যুক্তরাজ্যে গর্ভাশয়ের ক্যানসারের লক্ষ্যন থাকা মহিলাদের জন্য একটি নতুন স্যোয়াব টেস্ট প্রবর্তিত হয়েছে। টেস্টটি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। ওয়িডি-ইজি নামে পরিচিত এই টেস্টটি কোভিড-১৯ এর পিসিআর টেস্টের মতোই একটি সহজ যোনি স্যোয়াব ব্যবহার করে, যা পরে একটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এটি প্রচলিত ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড বা হিস্টেরোস্কোপির চেয়ে অনেক কম আক্রমণাত্মক। এটি একটি সহজ, কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা প্রচলিত ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড বা হিস্টেরোস্কোপির মতো আক্রমণাত্মক পদ্ধতিগুলোর তুলনায় অনেক কম ব্যথাদায়ক এবং ঝুঁকিমুক্ত। ৪৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে মহিলাদের মধ্যে গর্ভাশয়ের ক্যানসারের হার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে, ওয়িডি-ইজি টেস্টের মতো উদ্বাবনগুলি তাদের জন্য সহজলভ্য এবং কম যন্ত্রণাদায়ক প্রাথমিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি এই টেস্টটি ৪৫ বছর বয়সের বেশি মহিলাদের জন্য অনুমোদন দিয়েছে, যাদের গর্ভাশয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত রয়েছে। এই টেস্টটি অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি সোলা ডায়াগনস্টিকস দ্বারা তৈরি করা হয়েছে, যার সহযোগিতায় ছিল ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন। ২০২৩ সালে ল্যানসেট অনকোলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, এই টেস্টটি গর্ভাশয়ের ক্যানসার সনাক্তকরণে আলট্রাসাউন্ডের সমান কার্যকর। এটি মিথ্যা পজিটিভের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে অনেক সুস্থ মহিলাকে ইনভেসিভ হিস্টেরোস্কোপি বা বায়োপসি পদ্ধতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।এই টেস্টের উদ্ভাবক এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসর মার্টিন উইডশওয়েন্ডটার বলেছেন, ওয়িডি-ইজি টেস্ট হলো যুক্তরাজ্যে প্রথম টেস্ট, যা গর্ভাশয়ের ক্যানসার সনাক্তকরণের জন্য একটি সহজ স্যোয়াব পদ্ধতি ব্যবহার করে। আমরা গর্বিত যে, আমরা এমন একটি টেস্ট তৈরি করেছি যা মহিলাদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একটি জরুরি ফাঁকা স্থান পূর্ণ করেছে এবং সব মহিলার মধ্যে ভালোভাবে কাজ করে।
ইভ অ্যাপিলের প্রধান নির্বাহী অ্যাথেনা লামনিসোস বলেছেন, এই টেস্টটি অনেকের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে গর্ভাশয়ের ক্যানসারের জন্য অস্বাভাবিক রক্তপাত পরীক্ষা করার পদ্ধতিগুলো মানসিক চাপ এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত যে টেস্টটি করা হয় তা হচ্ছে হিস্টেরোস্কোপি, যা অনেকের জন্য ব্যথাদায়ক এবং আক্রমণাত্মক। এছাড়া লামনিসোস বলেছেন, এই টেস্টটি বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের জন্য, যারা প্রায়ই গর্ভাশয়ের ক্যানসারের দেরিতে নির্ণয়ের শিকার হন। তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি যা দান করা হয়েছে এবং এই টেস্টটি ক্লিনিক্যাল সেটিংয়ে কার্যকর হতে পারে।
ইভ অ্যাপিল বলেছে যে, যুক্তরাজ্যে এক উদ্বেগজনক সংখ্যা লোক এইচপিভি টিকাদান প্রোগ্রামের বিষয়ে সচেতন নন, যা ছয় ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, এর মধ্যে রয়েছে গর্ভাশয়ের, মুখ, মলদ্বার, পুরুষাঙ্গ, যোনি এবং বাহ্যিক যোনির ক্যানসার। এছাড়া, একটি ইউগভ জরিপে জানা গেছে, ৩৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই জানেন না, কে এনএইচএস-এ এইচপিভি টিকার জন্য যোগ্য। লামনিসোস আরো বলেছেন, যুক্তরাজ্যে ২০০৮ সাল থেকে মেয়েরা এইচপিভি টিকার অফার পেয়েছে এবং ২০১৯ সালে ছেলেদের জন্যও এটি শুরু হয়েছে, কিন্তু ২০২৫ সালে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে অনেক দূর যেতে হবে। এই অগ্রগতি মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এবং এটি এক নতুন পথ তৈরি করতে পারে গর্ভাশয়ের ক্যানসার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে।