারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় দাতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও এটি জেন জেডের মধ্যে বেশি। বর্তমানে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করেন ৪.১ শতাংশ জেন জেড সদস্য, যা অন্যান্য প্রজন্মের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে, গ্যালপ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বয়স্ক প্রজন্মের মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ের হার অনেক কম। গ্যালপ জরিপে আরো দেখা গেছে যে, রাজনৈতিক প্রবণতা অনুসারে এলজিবিটিকিউ পরিচয়ে পার্থক্য রয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ১৪ শতাংশ, স্বাধীনদের মধ্যে ১১ শতাংশ এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে ৩ শতাংশ ব্যক্তি নিজেকে এলজিবিটিকিউ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই সংখ্যাগুলি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার প্রেক্ষাপটে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সম্পর্কে ধারণা দেয়।
এলজিবিটিকিউ পরিচয়ে বৃদ্ধি একটি বড় সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সমাজে আরো বেশিসংখ্যক মানুষ নিজেদের সত্যিকার পরিচয় প্রকাশে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। এই প্রবণতা বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে লক্ষ্যযোগ্য, যেখানে তারা নিজেদের যৌন পরিচয় বা লিঙ্গ পরিচয়ে বেশি স্বাধীনতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনুভব করছে। এটি কেবল একটি সামাজিক উন্নতি নয়, বরং মানবাধিকার এবং সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গ্যালপ জরিপের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের পরিচয় প্রকাশে আরো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।