১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৬:১২:১২ পূর্বাহ্ন


নূর ইসলামিক কালচারাল সেন্টার ভবন রূপান্তরের পরিকল্পনা বাতিলে হিলিয়ার্ড শহরের বিরুদ্ধে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
নূর ইসলামিক কালচারাল সেন্টার ভবন রূপান্তরের পরিকল্পনা বাতিলে হিলিয়ার্ড শহরের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তাবিত নূর ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের ভবন রূপান্তরের পরিকল্পনা


ওহাইও অঙ্গরাজ্যের হিলিয়ার্ড সিটির নূর ইসলামিক কালচারাল সেন্টার একটি ইসলামিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে, তবে হিলিয়ার্ড শহরের প্রশাসন এর পরিকল্পনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। শহরের পক্ষ থেকে বারবার নতুন শর্তারোপের মাধ্যমে এই প্রকল্পের অগ্রগতি থামানো হয়েছে, যা ধর্মীয় বৈষম্য এবং সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সৃষ্টি করেছে। এই বৈষম্যের প্রতিবাদেই নূর ইসলামিক কালচারাল সেন্টার গত ১৪ এপ্রিল ওহাইওর ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি দায়ের করে। আদালতে মামলায় শহরের সিদ্ধান্ত বাতিল করা এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমতি চেয়েছে বাদী ।

মামলাটির আসামির তালিকায় রয়েছে হিলিয়ার্ড শহরের সিটি কাউন্সিল, সিটি ম্যানেজার মিশেল ক্র্যান্ডাল এবং শহরের প্রশাসন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, নূর ইসলামিক সেন্টারের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্রিট্টন পার্কওয়ে হোল্ডিং। হিলিয়ার্ড শহরের ৫ হাজার ৫৫০ ব্রিটন পার্কওয়েতে অবস্থিত ২ লাখ ২০ হাজার বর্গফুটের একটি পরিত্যক্ত ভবন ক্রয় করে। ভবনটি রূপান্তরের পরিকল্পনায় ছিল একটি ইসলামিক স্কুল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত সেন্টার, কমিউনিটি স্পেস এবং উপাসনালয়। তবে শহর কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনা বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিবারই নতুন নতুন শর্তারোপ করে প্রকল্পটির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। মামলায় দাবি করা হয়েছে, হিলিয়ার্ড শহর একই এলাকায় একাধিক খ্রিস্টান প্রকল্প অনুমোদন দিলেও ইসলামিক প্রকল্পটির ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। এ থেকে বাদীপক্ষের ধারণা- এই বাধা রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নূর ইসলামিক সেন্টার আদালতের কাছে শহরের সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অনুমতি চেয়েছে। সেই সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য ক্ষতিপূরণ এবং সংবিধান অনুযায়ী তাদের ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার পুনঃস্থাপনের দাবিও জানিয়েছে।

নূর বোর্ডের চেয়ার রনি আবাজা বলেন, আমরা এই বৈষম্যের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এটি আমাদের ধর্মীয় অধিকার এবং মালিকানার অধিকার লঙ্ঘন করেছে। তাই এই মামলার মাধ্যমে আমরা সুবিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই। ব্রিটন পার্কওয়ে হোল্ডিংয়ের আইনজীবী জো মিলার বলেন, হিলিয়ার্ড শহরের আচরণ সরাসরি বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক। আমার দুই দশকের আইনি অভিজ্ঞতায় এতটা প্রকাশ্য ধর্মীয় বৈষম্য আমি দেখিনি।

অন্যদিকে শহরটির একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে দাবি করেন, আমরা কেবল শহরের জমি ব্যবহারের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করেছি এবং নূরের পরিবর্তিত প্রকল্প পরিকল্পনার সঙ্গে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। ২০২৪ সালের নভেম্বরের এক বিবৃতিতে শহর কর্তৃপক্ষ জানায়, নূর চাইলে একটি নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা জমা দিতে পারে, যা শহরের কমিউনিটি প্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে মামলার ভাষ্য অনুযায়ী, শহরের এই বক্তব্য কেবল কৌশলগত ও দেখনদারির জন্য। বাস্তবে তাদের পক্ষ থেকে কখনোই প্রকৃত আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, বরং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অযৌক্তিক শর্তারোপ করে পরিকল্পনাটিকে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই মামলাটি শুধু একটি জমি ব্যবহারের অনুমতির প্রশ্ন নয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের সমানাধিকার এবং প্রশাসনিক পক্ষপাতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। মামলাটি কেবল হিলিয়ার্ড শহরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি গোটা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার একটি শক্তিশালী প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

শেয়ার করুন