২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পুরুষ ১,৬১৫,২৩০ জন এবং নারী ১,৪৩১,৩৩৯ জন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সম্প্রতি ২০২৪ সালের প্রাথমিক মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণে প্রথম তিনটি হলো হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং অপ্রত্যাশিত আঘাত বা দুর্ঘটনা। ২০২৪ সালে হৃদরোগে মারা গেছেন প্রায় ৬৮৩,০৩৭ জন। হৃদরোগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬১৯,৮১২ জন, যা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। অপ্রত্যাশিত আঘাত বা দুর্ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় ১,৯৬,৪৮৮ জন। এই ধরনের দুর্ঘটনায় যানবাহন দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া, বিষক্রিয়াজনিত ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে নিয়মিত সচেতনতা অভিযান, নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা ও জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে যে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২৩ সালে কোভিড-১৯ চতুর্থ স্থানে থাকলেও, ২০২৪ সালে এটি শীর্ষ ১০ মৃত্যুর কারণের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং টিকা কার্যক্রমের ফলাফল হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, আলঝাইমার রোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ এবং লিভার সম্পর্কিত রোগ। এসব রোগ মূলত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে অল্পবয়সীদের মধ্যেও জীবনযাত্রা ও খাবারের অভ্যাসের কারণে এই ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট মৃত্যুহার প্রতি ১০০,০০০ জনে প্রায় ৭২২.০, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৩.৮% কম। সিডিসি-এর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা, প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা এবং আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি মৃত্যুহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করে বলছেন, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ এখনও জনস্বাস্থ্যের বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এই ধরনের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ডায়াবেটিসজনিত মৃত্যুও এখনও শীর্ষ ১০ এর মধ্যে রয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় খাদ্যাভ্যাস, রক্তচাপ ও রক্তশর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে। চিকিৎসাবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সাধারণ জনগণের জীবনধারা পরিবর্তন করা ও সরকারি স্বাস্থ্যনীতি কার্যকর করা একইভাবে জরুরি। নিরাপদ খাদ্য, পরিবেশ এবং মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলে, মৃত্যুহারের উন্নতি সম্ভব।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলো হলো হৃদরোগ, ক্যান্সার, দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, আলঝাইমার, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ, লিভার রোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ। যদিও কোভিড-১৯-এর প্রভাব কমেছে, দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।