২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ০১:১৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু


বহিষ্কারাদেশ স্থগিত
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদকে গ্রেফতার ও গ্রিনকার্ড বাতিল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদকে গ্রেফতার ও গ্রিনকার্ড বাতিল ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খালিল (মাঝে)


কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ায় ইউএস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খালিলকে গ্রেফতার করেছে। গত ৮ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন তার বাসভবন থেকে তাকে আটক করা হয়। খালিলের আইনজীবী অ্যামি গ্রিয়ার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, কোনো স্পষ্ট অভিযোগ ছাড়াই খালিলকে আটক করা হয়েছে, যা প্রশাসনের পূর্বের হুমকির বাস্তবায়ন বলে মনে করা হচ্ছে। গ্রিয়ারের ভাষ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন ভবনে অবস্থানকালে আইসিই এজেন্টরা প্রবেশ করে খালিলকে আটক করে। গ্রিয়ার বলেন, তিনি ফোনে এক এজেন্টের সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে পারেন যে, তারা স্টেট ডিপার্টমেন্টের আদেশে খালিলের শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করতে এসেছে। পরে জানা যায়, খালিল যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন, তবে গ্রেফতারের পর আইসিই কর্তৃপক্ষ তার গ্রিনকার্ডও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এই গ্রেফতার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেবে, তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। প্রশাসনের দাবি, এই বিক্ষোভকারীরা হামাসকে সমর্থন করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত।

খালিল ছিলেন সেই অল্প কয়েকজন ছাত্রনেতার একজন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং তাদের পরিচয় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ‘কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অপারথেইড ডাইভেস্ট’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এক ‘অননুমোদিত মিছিল’ সংগঠিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই মিছিল হামাসের ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর হামলাকে গৌরবান্বিত করেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সিয়োনবাদের বিরুদ্ধে পোস্ট ছড়ানোর ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

আইনজীবী গ্রিয়ার বলেন, আমরা এখনো জানি না কেন তাকে আটক রাখা হয়েছে। এটি একটি সুস্পষ্ট প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ। প্রশাসন তাদের হুমকি বাস্তবায়ন করছে। খালিলকে নিউ জার্সির এলিজাবেথের একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি যে, তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে কি না।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জানান, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে প্রবেশের জন্য অবশ্যই ওয়ারেন্ট দেখাতে হয়। তবে তারা নিশ্চিত করেননি যে, খালিলের গ্রেফতারের আগে এমন কোনো ওয়ারেন্ট উপস্থাপন করা হয়েছিল কি না।

নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞ ক্যামিল ম্যাকলার বলেন, এটি এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা বলে মনে হচ্ছে, যার মতামত বর্তমান প্রশাসন পছন্দ করে না। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, স্থায়ী বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দেশ থেকে বহিষ্কারের মামলা করতে পারে, যদি তারা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থনে কাজ করে থাকে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অভিবাসন আদালতের ওপর নির্ভর করে।

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রশাসনের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাম্পাসে ইহুদিবিরোধী কর্মকাণ্ড দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুক্রবার সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য নির্ধারিত ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ও চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়।খালিল বলেন, আমার বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার বেশিরভাগই এমন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, যা আমি করিনি। তারা শুধু কংগ্রেস ও ডানপন্থী রাজনীতিকদের দেখাতে চায় যে তারা কিছু করছে, ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

ফেডারেল আদালতের জরুরি নির্দেশে মাহমুদ খালিলের বহিষ্কার স্থগিত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও ফিলিস্তিনি আন্দোলনকর্মী মাহমুদ খালিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করার পরিকল্পনায় আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতের বিচারক। ইউএস কোর্ট সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কের বিচারক জেসি এম ফারম্যানপরবর্তী শুনানি পর্জন্ত এই স্থগিতাদেশ দেন। আদালত আগামী ১২ মার্চ একটি জরুরি শুনানির জন্য নির্ধারিত করেছেন। মাহমুদ খালিলের গ্রেফতারের পর ৯ মার্চ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা দায়ের করেছেন তার আইনজীবী, অ্যামি গ্রিয়ার। এই মামলাটি তার বহিষ্কার স্থগিত করার জন্য দায়ের করা হয়, যাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানো হয় এবং একটি শুনানি অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বহিষ্কার কার্যকর না হয়। বিচারক জেসি এম. ফারম্যান ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত খালিলকে বহিষ্কার করা যাবে না।

