০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:১৭:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


মুসলিমদের হুমকি : মাইকেলকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৩-২০২৫
মুসলিমদের হুমকি : মাইকেলকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড


মেট্রো ডেট্রয়টের কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস অফিসে কল করে মুসলিম সম্প্রদায় ও সংগঠনকে হুমকি দেওয়ার দায়ে ফ্লোরিডার ফ্লোরিডায় বসবাসরত ৭৩ বছর বয়সী সাবেক নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি মাইকেল শাপিরো-কে ১৮ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। ইউএস কোর্ট অব ইস্টার্ন ইস্টার্ন ডিষ্ট্রিক্ট মিশিগানের বিচারক তাকে এই কারাদণ্ড দিয়েছেন। গত ২১ মার্চ মিশিগান ইউএস অ্যাটর্নি জুলি বেক এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ইউএস অ্যাটর্নি জুলি বেক বলেন, কেউ যেন কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের ওপর ভয় সৃষ্টি করে এমন হুমকি না দিতে পারে। আজকের এই শাস্তি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করছে যে, যারা এমন কাজ করবে, বিশেষত যদি তা বৈষম্যের কারণে হয়, তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। মাইকেল শাপিরোর শাস্তি দেওয়ার এক বছর আগে, ২০২৩ সালে তাকে আরও একটি ঘৃণাত্মক অপরাধের অভিযোগে ফেডারেল গ্র‍্যান্ড জুরি অভিযুক্ত করেছিল। শাপিরো ২০২৩ সালে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার-মিশিগান)-এর অফিসে ফোন করে একাধিক বার মৃত্যুর হুমকি দেন। এই ফোন কলগুলোতে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অত্যন্ত অপমানজনক ও সহিংস ভাষায় মন্তব্য করেছিলেন। ১১ নভেম্বর ২০২৩ সালে শাপিরো ফেডারেল আদালতে স্বীকার করেছেন যে তিনি আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য মাধ্যমে ওই হুমকি দিয়েছিলেন, যা একটি গুরুতর অপরাধ।

শাপিরোর আইনজীবী কর্তৃক আদালতে জমা দেওয়া এক স্মারকপত্রে উল্লেখ করেন, শাপিরো একজন বিধবা, একসময় নিউইয়র্কে আইনজীবী ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি একা। স্মারকপত্রে আরও বলা হয়, শাপিরো দীর্ঘ সময় ধরে মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার (বড় বিষণ্নতা) এবং অ্যালকোহল ইউজ ডিজঅর্ডারে ভুগছিলেন। তার আইনজীবী জানান, শাপিরোর মানসিক স্বাস্থ্য ও মাদকাসক্তির সমস্যা তার অপরাধমূলক আচরণের পেছনে বড় একটি কারণ ছিল, তবে এটি তার অপরাধের কোনো অজুহাত নয়। শাপিরোর আইনজীবী আরো বলেছেন, শাপিরোর অ্যালকোহল ও বিষণ্নতা তার সন্তানদের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং তার বিচারক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তার এসব সমস্যার কারণে তিনি প্রলোভিত হয়ে রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিক্রিয়ায় আবেগপ্রবণভাবে হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, শাপিরো তার আচরণের জন্য লজ্জিত এবং নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে কেয়ার মিশিগানের নির্বাহী পরিচালক দাউদ ওয়ালিদ বলেন, আমরা শাপিরোকে কারাদণ্ড দেওয়ার জন্য বিচারকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, এই শাস্তি এক সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। যারা আমাদের সংস্থার কর্মী বা আমাদের সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুমকি দিতে চায়, তাদের জন্য এটি একটি তীব্র বার্তা। শাপিরো ২০২৩ সালে মোট ৬ বার কেয়ার মিশিগান অফিসে ফোন করেন এবং তিনটি হুমকিপূর্ণ ভোইসমেইল রেখে যান। একটিতে তিনি বলেন, আমি তোমাদের মেরে ফেলবো, আমি তোমাদের মেরে ফেলবো! অন্য একটি ভোইসমেইলে তিনি বলেন, তোমরা সহিংস মানুষ। কেন তোমরা আমেরিকায় আসো? কেন ইউরোপে আসো? মাদার ফ******! তোমরা সহিংস, তোমরা খুনি, তোমরা ধর্ষক। আমি তোমাদের মেরে ফেলবো!

শাপিরো তার দোষ স্বীকার করে বলেছেন যে, তিনি কেয়ার মিশিগানকে তার ধর্মীয় এবং জাতিগত পরিচয়ের কারণে লক্ষ্য করে হুমকি দিয়েছিলেন, যা ওই সংগঠনটি এবং তাদের কর্মীদের প্রতি ঘৃণা ও বৈষম্যের প্রতিফলন ছিল।

ফেডারেল তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইর মিশিগান শাখার বিশেষ এজেন্ট শেইভোরিয়া গিবসন বলেন, আজকের শাস্তি ঘৃণাচালিত হুমকির ভয়াবহ পরিণতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং অন্যদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠায়, যারা একই ধরনের ঘৃণা এবং বৈষম্যপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে। আমাদের এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অংশীদাররা নিশ্চিত করেছে যে শাপিরো তার কর্মকাণ্ডের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়েছে। এই মামলা ঘৃণাভিত্তিক সহিংসতার বিপদ এবং এমন আচরণের জন্য আইনি শাস্তির গুরুত্বের একটি শক্তিশালী স্মরণিকা। মাইকেল শাপিরোকে মুসলিম ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দেওয়ার জন্য ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হলো, যা ঘৃণাভিত্তিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের উদাহরণ। শাপিরোর আচরণ-কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) অফিসে কল করে সহিংস এবং বৈষম্যমূলক ভাষায় হুমকি দেওয়া-স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে, সমাজে আজও সহিষ্ণুতা ও গ্রহণযোগ্যতার অভাব রয়েছে।

এই মামলার রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ঘৃণাভিত্তিক অপরাধের বিরুদ্ধে আইন কঠোরভাবে কাজ করছে এবং এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সহানুভূতি নয়, বরং কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। মাইকেল শাপিরোর শাস্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে । এই শাস্তি শুধু তার অপরাধের জন্য নয়, বরং সমাজে যারা ঘৃণা, সহিংসতা এবং বৈষম্য ছড়াতে চায়, তাদের সবার জন্য একটি সতর্কতা। এটি আমাদের সকলের জন্য একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, আমরা যতই ভিন্ন হই না কেন, মানবাধিকার, সহিষ্ণুতা এবং সমানাধিকারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকা উচিত। ঘৃণাভিত্তিক সহিংসতা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে দাঁড়ানো প্রয়োজন, যাতে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং সহনশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

শেয়ার করুন