নির্বাচনের মাধ্যমে সদ্য দায়িত্ব পেয়েছেন গুণী অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি হিসেবে তার মূল লক্ষ্য-শিল্পীদের অধিকার রক্ষা, পেশাগত মর্যাদা আদায় এবং ঐক্য বজায় রেখে সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া। নির্বাচন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও শিল্পীদের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: আপনি তো শুধু অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি নন, থিয়েটার আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ঢাকার সভাপতিও। পাশাপাশি মঞ্চ ও পর্দায়ও নিয়মিত। সব সামাল দেওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং?
আজাদ আবুল কালাম: সব কিছুই শিল্পসংক্রান্ত কাজ। কাছাকাছি ধরনের বলে একটা কাজে অন্যটার সাহায্য পাওয়া যায়। চ্যালেঞ্জ আছে, তবে ভয় পাচ্ছি না। এই দায়িত্ব একা আমি পালন করছি না, আমার সঙ্গে আছেন কমিটির আরও ২০ জন সদস্য। আমরা সবাই মিলে এগিয়ে নিতে চাই এই সংগঠনকে।
প্রশ্ন: আপনি কী মনে করেন, অভিনয়শিল্পীদের রাজনীতিতে জড়ানো উচিত?
আজাদ আবুল কালাম: শিল্পী প্রথমত একজন শিল্পী। তিনি রাজনীতিক নন, কোনো দলেরও প্রতিনিধি নন। তবে সচেতন থাকা দরকার। রাষ্ট্রে কী ঘটছে, সমাজে কী পরিবর্তন হচ্ছে- এসব বিষয়ে শিল্পীকে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। তবে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি একদমই নয়। আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে ঐক্য-একসঙ্গে থাকাই আমাদের বড় শক্তি।
প্রশ্ন: আগের সময় শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন দেখা গিয়েছিল। সেটা মেটাতে আপনার উদ্যোগ কী?
আজাদ আবুল কালাম: সত্যি বলতে, সেই বিভেদ স্থায়ী হয়নি। এবারকার নির্বাচন ছিল একটা মিলনমেলা। যদি বিভেদ টিকে থাকত, এমন সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হতো না। তবুও বিভেদ খুব ভয়ানক জিনিস। রাজনৈতিক ট্যাগিং, একে ওকে কোনো পক্ষের বলে চিহ্নিত করা-এই প্রবণতা খুবই খারাপ। যেমন টিপ ইস্যুতে ১৮ জন শিল্পী কথা বলেছিলেন, সেটাকে কেন্দ্র করে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর এমন কিছু মত তৈরি হয়েছে, যাতে কিছু শিল্পী সমাজবহির্ভূত হয়ে পড়েছেন। এটি এক ধরনের বৈষম্য, যেটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।
প্রশ্ন: সংস্কার কমিটি যে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল, সেগুলো কীভাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে?
আজাদ আবুল কালাম: তারিক আনাম খানের নেতৃত্বে গঠিত অর্ন্তর্বতী সংস্কার কমিটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করব, কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা আরও উন্নয়ন দরকার-সব কিছু সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রশ্ন: আগের কমিটির কিছু কর্মকাণ্ড ছিল সমালোচিত। সেটা নিয়ে আপনার অবস্থান কী?
আজাদ আবুল কালাম: সমালোচনা হয়েছিল, তবে কাজও অনেক হয়েছে-এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভুলক্রুটি সব ক্ষেত্রেই হয়। একটা বিষয় বুঝতে হবে-এ ধরনের সংগঠনকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হয়, দাবি জানাতে হয়। সরকারের সঙ্গে দেনদরবার মানে এই নয় যে তারা সরকারের মুখপাত্র। কিছু জায়গায় হয়তো তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে, কিংবা কিছু বিবৃতি ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। তারা ভুল স্বীকার করেছে, দায়িত্ব ছেড়েও দিয়েছে। আমাদের কাজ হবে সেই জায়গাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া।
প্রশ্ন: আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আব্দুল্লাহ রানা। ফল প্রকাশের পর তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যারা নির্বাচিত হননি, তাদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
আজাদ আবুল কালাম: আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এখানে জিতেছে ২১ জন, হারেনি কেউ। কারণ এই নির্বাচন ছিল নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার একটি পদ্ধতি মাত্র। আব্দুল্লাহ রানা জিতলেও সেটাকে আমি আমার জয় ভাবতাম। ঠিক তেমনি, আমি জিতেছি, মানে রানা ভাইও জিতেছেন-এই জায়গা থেকে ভাবি। ভোটের ব্যবধানও খুব বেশি ছিল না। যারা নির্বাচিত হননি, তাদের অনেকেই দারুণ যোগ্য এবং জনপ্রিয়। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের কার্যক্রমে খুব প্রয়োজন।
প্রশ্ন: নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে নিশ্চয়ই কিছু পরিকল্পনা বা ইশতেহার ছিল?
আজাদ আবুল কালাম: অবশ্যই। অভিনয়কে এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আমরা সেটা আদায়ের জন্য কাজ করতে চাই। এটা শুধু সম্মানের বিষয় নয়, এই স্বীকৃতি অনেক অধিকার ও সুবিধার পথ খুলে দেবে। পাশাপাশি, অভিনয়শিল্পীরা যে বৈষম্যের শিকার হন, সেটা দূর করতে হবে। আরও বড় কথা, সংগঠনকে এমনভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন: অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। সংগঠন নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
আজাদ আবুল কালাম: সংগঠনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা আমরা পুরো কমিটি মিলে ঠিক করব। এখানে আমি একা নই-কমিটিতে ২১ জন সদস্য রয়েছেন। কেউই কোনো প্যানেল থেকে নির্বাচিত হননি, সবাই স্বতন্ত্রভাবে জিতেছেন। স্বতন্ত্র মানে, সবার নিজস্ব চিন্তা আছে। সেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনাগুলো মিলিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে, আমরা পরবর্তী তিন বছরের জন্য একটা কার্যকর রূপরেখা তৈরি করব।