আইনজীবী, অ্যামি গ্রিয়ার অভিযোগ করেছেন যে ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করছে এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক বক্তব্য দমনের উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। গ্রিয়ারের মতে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধিকারকে লঙ্ঘন করছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে অবৈধ চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক অধিকার সংস্থা, এবং রাজনৈতিক নেতারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনীর অধিকারকে লঙ্ঘন এবং আমেরিকার রাজনৈতিক মুক্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রতিরোধের আগুন জ্বলছে : নিউইয়র্কে ব্যাপক বিক্ষোভ

মাহমুদ খালিলের গ্রেফতার ও ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষ সোমবার নিউইয়র্ক সিটির রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন। গ্রেফতারের পরপরই ‘পিপলস ফোরাম’ গত ১০ মার্চ নিউইয়র্কের ফেডারেল প্লাজায় বিক্ষোভের ডাক দেয়। বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, আইস অব আওয়ার ক্যাম্পাস, এবং রিলিজ মাহমুদ খালিল’ সেøাগানে মুখরিত হন। নিউইয়র্ক মার্কিন সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক ডোনা লিবারম্যান বলেন, এটি সাংবিধানিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। শুধু রাজনৈতিক মতপ্রকাশের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা ও তার অভিবাসন স্থিতি চ্যালেঞ্জ করা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) এক বিবৃতিতে বলেন, খালিলের গ্রেফতার সম্পূর্ণ বেআইনি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।৭১ বছর বয়সী সুসান বলেন, আমি আগেও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছি, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ অন্যায়। এটি স্পষ্টতই বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত।

এর মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন, আইনজীবী এবং সাধারণ জনগণ আরো বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আনলফুল এবং ‘অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে ৯ লাখের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, যেখানে খালিলের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।আইনজীবীরা মনে করছেন, এই মামলা শুধু খালিলের ব্যক্তিগত অধিকারের লড়াই নয়, বরং আমেরিকান সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

শনিবার রাতে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টরা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে খালিলকে গ্রেফতার করেন। তার আইনজীবী অ্যামি গ্রিয়ার জানান, গ্রেফতারের সময় খালিলের স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়। কিন্তু গ্রিয়ার জানান, খালিল আসলে গ্রিন কার্ডধারী স্থায়ী বাসিন্দা। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট জানায়, খালিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি হামাসের সমর্থনে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত।

ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য

ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম প্রতিরোধ' সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশের আওতায় খালিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, কলাম্বিয়ার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো অনেক ছাত্র রয়েছে, যারা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত। আমরা তাদের খুঁজে বের করব, গ্রেফতার করব এবং দেশ থেকে বহিষ্কার করব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লেখেন, হামাস সমর্থকদের ভিসা ও গ্রিন কার্ড বাতিল করা হবে। তাদের আর কখনো আমেরিকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

জেনা ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে

প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, খালিলকে নিউ জার্সির এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। কিন্তু তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি সেখানে নেই। পরেডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তাকে লুইজিয়ানার জেনা ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক

২২ বছর বয়সী মরিয়ম আলওয়ান, যিনি কোলাম্বিয়ার ফিলিস্তিন সমর্থক আন্দোলনের অংশ ছিলেন, বলেন, আমি রাতে ঘুমোতে পারিনি। মনে হচ্ছে, যে কেউ পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমেরিকার নাগরিক হয়েও যদি শুধু রাজনৈতিক মতের জন্য টার্গেট হই, তাহলে বাকস্বাধীনতার আর কী মানে থাকে?

শেয়ার করুন