আগামী ২০২৯ সালের পর গ্যাভি (GAVI) টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়া সারাদেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদানকেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বস্তিবাসী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, পাহাড়ি, হাওর এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অজানা থাকায় জিরো ডোজ এবং মিসড ডোজ শিশুদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে Immunization for all is humanly possible প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ উদযাপন-২০২৫’ উপলক্ষে বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, প্রেক্ষিত, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করনীয় তুলে ধরার মাধ্যমে টিকা কার্যক্রমের উন্নয়নই - লক্ষ্য সামনে রেখে প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, উদ্ভাবন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়সমূহ-এর আয়োজনে বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ উদযাপন-২০২৫ গত ২১ এপ্রিল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, উদ্ভাবন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উক্ত গবেষণা সমূহের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য, বর্তমান প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়সমূহ নিয়ে উক্ত আলোচনা করেন। প্রেস কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডাঃ আবুল ফজল মোঃ সাহাবুদ্দিন খান, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ইপিআই, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর, ঢাকা, বাংলাদেশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত উক্ত গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম।
ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত যৌথ গবেষণা (২০২৪) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)এর উচ্চ কভারেজ নিশ্চিত করা এবং ইপিআই প্রোগ্রামকে আরও বেগবান করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ সুপারিশ বা পরামর্শ তুলে ধরে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে যে শূন্যপদ আছে সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া, জনসংখ্যা ভিত্তিক জনবলনীতি অভিযোজন করা, জনসংখ্যার ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে টিকা কেন্দ্রের সুষম বন্টন, প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের যে সংকট দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ইপিআই প্রোগ্রাম মনিটরিং এবং মূল্যায়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করে মানসম্পন্ন তত্ত্বাবধান এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার মানুষের মধ্যে টিকাদান নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট কৌশলের পরিকল্পনা (ম্যাপিং, মোবাইল ক্লিনিক, ডোর-টু-ডোর টিকাদান) বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহন নিশ্চিত করার লক্ষে পরিবহন ব্যবস্থা জোরদার করা, পোর্টারদের জন্য পরিবহন বাজেট সংশোধন, কোল্ড-চেইন মেইনটেইন ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করতে হবে। এছাড়া টিকাদানে সন্ধ্যাকালীন সেশানের বাবস্থা করা, সাপ্তাহিক অবকাশে টিকাদান সেশানের পরিকল্পনা করা জরুরি।
এতে বলা হয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) বাংলাদেশ সরকারের সফল উদ্যোগগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ইপিআই কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকা শহরে ইপিআই কার্যক্রম ১৯৮৯ সালে প্রাথমিকভাবে যাত্রা করে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বিস্তৃত কর হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ টিকাদান কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে এবং ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করতে সামর্থ্য হয়। ইপিআই একটি মূল্যবান বিনিয়োগ।