নির্বাচন ভবন
বিভিন্ন বিষয়ে নানা সংকটে থাকা বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে। অন্তর্বর্তীকালীন অনির্বাচিত সরকার গঠিত আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে তাদের বিবেচনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে। আইসিটি আইন সংশোধন, আইসিটি পুনর্গঠন এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিপুল বিতর্ক থাকায় দেশ-বিদেশে বিচার গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে যৌক্তিক সংশয় আছে। বর্তমানে ভারতে অবস্থানকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনকে দেশে এনে শাস্তি নিশ্চিত করার সক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই। অদূর ভবিষ্যতে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তাদের পক্ষেও সেটি সম্ভব কি না, যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। তবে বিষয়টি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং একই সময়ে অনুষ্ঠিতব্য জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ক গণভোটের ওপর অধিকতর প্রভাব ফেলবে সন্দেহ নেই। আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সরকার ঘোষিত নির্বাচন নিয়ে ক্রমশই উপলব্ধি করা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো।
জুলাই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তর করার নেপথ্যের ষড়যন্ত্র এখন উন্মুক্ত। বর্তমান সরকারের সময়ে নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের আস্ফালন দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত করছে। স্বাধীনতার প্রতীক অনেক কিছু ধ্বংস করা হয়েছে। ভারত এবং আওয়ামী জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে সরকারকে অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের সমমনা দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এবং বাংলাদেশের প্রধান সারির রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচনের বাইরে রাখার কোনো নৈতিক বা আইনগত অধিকার নেই অনির্বাচিত সরকারের। ইতিপূর্বে আওয়ামী সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণিত এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের প্রমাণিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ধোপে টেকেনি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা ১৪ দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখলেও তাদের বিপুলসংখ্যক সমর্থক নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার অধিকার বঞ্চিত হবে। দলগুলো আদৌ জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে কি না, সেই বিষয়টি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্ধারিত করবে সাধারণ জনগণ। এই অধিকার বঞ্চিত করার আইনি অধিকার কিন্তু কোনো অনির্বাচিত সরকারের নেই।
দেখছি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে আগ্রহী কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। এমনিতেই নির্বাচন কমিশনের এবং অন্তর্বর্তী কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় আছে। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা অভিযোগ আছে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দাবি করেছে নির্বাচনকালে প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার। অপর রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামির দাবি প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে অন্তত পাঁচজন করে সেনা সদস্য নিয়োগের। সরকার সমর্থিত নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি ঘোষণা দিয়েছে তারা নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াতের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করবে। বাম দলগুলো এবং ইসলামিক দলগুলো মোর্চা গঠনের চেষ্টা করছে। যেই যা করুক মূল সংকট আওয়ামী লীগ এবং সমমনা দলগুলোকে নিয়ে। এদের নির্বাচনে রাখা অথবা বাইরে রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া উভয় সংকটে নির্বাচন কমিশন আর সরকার। কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসাবে ঘোষণা করে বিশ্ববাসীর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে না যত দিন যাবে বিশ্ব মঞ্চে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা এবং একটি বিশেষ মহলকে পক্ষপাতিত্বের অবস্থান পরিষ্কার হবে। বলছি না সরকার নির্বাচন থেকে সরে আসবে। কিন্তু নির্বাচন কতটা অবাধ, নিরপেক্ষ এবং ঝামেলামুক্ত হবে সন্দেহ আছে।