১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৫৮:২৫ পূর্বাহ্ন


অন্তর্বর্তী সরকার এগিয়ে দিচ্ছে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকার এগিয়ে দিচ্ছে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস


সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উন্নয়নমুখী উদ্যোগের প্রশংসা করতেই হবে। সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত বিশ্বজনীন ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে চীন সফর এবং বিমসটেক সম্মেলন থেকে কিছু প্রান্তিক অর্জন হয়েছে। এখন ঢাকায় চলতে থাকা বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে কতটুকু অর্জন হয় সেটিও আগ্রহ ভরে দেখবো। এই সব শুভ উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু গোষ্ঠীর লুটেরা মনোভাবের কারণে কিন্তু বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী নেতিবাচক ইঙ্গিত পাচ্ছে। প্রশ্ন জাগছে সরকার কেন দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না?

বিগত সরকারের আমলে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের খুঁটিনাটি দোষত্রুটি বাদ দিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন হাবে পরিণত করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। পদ্মা সেতু, যমুনা রেল সেতু, কর্ণফুলী ট্যানেল, মাতারবাড়ী, পায়রা বন্দর, দেশজুড়ে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ অবশ্যই দেশজুড়ে শিল্পায়নের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এবারে সম্মেলনে আগত বিনিয়োগকারীরা কর্ণফুলী নদীর পাড়ে কোরিয়ান ইপিজেড, মিরেরসরাই বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল, নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার জাপানিজ শিল্পাঞ্চলে ভ্রমণ করেছে এগুলোর মৌলিক অবকাঠামো কিন্তু পূর্ববর্তী সরকারের সৃষ্টি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা কিন্তু উন্নয়নমুখী সরকারের ভালো উদ্যোগ। বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের সময়ে বিশেষত বর্তমান বাস্তব অনিশ্চিত আর্থসামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোন বড় ধরনের বিনিয়োগ আশা করা সমীচীন নয়। তবে সরকার যদি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাধাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে পারে তাহলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের পক্ষে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে। 

গত আট মাসে লুটপাট, ভাঙচুর এবং মব জাস্টিসের পাশাপাশি গ্যাস বিদ্যুৎ সংকটে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গাছে। অনেক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়েছে। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠী বিদেশমুখী হয়েছে। সরকারকে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ন্যূনতম উন্নয়ন ঘটিয়ে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু অর্থনৈতিক খাত উন্নয়নে জাতীয় পর্যায়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করতে হবে। এই কাজে পূর্ববর্তী সরকারের সব কাজের ঢালাও সমালোচনা না করে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী ভারতের একচেটিয়া প্রভাব এড়িয়ে মুক্তস্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে সব সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। ভারতসহ চীন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ ১০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিলন মোহনায় পরিণত হতে পারবে। আধুনিক এবং আরো উন্নত করতে হবে যোগাযোগব্যবস্থা, নিজস্ব প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ করে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানিনিরাপত্তা সৃষ্টি করতে হবে, বিনিয়োগ বাধা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে এবং সর্বোপরি কিছু কৌশলগত খাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি সব ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন করে বৈষম্য দূর করতে হবে। কাজগুলো আদৌ সোজা নয়। সর্বক্ষেত্রে জাপান, চীন ও ভিয়েতনামের মতো উন্নয়ন সংস্কৃতি সৃষ্টি করা গেলেই কেবল কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন