২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০১:৪৩:০৯ অপরাহ্ন


মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে তামাক কোম্পানি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৫
মিথ্যা তথ্য দিয়ে  সরকারকে বিভ্রান্ত করছে তামাক কোম্পানি


জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যকে সাধারণ মানুষের ক্রয়-সীমার বাইরে নিতে সরকার প্রতি বছর এর মূল্য ও করহার বৃদ্ধি করে চলেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও কর বৃদ্ধি ঠেকাতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে তামাক কোম্পানি। একইসঙ্গে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো মূল্য ও কর হার বৃদ্ধিকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরতে চোরাচালানের গল্প ও অকার্যকর প্রমাণ করতে রাজস্ব কম দেখানোর অপচেষ্টা করছে। তামাক কোম্পানিগুলো প্রাণঘাতী পণ্যের ব্যবসা করে বিপুল মুনাফা করে। তারা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মিথ্যা তথ্য ছড়ায়।

সরকারের উচিৎ তাদের কথা আমলে না নিয়ে জনস্বার্থে অতিদ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালি করা; একটি টেকসই তামাক কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একটি কমপ্রিহেন্সিভ তামাক কর নীতি প্রণয়ন করা এবং তামাক কোম্পানির অবৈধ হস্তক্ষেপ, আইন মিথ্যাচার প্রতিরোধে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ও কর বৃদ্ধিতে কোম্পানির প্রোপাগান্ডা মোকাবেলায় করণীয়”শীর্ষক একটি কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় মূল বক্তব্যে বিইআরের প্রকল্প পরিচালক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, তামাক কোম্পানি তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে চোরাচালানের মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, চোরাচালান সংক্রন্ত সংবাদগুলো অধিকাংশই হুবহু একই ধরনের এবং এর পিছনে কারা তাদের কোনো হদিস নেই এবং এসব ঘটনায় কাউকে আটক করতেও দেখা যায় না। আবার সারা বছর চোরাচালানের খবর না থাকলেও জাতীয় বাজেটের ঠিক আগে দু-এক মাস তা বেশি বেশি দেখা যায়। এর পেছনে তামাক কোম্পানির হাত আছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে সিগারেটের দাম অনেক কম। ফলে এ ধরনের সিগারেট চোরাচালানের মিথ্যা ও সাজানো তথ্য কেবল বিভ্রান্ত করার জন্যই প্রচার করছে তামাক কোম্পানি।

তিনি আরও বলেন, সিগারেটের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধি করলে যে আসলেই চোরাচালান ও অবৈধ সিগারেটের বাজার বৃদ্ধি পায় না সেটা সিগারেটের ধারাবাহিক উৎপাদন ও রাজস্ব আয়ের চিত্রের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সিগারেট থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা। আর সেটা ১৫ বছর পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা! ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং ২০১৩ সালে আইনটি শক্তিশালি করার পরও গক ২০ বছরে তামাক খাত ধেকে রাজস্ব আয় কখনোই কমেনি।

প্যানেল আলোচক হিসেবে তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা বলেন, বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক ব্যয়ের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তারা নিজেদের পরিচালন ব্যয় বেশি দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। একইসঙ্গে তারা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে প্রতি বছর প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। অথচ তারাই রাজস্ব হারানোর ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, তামাকজাত দ্রব্যে রাজস্ব ফাঁকি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বর্তমানে প্রচলিত বহুস্তরভিত্তিক অ্যাডভেলরেম কর কাঠামো। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে এ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট তামাক কর কাঠামোর প্রচলন করতে হবে। আর এজন্য আসন্ন অর্থবছরে প্রাথমিকভাবে প্রতি শলাকা সিগারেটে ১ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট করারোপ করতে হবে। কারণ মিক্সপদ্ধতিতে গেলেও সরকারের প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

কর্মশালায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের ২০ জন গণমাধ্যমকর্মী অংশগ্রহণ করেন। এসময় তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার সুপারিশ করেন। কর্মশাটি সঞ্চালনা করেন বিইআরের সিনিয়র প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিল।


শেয়ার করুন